নিকলীর ক্ষেতে পাকছে ধান, বিপাকে হাওরাঞ্চলের কৃষক

খাইরুল মোমেন স্বপন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।

হাওরাঞ্চলে প্রধান ফসল বোরো ধান কাটা, মাড়াই সরঞ্জামাদি সংগ্রহের ব্যস্ততম সময় যাচ্ছে। করোনাভাইরাস (কোভিট-১৯) প্রতিরোধে দোকানপাট ও সকল প্রকার জনসমাগম নিষিদ্ধ। উপকরণ জোগাড় ও শ্রমিক সংগ্রহে চরম বিড়ম্বনায় দিনাতিপাত করছেন কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের কৃষকরা।

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার হাওরাঞ্চল সিংপুর, দামপাড়া, কারপাশা, সদর, গুরুই, জারইতলা ও ছাতিরচর এলাকার বোরো মাঠ ঘুরে দেখা যায়, জমিগুলো আশাতীত হৃষ্টপুষ্ট। ধানে পাকা রং ধরছে। ইতিমধ্যেই চরাঞ্চলে আগাম জাতের বিআর-২৮ ধান কাটা শুরু হয়েছে। শ্রমিক সমাগম চোখে পড়বার মতো নয়। কৃষকরা নিজেরাই স্বল্প পরিসরে এসব জমি কাটছেন। দু’-চারদিনের মধ্যেই সকল জমি কাটার উপযোগি হবে।

কৃষি-শ্রমিক নিকলী সদরের নয়াহাটি গ্রামের মরু মিয়া জানান, “জমি কাটায় যাইবো ক্যামনে, কাঁচি (কাস্তে) তো পাইতাছিনা। কামারের দোকান বন্ধ। হাট বাজারও বন্ধ। ঘরে যেইটা আছে হেইডারেও মেরামত করার ব্যবস্থা নাই।”

পুকুরপাড়ের মাড়াই কল মালিক কাদির মিয়া বলেন, “এক বছর যাবৎ মাড়াইকলডা পরা। দাঁতমাত ভোঁতা অইয়া রইছে। কিছু কামকাজ না করাইলে কল লইয়া মাঠে গেলে কি অইবো। কামার আর ওয়ার্কসপ বন্ধ। ঠিক করানির লাইগ্যা দৌড়তাছি।”

গুরুই গ্রামের আতর আলী জানান, “গতবার মুনির দাম আছিন হাজারেরও বেশি। আগাম বানে খেতও তলায়া গ্যাছিনগা। মাইর খায়া গ্যাছলামগা ছিডাগাং। জাত কৃষক তো, কাম কাজ কইরা কিছু ট্যাহা আইন্যা আবার রিস্ক লইছিলাম। যে সময়, কেউ কোহানে যাওন যায়না। উজাইন্যা মুনি নামবেরও ভাও দেহিনা। এলাকার মুনি দিয়া অত্যা খেত কাডন সম্ভব না। মুনির দাম দেড় হাজারেও ফাওন যাইতোনা। মরছি।”

নিকলী সদরের নতুন বাজারের মিন্টু কর্মকার এ প্রতিনিধিকে বলেন, “যে অবস্থা চলতাছে ভাই, যারা দোকান খুলে তারারেই জরিমানা করে। গরীব মানুষ আমরা। দিন আনি দিন খাই। দোকান বন্ধ। গিরস্তে তো বাড়িত গিয়া ত্যাক্ত করে। ঘরে খাওন অই নাই। জরিমানা দিবাম ক্যামনে। সরকারতো আমরার ভালার লাইগ্যাই করতাছে। ইহানো কারে কি কইয়াম। নিজেরার ভাগ্যরেই দোষি।”

নিকলী উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আসফিয়া সিরাতের সাথে কথা হলে তিনি জানান, জরুরি কোন কিছু বন্ধ নয়। তবে কৃষি উপকরণ সামগ্রির দোকান খোলা যাবে কি না তা ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে জানাবো।

Similar Posts

error: Content is protected !!