আবদুল্লাহ আল মহসিন ।।
চম্পা সূত্রধর। বাড়ি নিকলী উপজেলার দামপাড়া মিস্ত্রি পাড়ায়। মা-বাবা হারিয়ে সীমাহীন কষ্টের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন। ভালোবাসার পৃথিবী তার জন্য ছোট হয়ে আসছে।
সবচেয়ে আপনজন মা বিউটিকে হারিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। ২৮ মে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আনসারের দায়িত্ব পালনের জন্য মা বিউটি পার্শ্ববর্তী উপজেলা মিঠামইনে গিয়েছিলেন। রোববার ২৯শে মে ভোর রাত ৪টায় নৌকাডুবিতে তার মৃত্যু হয়।
ঘুম থেকে উঠেই শুনে মায়ের মৃত্যুর খবর। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু ততক্ষণে এই খবর টিভি, রেডি ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চম্পার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। হাহাকার আর চিৎকারে আকাশ ভারি হয়ে উঠছিলো। এই কষ্ট আর বেদনার দিনে এইচএসসি পরীক্ষা ছিলো। শত কষ্ট চেপে রেখে আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় পরীক্ষা হলে গিয়েছেন। অংশ নিয়েছেন সেদিনের নির্ধারিত সমাজ কর্ম পরীক্ষায়।
কান্নাভেজা চোখে বার বার ভেসে উঠছিলো মা’র মুখ। সরেজমিনে এই প্রতিবেদক দেখেছেন মা হারানোর ব্যথা-বেদনা নিয়ে চম্পার কলম চালিয়ে যাওয়া। মায়ের স্বপ্ন ছিলো মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। সেই স্বপ্নকে নিজের মাঝে ধারণ করেই সেদিনের মতো পরীক্ষা হলে নির্ধারিত ৩ ঘণ্টা কাটিয়ে এসেছেন।
চম্পার বাবার নাম নারায়ণ সূত্রধর। ২০০৭ সালে তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবা মারা যান। তখন সে ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী। পুরো সংসারের দায়িত্বভার বর্তায় মা বিউটির কাঁধে। চম্পার ভাই অর্জুন সূত্রধর তখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে মা’কে উপার্জনে সহযোগিতা করেন। ২৮ মে’র ট্রলারডুবিতে দীর্ঘ ৯ বছরের শেষ আশ্রয় মাকেও হারিয়েছে চম্পা।
চম্পার খালাতো ভাই মলয় সূত্রধর জানান, এক সময় চম্পাদের পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। তখন প্রায় ৩ মাস আমরাই তাদের খাবার যোগান দিতাম। বাবার অবর্তমানে আদর-স্নেহ-উপার্জনের পূর্ণ দায়িত্ব ছিলো ওর মায়ের ওপর। এখন তাও নেই। থাকার মধ্যে এখন কেবল ভিটেমাটিটুকুই ভরসা। দুর্ঘটনার পর সরকারিভাবে কিছু অনুদান পাওয়া গেছে। পরিবারে উপার্জনক্ষমও কেউ থাকলো না। এ অবস্থায় কে নিবে সহায় সম্বল হারানো পরিবারটির!