প্রেমিকের কলিজা দ্বিখণ্ডিত করার দায়ে প্রেমিকার ফাঁসি

কলেজ ছাত্র ইমদাদুল হক শিপন হত্যা মামলায় তার প্রেমিকা ফাতেমা আক্তার সোনালীকে (২১) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার খুলনার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোসাম্মাৎ দিলরুবা সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সোনালীর বন্ধু মেহেদী হাসান অনিককে খালাস দেয়া হয়। আদালতে সোনালীর উপস্থিতিতে এ দণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট সাব্বির আহমেদ জানান, ২০১৪ সালের ৮ মার্চ নগরীর জোড়াগেট গণপূর্ত বিভাগের আবাসিক কলোনী থেকে শিপনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিপনের বুক ফেড়ে কলিজা দুই টুকরা করে বিছানার ওপর ফেলে রাখা ছিল।

killer_khulna
এ ঘটনায় শিপনের ভাই মো. বাবুল মিয়া বাদি হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে সোনাডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১৫ মার্চ শিপনের প্রেমিকা ফাতেমা আকতার সোনালীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করে সোনালী। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মেহেদী হাসান অনিক নামের আরেকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাডাঙ্গা থানার এস আই শওকত হোসেন দুইজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। মামলার তদন্তে উঠে আসে হত্যার লোমহর্ষক কাহিনী। যা মামলার বিচারের সময়ও প্রমাণিত হয়েছে।
মামলার চার্জশিটে হত্যার কারণ উল্লেখ করে বলা হয়, নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার গণপূর্ত বিভাগের আবাসিক কলোনীতে মামা আবু বক্করের বাসায় থেকে নগরীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজের মেডিক্যাল ইন্সটিটিউট বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র হিসেবে লেখাপড়া করতেন শিপন। পাশাপাশি তিনি খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লিফট অপারেটরের দায়িত্ব পালন করতেন। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সোনালীর সাথে শিপনের পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়।
এক পর্যায়ে সোনালী জানতে পারে শিপন আরো ৪/৫ জন মেয়ের সাথে দৈহিক সম্পর্ক করেছে। এ ঘটনায় সোনালী দারুণভাবে ক্ষুব্ধ হয় এবং শিপনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ওই বছরের ৬ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত শিপনের মামা মাগুরায় গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান। ৮ মার্চ শিপনের বাসায় যায় সোনালী। এর আগে সোনালী ২০টি ঘুমের বড়ি গুড়ো করে আরসি কোলার ভেতরে মিশিয়ে নেয়। সোনালী শিপনকে ঘুমের ওষুধ মেশানো আরসি কোলা খাইয়ে দেয়। শিপন অচেতন হয়ে পড়লে, তার হাত-পা বেঁধে গলা কেটে শিপনকে হত্যা করে। হত্যার পর শিপনের বুক ফেড়ে কলিজা বের করে দুই টুকরো করে লাশের পাশে ফেলে রেখে, ল্যাপটপ ও মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।
আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট সাব্বির আহমেদ বলেন, সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত সোনালীকে রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায়, মেহেদী হাসান অনিককে বেকসুর খালাশ দেয়া হয়।

Similar Posts

error: Content is protected !!