আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
১৯৯৮ সাল। কঙ্গোয় মুখোমুখি দুই ফুটবল দল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। দুই দলই একটি করে গোল করেছে। জয় নিয়ে দুই দলই আশাবাদী। গ্যালারিতে বসে থাকা দর্শকরাও বুঁদ হয়ে গিয়েছিলেন খেলায়। ঠিক সে সময়ই অকল্পনীয় এক ঘটনা ঘটে।
মাঠের মধ্যেই বাজ পড়ে। নিমেষে অংশগ্রহণকারী একটি দলের ১১ জন ফুটবলারেরই মৃত্যু হয়। আহত হন গ্যালারিতে বসে থাকা কয়েকজন দর্শকও। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে প্রতিপক্ষ দলের একজন খেলোয়াড়েরও কোনও ক্ষতি হয়নি।
এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই হইচই পড়ে যায়। এর সঙ্গে “কালোজাদু”র যোগের অভিযোগ উঠতে শুরু করে।
পরাজয়ের ভয়ে প্রতিপক্ষ দলেরই কোনও খেলোয়াড় নাকি “কালোজাদু”র প্রয়োগ করেছিলেন। সে কারণেই এমন ঘটনা বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। ওই খেলোয়াড়কে নাকি মাঠের মধ্যে “অন্যরকম কিছু” করতেও দেখা গিয়েছিল।
ওই বজ্রপাত সত্যিই “অন্য কোনও কারণে” ছিল কি না তা জানা যায়নি। তবে এক সময় পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকা জুড়ে যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে জাদুবিদ্যার ফল বলে বিশ্বাস করতেন ওই অঞ্চলের মানুষ। এখনও পুরোপুরি সেই বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি তাঁরা।
ছোটখাটো বিষয়েও একে-অন্যের উপর জাদুবিদ্যার প্রয়োগ করে ক্ষতির চেষ্টা করা হয়। ফুটবল খেলার মাঠে জাদুবিদ্যার প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে কঙ্গোতে।
আরও একবার কঙ্গোতে ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন বজ্রপাতে একটি দলের ছয়জন খেলোয়াড় গুরুতর জখম হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সে বারও প্রতিপক্ষ দলের কোনও খেলোয়াড় জখম হননি।
ফুটবল ম্যাচে জাদুবিদ্যার প্রয়োগের এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। হারতে বসা দলও জাদুবিদ্যার প্রয়োগে নাকি জয়ী হয়েছে। যার পর আফ্রিকা জুড়ে ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন খেলোয়াড়দের অন্য কোনও রকম কাজ (মন্ত্র পাঠ, গোলপোস্টের মাটিতে দাগ কাটা ইত্যাদি) করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
কঙ্গো প্রশাসনের যুক্তি ছিল, জাদুবিদ্যায় বিশ্বাস দেশের ফুটবল ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে। এর ফলে নিজেদের স্কিল উন্নত করার বদলে জাদুতেই ভরসা করতে শুরু করেছিলেন খেলোয়াড়রা।
মাঠে জাদুবিদ্যা নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর কোনও খেলোয়াড়কে এ রকম কিছু করতে দেখা গেলেই তাঁকে তৎক্ষণাৎ মাঠের বাইরে বার করে দেওয়া হত। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও আজও কঙ্গোর মানুষের মন থেকে জাদুর প্রতি বিশ্বাস পুরোপুরি মুছে ফেলা যায়নি।
সূত্র : The Guardian, Independent, Irish Times