আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
এবার হাওরে সরকারি বরাদ্দ লুটপাট করে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের খুঁজে বের করতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পাঁচ কর্মকর্তার নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের খোঁজ মিলেছে। দুদক তাদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে পরিচালক বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিশেষ কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
দুদক সূত্র জানায়, হাওরবাসীকে রক্ষার নামে যারা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওইসব অসাধু কর্মকর্তাই হাওর লুটেরা। ওই পাঁচ কর্মকর্তা এখন দুদকের নজরদারিতে। একই সাথে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সুনামগঞ্জের হাওরে ১১৬টি প্যাকেজে ২৮টি বাঁধ নির্মাণে কোনো কাজ না করেই ২৫ কোটি টাকার বিল প্রদানের বিষয়টিও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল সমকালকে বলেন, হাওরে দায়িত্বরত পাউবোর কর্মকর্তাদের নামে অস্বাভাবিক সম্পদ পাওয়া গেলে তা অনুসন্ধান করা হবে। অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করা হবে।
সূত্র জানায়, ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণসহ হাওরে পাউবোর অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনায় অনিয়ম, দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ এরই মধ্যে দুদকের হাতে এসেছে। লুটেরাদের নামে-বেনামে রয়েছে বাড়ি, গাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট ও প্লট। ব্যাংকে মোটা অঙ্কের টাকাসহ মেয়াদি আমানত রয়েছে। কার নামে কী কী সম্পদ পাওয়া গেছে- এ তথ্য জানতে চাইলে দুদকের একজন পদস্থ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, অনুসন্ধানের স্বার্থে এ ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাবে না। সময় হলে সব জানানো হবে।
জানা গেছে, কমিশন এক চিঠিতে পাঁচ সদস্যের টিমকে ওই পাঁচ কর্মকর্তার অর্থ-বিত্তের হিসাবসহ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। শিগগিরই নামে-বেনামে, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে তাদের কাছে নোটিশ পাঠানো হবে। নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী পেশ করতে হবে। পরে ওইসব বিবরণ যাচাই করা হবে। তাদের আয়কর নথিতে উল্লেখ করা সম্পদও খতিয়ে দেখা হবে। সম্পদ বিবরণী ও আয়কর নথির বাইরেও তাদের সম্পদ রয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে।
যে পাঁচ কর্মকর্তার সম্পদ অনুসন্ধান করা হচ্ছে তারা হলেন- পাউবোর মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর কবির, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পূর্ব রিজিওন) একেএম মমতাজ উদ্দিন, দুদকের মামলার প্রধান আসামি ও আটক সুনামগঞ্জ জেলা পাউবোর বরখাস্ত হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দীন, সিলেট বিভাগের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম সরকার ও সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই। এ ছাড়া অনুসন্ধান পর্যায়ে আরও কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরিচালক বেলাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন অনুসন্ধান টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক প্রকৌশলী আবদুর রহিম, সহকারী পরিচালক সেলিনা আখতার মনি, ফারুক আহমেদ ও মো. নেয়ামুল আহসান গাজী।
হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে পাউবোর ১৫ কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ৪৬ ঠিকাদারসহ মোট ৬১ জনের বিরুদ্ধে ২ জুলাই মামলা করেছে দুদক। হাওরে বাঁধ নির্মাণে চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ার দায়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খানসহ সংশ্লিষ্ট ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয় পরের দিন।
সূত্র জানায়, বিগত বছরগুলোর মতো এবারও ১৫ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাড়ে তিন মাসে সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শুরু করা হয় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। পরে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির এক জরুরি সভায় ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের সময় বেঁধে দেয়া হয়। এদিকে হাওরে পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে গত ২৭ মার্চ। প্রতি বছরের মতো এবারও ওই জেলার হাওরের ফসল ওঠার কথা ছিল ১৫ এপ্রিলের মধ্যে।
এবার বাঁধ নির্মাণে ২৩৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও ১৫১ ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছিল। গত বছরের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠনের কথা থাকলেও সেটি গঠন করা হয় চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি। ২০১১-১২ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মধ্যে ৩৮টি হাওরের বাঁধ ৬.৫ মিটার উঁচু করার অংশ হিসেবে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঠিকাদারের মাধ্যমে ১ হাজার ৪৩৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করার কথা ছিল। এ ছাড়া এবার ২৩৯টি পিআইসিকে ৩৮টি হাওরের ৮২০ স্থানে ৮০ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল। ওই ৮৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ২৩-২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় দিন সময় দেয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে ওই পরিমাণ বাঁধ নির্মাণ পিআইসির জন্য অসম্ভব ছিল।
সূত্র : এবার হাওর লুটেরাদের সম্পদের খোঁজে দুদক [সমকাল, ২৩ জুলাই ২০১৭]