আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
পাকুন্দিয়া বিএনপিতে প্রকাশ্যে না হলেও কোন্দল দীর্ঘ দিনের। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটি তীব্র আকার ধারণ করেছে। নিজ ঘরের আগুনে যেন জ্বলে-পুড়ে মরছেন নেতা-কর্মীরা। বিবদমান দু’গ্রুপ একে অপরকে ছাড় দিতে একেবারেই নারাজ। দলীয় কোন্দল আর গ্রুপিংয়ের কারণে বিএনপির দুর্গখ্যাত পাকুন্দিয়ায় এখন দলটির বেহাল দশা। আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও সেখানেও গ্রুপিং স্পষ্ট। দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোতেও চলছে বিভাজনের খেলা। নেতৃত্বের কোন্দলের কারণে সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা বিভক্ত ও নিস্ক্রিয় হওয়ায় মাঠের রাজনীতিতে দলটি অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
এরপরও ‘কমিটি’ ইস্যুতে দু’গ্রুপের মুখোমুখি অবস্থান উত্তাপ ছড়াচ্ছে স্থানীয় রাজনীতিতে। সোমবারের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে প্রশাসনের ১৪৪ ধারায় পণ্ড হয়ে গেছে উপজেলায় বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টিই এখন হয়ে ওঠেছে স্থানীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, নিজেদের কোন্দলের বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে পৌরসভার মেয়র পদে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে আসে। গত বছরের ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বর্তমান মেয়র হিসেবে বিএনপির মনোনয়ন পান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন। কিন্তু দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন এবং বিগত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মো. আক্তারুজ্জামান খোকনকে কাঙ্ক্ষিত সার্ভিস না দেয়ার ইস্যুতে দলীয় প্রার্থীকে ঘিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে বিএনপি। মো. আক্তারুজ্জামান খোকনকে প্রার্থী করে প্রকাশ্যে প্রচারণায় নামেন পাকুন্দিয়া বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের দলে যোগ দেন উপজেলা বিএনপির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী। নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামান খোকন বিজয়ী হলে দু’গ্রুপের বিরোধ আরো তুঙ্গে ওঠে।
এমন পরিস্থিতিতে উপজেলায় বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযান উদ্বোধনের ঘোষণা আসলে ফের নড়েচড়ে বসেন ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়ার সমর্থকরা। উপজেলা বিএনপি আহূত সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগের দিন রোববার বিকালে পৌরসদরের ঈশাখাঁ স্কুলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে সমাবেশ করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইদ্রিছ আলী ভূইয়া সমর্থিত নেতাকর্মীরা। উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম খোকনের সভাপতিত্বে এতে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. তৌফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুর রহমান মাসুদ, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদুল হক বুলু, সাবেক প্যানেল মেয়র আবদুল কদ্দুছ, রফিকুল ইসলাম, জাঙ্গালিয়া ইউপি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ভূইয়া, উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল আলম ছোটন ও পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এ সময় যুবদল, শ্রমিকদল ও ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে কমিটি বাতিল চেয়ে পৌরসদর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে নেতাকর্মীরা। মিছিল শেষে পাটমহাল মোড়ে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন ও সদস্য সচিব মো. কামাল উদ্দিনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
এদিন সন্ধ্যায় উপজেলা বিএনপি আহূত সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযানের সভাস্থল স্থানীয় পলিগ্যান পাবলিক স্কুলে একই সময়ে পৌর যুবদলের নামে কর্মীসভার ঘোষণা দিয়ে মাইকিং করানো হয়। উপজেলা বিএনপি ও পৌর যুবদলের পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচিকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় সভাস্থলসহ আশপাশের পুরো পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারির প্রতিবাদ জানান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন ও সদস্য সচিব মো. কামাল উদ্দিন।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইদ্রিছ আলী ভূইয়া অভিযোগ করেন, জেলা থেকে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয়ার পর আহ্বায়ক কমিটি দলীয় কোন কর্মকাণ্ড পালন করেনি। এমনকি আহ্বায়ক কমিটিতে যারা আছে, তাদেরকেও কোন কর্মকাণ্ডে ডাকা হয় না। আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিব দু’জনে মিলে তাদের পছন্দমতো দলীয় কর্মকাণ্ডের নামে অপকর্ম করে চলেছেন। বিগত ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য ছাড়াও কমিটি দেয়ার নামে তারা বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। যারা জেলে পঁচে মরছে দলে তাদের কোন মূল্যায়ন নেই। জেলা কমিটিকে এসব বিষয় জানানো হলেও তারা কোন উদ্যোগ নেয়নি।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মূলত মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া এসব আজগুবি কথা ছড়াচ্ছেন। তিনি তিনবার মনোনয়ন পেয়ে ফেল করেছেন, এবারও মনোনয়ন নিয়ে দলকে ডুবাতে চান। বিগত ১০ বছর সরকারবিরোধী কোন আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেননি। দলীয় নেতাকর্মীরা মামলা-হয়রানির মুখে পড়লেও, তিনি তাদের কোন খোঁজ নেননি। এখন নিজের স্বার্থে কমিটি হওয়ার প্রায় এক বছর কমিটি না মানার মতো অযৌক্তিক দাবি তুলছেন।
সূত্র : ঘরের আগুনে পুড়ছে পাকুন্দিয়া বিএনপি [কিশোরগঞ্জ নিউজ, ১ আগস্ট ২০১৭]