অস্তিত্ব সংকটে ধামইরহাটের কুটিরশিল্প

আবু মুছা স্বপন, ধামইরহাট নওগাঁ প্রতিনিধি ।।

পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে চরম অস্তিত্ব সংকটে ধামইরহাটের কুটিরশিল্প। উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর ন্যায্যমূল্য না থাকায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই পেশা ত্যাগ করতে শুরু করেছেন। অথচ কয়েক বছর আগে দেশের আনাচে কানাচে গ্রামে-গঞ্জে দেখা যেতো বাঁশের তৈরি দৃষ্টিনন্দন কুলা, খাঁচা, চালনি, চাটাই, ডোল, ঝুড়ি, পলো, ডালা প্রভৃতি। এসব বাঁশজাত পণ্যের ছিল ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রসারতায় বর্তমানে বাঁশের তৈরি সামগ্রীর বিকল্প হিসেবে অনেক পণ্যই তৈরি করছে প্লাস্টিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিনিয়ত কমছে বাঁশের তৈরি পণ্য সামগ্রীর কদর।

পৈত্রিক পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পেশাকে যারা আগলে রেখেছেন তারাও রয়েছেন নানান সমস্যায়। বাজারে প্রচলিত নিত্যপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক পণ্যের সথে পাল্লা দিতে না পেরে তারাও হয়ে পড়েছেন কোণঠাসা। ফলে আবহমান বাংলার এ শিল্পের ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি ধামইরহাট উপজেলার বাঁশ শিল্পীদের ভাগ্যে নেমে এসেছে দুর্দিন। একদিকে ব্যবহারকারীর অভাব, অন্যদিকে বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাঁশ শিল্পীদের অনেকেই তাদের পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। ফলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাতেগোনা প্রায় ২০-২৫টি পরিবার বিলুপ্ত প্রায়।

২২ মার্চ উপজেলার সর্ববৃহৎ হাটবার রোববারের হাটে আগত উপজেলার মাহালী পাড়া গ্রামের এ পেশায় জড়িত আন্তনি, বেলজামিন স্বরেনেন সাথে কথাহলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “দাদা বাপ-দাদার পেশা তাই আকড়ে ধরে আছি। ছেলে-মেয়েরা এখন আর এ পেশায় কাজ করতে চায় না।” তিনি আরও বলেন, পরিশ্রম বেশি, লাভ কম। আগের মতো চাহিদাও নেই।

বাঁশ শিল্পে জড়িত ভরত টুডু, মার্টিন ও আলব্রিকুশ মার্ডি জানান, বাঁশের দাম বেড়ে গেছে। পুঁজি সংকটও রয়েছে। চাহিদা ও মুনাফা ভাল না থাকায় পরিবারেও যাচ্ছে দুর্দিন।

স্বল্পমূল্যের প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এ শিল্পের ক্ষুদ্র বিক্রেতাদেরও যাচ্ছে দুর্দিন। বাঁশের তৈরি সামগ্রীর বিক্রেতা মুক্তিযোদ্ধা আগস্ট হেমরম ও তার ছেঠে মাইকেল হেমরম জানান, এক যুগ আগেও ছিল বাঁশের সামগ্রীর কদর। পরিবারের দৈনন্দিন কাজে বাঁশের তৈরি কুলা, চালনি, ঝুড়ি, ডালা মানুষ ব্যবহার করত। এখন এসব পণ্য প্লাস্টিকের পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বেচা-বিক্রি খুবই কমে গেছে। এখন খাঁচা, চাটাই, ডোল, পলো এসব বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এসবেরও এখন আগের মত চাহিদা নেই।

চিরাচরিত বাঙালি সংস্কৃতির পরিবেশবান্ধব বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্টদের বিনাসুদে কিংবা স্বল্পসুদে পরিবারভিত্তিক ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা গ্রহণসহ পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা জরুরি বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।

Similar Posts

error: Content is protected !!