আবদুল্লাহ আল মহসিন ।।
সাকিব, লাদেন, মোহাম্মদ আলী। তিন বন্ধু। বয়স দশ/এগারো বছর। বন্ধুদের সাথে ছুটোছুটি খেলার সময়। সময় এখন বই-খাতা হাতে স্কুলে যাওয়ার। নিবিষ্ট মনে স্কুলশিক্ষকের পাঠ শোনার।
কাঁধে বহনের কথা ছিল স্কুলব্যাগ, অভাবের তাড়নায় আজ ফেরি করে ঝালমুড়ি বিক্রি করছে। দুই টাকা, পাঁচ টাকা, দশ টাকা; ফরমায়েশি সব অংকের ঝালমুড়ি মাখিয়ে পৌছে দিচ্ছে সবার হাতে হাতে। স্বাদ আর গন্ধ চাখার ফুরসতও হয়তো মেলে না তাদের। যেটুকু খাবে, তাও লাভের অংশ কমিয়ে আনবে। স্বাদে হেরফের হলে তো কথাই নেই, ক্রেতার বকুনি তৈরি থাকে।
তিন বন্ধুরই বাড়ি নিকলী উপজেলা সদর ইউনিয়নের টিক্কলহাটি গ্রামে। প্রতিদিন সকালে নাস্তা খেয়ে প্রায় ৬ কেজি ওজনের ঝালমুড়ি ডিশ বহন করে। এ-গাঁও ও-গাঁয়ে বিক্রি করে।
লাদেন জানায়, তিন বছর আগে ১ম শ্রেণীতে নিকলী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। বছরশেষে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলেও ভর্তি হতে পারেনি। মা-বাবা, ভাই-বোনকে নিয়ে তাদের অভাবের সংসার। উপার্জনক্ষম কেউ নেই সংসারে। বাধ্য হয়েই পড়ালেখা করার ইচ্ছাটাকে ধামাচাপা দেয় ঝালমুড়ির পটে।
মোহাম্মদ আলী ও সাকিবেরও একই অবস্থা। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জোগাড়ের তাগিদে কোমলমতি মনের হাজারো স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়। তবু অদম্য এই শিশুশ্রমিকরা। ভাই-বোনের হাসিমাখা মুখখানাই যেন তাদের সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয়।
আরেক বন্ধু সাকিব জানায়, তাদের মতো টিক্কলহাটি, দরগাহ হাটি, পূর্বগ্রামে প্রায় দশ/পনেরজন শিশু রয়েছে যারা তাদের মতো ফেরি করে ঝালমুড়ি বিক্রি করে।
শিশু সংগঠন আমরা কুঁড়ির চেয়ারম্যান মুশতাক আহম্মদ লিটন বলেন, শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত এ শিশুদের শিক্ষার আলোয় ফিরিয়ে আনার জন্যে সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। সকলের সমন্বিত উদ্যোগই পারে তাদের এ মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে।