জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন করিমগঞ্জের মাহাবুব

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

মাহাবুব রহমান মানিক কিশোরগঞ্জের সন্তান। করিমগঞ্জ উপজেলার আশুতিয়াপাড়া গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া মানিক কিশোরগঞ্জবাসীর জন্য বয়ে এনেছেন এক বিরাট সম্মান। পর্দার পেছনের সফল কারিগর মাহাবুব রহমান মানিক জিতেছেন “জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬”।

২০১৬ সালের শ্রেষ্ঠ রুপসজ্জাশিল্পী হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। রুবাইয়াত হোসেনের ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ চলচ্চিত্রে অসাধারণ রুপসজ্জা করে মানিক এই দুর্লভ সম্মান লাভ করেন। স্বভাবতই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে আপ্লুত ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় এই মেকাপম্যান।

এজন্যে অবশ্য কাঠখড় কম পোড়াতে হয়নি মাহাবুব রহমান মানিককে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মানিক চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন ভাগ্যের পরিবর্তন করবেন বলে। ঘটনাক্রমে হাতে তুলে নিয়েছিলেন শিল্পীদের সাজানোর রংতুলি। তারপর কেবল কেটে গেছে সময়, মানিক পরিণত হয়েছেন ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় মেকাপম্যান হিসেবে। মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়েছেন নায়ক-নায়িকা, অভিনয়শিল্পীদের। তার হাতের সুনিপুণ সাজে অভিনয় করে অনেকেই মাতিয়েছেন দর্শক।

কিন্তু প্রতিবারই স্বপ্নের কাছাকাছি এসেও বার বার অধরাই রয়ে গিয়েছিল চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’। এ নিয়ে আক্ষেপ কম ছিল না মাহাবুব রহমান মানিকের।

মানিক জানাচ্ছিলেন, এই পুরস্কারটির জন্য তিনি বহুদিন অপেক্ষায় ছিলেন। অনেকবারই মনে হয়েছে হয়তো এই বছরে তিনি পেয়ে যাবেন চলচ্চিত্রের রুপসজ্জা শিল্পের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিটি। কিন্তু হয়নি। স্বপ্নের খুব কাছাকাছি গিয়েও সেটা পূরণ হয়নি। ততদিনে তার বহু শিষ্যও ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে ইন্ডাস্ট্রিতে। হয়েছে জনপ্রিয় ও প্রশংসিত। এই তৃপ্তিটুকু নিয়ে তিনি আশায় বুক বেঁধেছিলেন একদিন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারটিও হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পাবেন। অবশেষে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

চলচ্চিত্রে নিজের শুরুর কথা বলতে গিয়ে মাহাবুব রহমান মানিক বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আঁকাআঁকির প্রতি খুব ঝোঁক ছিলো। সমবয়সী বন্ধুদের নানাভাবে সাজিয়ে দিতাম। আর সিনেমার পোকা ছিলাম বলে হুট করেই মাথায় মেকাপম্যান হবার ইচ্ছেটা ঝেঁকে বসলো। সেই ইচ্ছে নিয়েই চলচ্চিত্রে কাজ করা।’

মানিক জানান, ১৯৯২ সালে মেকাপ সহকারী হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন। সুযোগটা আসে ১৯৯৬ সালে। সেবারই প্রথম তিনি পূর্ণ মেকাপশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেটি ছিল আফজাল হোসেন এর তৈরি একটি বিজ্ঞাপনচিত্র। এরপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি মানিককে। একে একে কাজ করেছেন অনেক স্বনামধন্য পরিচালকের সাথে। এরমধ্যে কাজী হায়াত, মালেক আফসারী, মতিন রহমান, মুশফিকুর রহমান গুলজার, স্বপন আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মোস্তফা কামাল রাজ, অনিমেষ আইচ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিজের ধৈর্য, শ্রম আর কাজের প্রতি ভালোবাসার মূল্যায়ন পেলেন মাহাবুব রহমান মানিক।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত মাহাবুব রহমান মানিক বলেন, ‘এই আনন্দের প্রকাশ আমি কোনো ভাষায় করতে পারবো না। কাজের স্বীকৃতি চায় প্রতিটা মানুষ। সেটা পেলে মন আনন্দে ভরে উঠে। আরও ভালো কাজের অনুপ্রেরণা আসে। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকের এই অবস্থানে আমি পৌঁছেছি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় আমাকে আরও সাহসী করেছে ভালো কাজের প্রতি। আমি নিজেকে আরও নিবেদিত করে চলচ্চিত্রে আমৃত্যু কাজ করে যেতে চাই।’

কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার কৃতিমুখ মাহাবুব রহমান মানিককে অভিনন্দন জানিয়েছে নিকলী উপজেলাকেন্দ্রিক প্রথম অনলাইন সংবাদমাধ্যম আমাদের নিকলী ডটকম

চলচ্চিত্র শিল্পীদের মেকাপ করছেন মাহাবুব রহমান মানিক

সূত্র : জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে আপ্লুত কিশোরগঞ্জের মানিক [কিশোরগঞ্জ নিউজ, ১২ এপ্রিল ২০১৮]

Similar Posts

error: Content is protected !!