ঘোড়াউত্রার ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার পথে ছাতিরচর


নিজস্ব প্রতিনিধি ।।

১৯৬৫ সাল থেকে অদ্যাবধি কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ছাতিরচরের ভয়াবহ নদী ভাঙ্গণের কোন প্রতিকার হচ্ছে না। এরই মধ্যে গ্রামের তিন-চতুর্থাংশ বিলীন হয়ে গেছে ঘোড়াউত্রা নদীগর্ভে। অন্তত এক হাজার পরিবার এই নদী ভাঙ্গনে হয়েছে সর্বসান্ত।

হাওর জনপদের মানুষ এমনিতেই অতি দরিদ্র এবং একটিমাত্র ফসলের ওপর নির্ভরশীল। তার ওপর এই নদী ভাঙ্গনের বিপদে ছাতিরচরের মানুষেরা একেবারে দিশেহারা। গত পাঁচ বছরে এ গ্রামের তিন শ’ পরিবার তাদের ঘর-বাড়ি এবং ফসলি জমি হারিয়েছে। এখন তাদের মাথা গুঁজার ঠাঁইটি পর্যন্ত নেই।

গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে তাদের একটাই আহাজারি আমাদের নদী ভাঙ্গন থেকে বাঁচান। গ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন পূর্বপাড়া জামে মসজিদটি নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। মসজিদটি রক্ষার জন্যে এ গ্রামের মানুষের সেকি আকুতি। তারা অশ্রু ছল ছল চোখে এটাই যেন বলতে চাচ্ছে এই মসজিদটি আমাদের প্রাণ, আমাদের শত বছরের স্মৃতি এই মসজিদটি রক্ষা করুন। ইতোমধ্যে গ্রামে পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদটি নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে। এটা যেন তাদের মনে একটি বড় কষ্ট হয়ে লেগে আছে। পশ্চিম পাড়া নামে বিশাল পাড়াটিও সম্পূর্ণ নদী গর্ভে চলে গেছে।

পূর্বপাড়া মসজিদের ইমাম মওলানা তাজ উদ্দিন সাহেব জানালেন, নদী ভাঙ্গনের কারণে ছাতিরচর গ্রামের মানুষ আরও দরিদ্র হয়ে পড়ছে। অচিরেই এর প্রতিকার না হলে একটা মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে। তিনি নদী ভাঙ্গন রোধ করে মসজিদ এবং স্থানীয় জনসাধারণকে রক্ষার জন্যে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।

এই গ্রামের অধিবাসী কবি মহিবুর রহিম জানালেন, ছাতিরচরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙ্গনে তাদের সবকিছু হারাচ্ছে। এ বিষয়ে দেখার যেন কেউ নেই। প্রশাসন চরম উদাসীন এবং নির্বিকার। তিনি আরও জানালেন তাদের পৈত্রিক যে বাড়ি সবটাই নদী গর্ভে হারিয়েছেন। লোহামারা নামে একটা হাওর ঘোড়াউত্রা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরও কয়েকটি হাওরের জমি ধ্বংস হচ্ছে। এর আশু প্রতিকার না হলে পুরো ছাতিরচর ইউনিয়ন বিলীন হয়ে যাবে।

ছাতিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীন জানান, নদী ড্রেজিংই এই গ্রামের মানুষের একমাত্র সমাধান। ঘোড়াউত্রা নদীটি বাঁক নেয়ার কারণে এই নদী ভাঙ্গন। এই বাঁক ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী কেটে গতিপথ সোজা করে দিতে হবে। এতে ছাতিরচরসহ কয়েকটি গ্রাম উপকৃত হবে।

Similar Posts

error: Content is protected !!