প্রাণের গাছই কেড়ে নিলো কারারক্ষি রাসেলের প্রাণ!


খাইরুল মোমেন স্বপন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।

বন বিভাগের মালির চাকরির সুবাদে পরম মমতায় গাছগাছালির জীবন দানের পাশাপাশি কিশোরগঞ্জের হোসেন আলী একই মমতায় বড় করেছিলেন সন্তানদের। গাছের প্রতি কারারক্ষি রাসেল কবির (২৭)-এর ছিলো তাই প্রাণের সম্পর্ক। প্রাণপ্রিয় গাছই শেষমেষ কেড়ে নিয়েছে প্রাণ!

এলাকাবাসি ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিকলী সদরের কৈবতহাটি গ্রামের মৃত হোসেন আলীর ছেলে রাসেল কবির ২০০৮ সালে এইচএসসি পাসের পরই বাংলাদেশ জেলের স্পেশাল নিয়োগে কারারক্ষি (এথলেটিক) হিসাবে যোগদান করেন। ২ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন একই এলাকার পূর্বগ্রামের আসাদ আলী বেপারির মেয়ে সহপাঠি মুসলেমাকে। তাদের ৮ মাস বয়সী রাইফা নামের এক কন্যা। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রিয় কারাগারে দায়িত্ব পালনকালে বিধবা মা আর কন্যার কথা বার বার মনে পড়ায় ২৪ তারিখ থেকে ৩ দিনের ছুটি নেন তিনি।

একই উপজেলার গুরুই গ্রামের সহকর্মী রুহুল আমীনসহ ৫জন বাড়ি ফিরতে ওইদিনই দুপুর ১টায় একটি হাইএস মাইক্রোবাসে চড়ে বসেন। মা আর মেয়ের গল্প করতে করতে ফুরফুরে মেজাজে সহযাত্রীদের সাথে মেতেছিলেন রসালাপে। বিধি বাম। মাইক্রোবাসটি জেলার ভৈরব উপজেলার বাজরা এলাকায় বিকাল ৩টায় পৌঁছতেই রাস্তার পূর্ব পাশের একটি গাছের মরা বিশাল ডাল ভেঙ্গে পড়ে গাড়ির ওপর।

গাড়ির সামনের অংশ চেপে একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে বুক কেটে দেবে যায় রাসেলের। সহযাত্রীরা আহত হলেও ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। আইনী প্রক্রিয়া শেষে আজ বুধবার ২৫ অক্টোবর দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেল হাজতে জানাজার নামাজ শেষে রাসেলের লাশ নিকলীর কৈবতহাটি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

তার সহপাঠি ও পুলিশের এসআই আ. কাদিরসহ জানাযার মাঠে উপস্থিত বন্ধু-বান্ধব ও এলাকাবাসি এ প্রতিনিধিকে জানায়, রাসেলের বড় ভাই জালালও কয়েক বছর আগে ৮ মাস বয়সী এক পুত্র সন্তান রেখে মারা যান। নিহত রাসেল খুব বন্ধুপ্রিয় ছিলেন। তার বেতনের বড় একটা অংশ তিনি প্রতিমাসেই অসহায় এলাকাবাসির সাহায্যার্থে ব্যয় করতেন।

আমাদের নিকলী ডটকম পরিবার রাসেল কবিরের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে। সেই সাথে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহানুভূতি ও তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছে।

Similar Posts

error: Content is protected !!