অসমর্থ বিচারপ্রার্থীরা সুপ্রিমকোর্টে বিনা খরচে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন

nikli legal services

দিদারুল আলম ।।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থীরা সুপ্রিমকোর্টে বিনা খরচে আইনি সুবিধা পাচ্ছেন।

গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্টে স্থাপিত আইনগত সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আপিল, রিভিশন, জেল আপিল, লিভ-টু-আপিল ও রিট মামলায় সরকারি খরচে সেবা দেয়া হচ্ছে।

সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য সচিব সহকারী এটর্নি জেনারেল টাইটাস হিল্লোল রেমা জানান, বিচারিক (নিম্ন) আদালতের কোনো রায় বা আদেশে সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি যদি সুপ্রিমকোর্টে মামলা পরিচালনা করতে আগ্রহী হন, আর সেক্ষেত্রে যদি ওই ব্যক্তির বার্ষিক গড় আয় দেড় লাখ টাকার নিচে হয়, তাহলে তিনি সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে আইনি সেবা নিতে পারছেন।

মামলা সংক্রান্ত প্রয়োজনে লিগ্যাল এইড অফিসের সাথে যোগাযোগের জন্য অসমর্থ বিচার প্রার্থীদের সুবিধার্থে মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে (০১৭৬১২২২২২২—৪ পর্যন্ত)। অসমর্থ বিচারার্থীদের আইনি সেবা দিতে সুপ্রিমকোর্টের ৮৩ জন আইনজীবী নিযুক্ত রয়েছেন। সুপ্রিমকোর্টের লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম।

সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জানান, সুপ্রিমকোর্টে লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপনের পর ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ২১০টি মামলার বিষয়ে আইনগত সহায়তার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭১ মামলা লিগ্যাল এইডের আওতায় আসে। এর মধ্যে ৭৪টি মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে ও ৯৭টি মামলা এখনো চলমান রয়েছে।

২৮ এপ্রিল দেশে চতুর্থবারের মতো ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’ পালিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় আইনগত সুবিধা প্রদান দিবসের’ অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। আইন মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক বিভাগ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী লিগ্যাল এইড কল সেন্টার জাতীয় হেল্পলাইনের উদ্বোধন করেন। এ হেল্পলাইনে ১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাবেন দেশের স্বল্প আয়ের ও অসহায় বিচারপ্রার্থী নাগরিকরা। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ১৮৮ জন গরিব ও অসচ্ছল ব্যক্তিকে আইনগত সহায়তা দেয়া হয়েছে।

বর্তমান সরকার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, সহায় সম্বলহীন, অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন-২০০০’ প্রণয়ন করে। ২০০০ সালে তৎকালীন সরকার এ আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। তারপরের সরকারগুলো আইনটি কার্যকর করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর বর্তমান সরকার দরিদ্র ও অসচ্ছল জনগণের বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আইনটি কার্যকর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।
২০০০ সালে প্রণীত আইন অনুযায়ী ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা’ গঠন করা হয়। রাজধানীর ১৪৫, নিউ বেইলী রোডে এ সংস্থার প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এর ব্যাপ্তি সুপ্রিমকোর্ট, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত নেয়া হয়। জেলা কমিটি গঠন, প্রতিটি জেলা জজ আদালতে এর কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এতে দরিদ্র-অসচ্ছল ও অসহায় জনগণ বিচারপ্রাপ্তিতে সুবিধা পাচ্ছে। নানা প্রচার, প্রচারণা, সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ সেবা বিষয়ে জনসচেতনতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে (www.nlaso.gov.bd)। বাসস

Similar Posts

error: Content is protected !!