আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
তারও সংসার ছিল। স্বামী, সন্তান নিয়ে ছিল স্বপ্নের ঘরদোর। আজ আর কেউ কাছে নেই। নেই ঠিকানাও। কিছুই না থাকার মধ্যে সাধ্যমতো পরিপাটি বেশ আর একটা নির্মল হাসি লেগেই আছে ঠোঁটে। পাগলি পরিচয়েই নিকলীর রাস্তায়, পথে ঘাটে বাস। কুড়িয়ে আনা সবজি ফেরি করে গ্রামে গ্রামে। বিক্রি না হলে থাকে নিরম্বর উপবাসে। তবুও ভিক্ষা করে না।
একদিন ফিরিয়ে নেবে ঘরে এমন আশায় স্বজনদের ইজ্জতের চিন্তা উপবাসকেও জয় করে নিয়েছে খতিজা বেগম (৫০)। বাড়ি তার উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের বড়কান্দা গ্রামে। বাবার নাম মৃত ফজর আলী যদিও, এখন শুধুই পরিচয় দেয়ার অর্থে পরিচয়। কথা হয় খতিজার সঙ্গে।
নিকলীর পার্শ্ববর্তী উপজেলা কটিয়াদীর করগাঁও ইউনিয়নের লাহুন্দ কেওয়াহাটি গ্রামের বাটার মায়ের বিয়ে হয় উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের বড়কান্দ গ্রামের বৃদ্ধ ফজর আলীর সাথে। ঘটনা প্রায় ৫২ বছর আগের। বছর দুয়েকের সংসারে জন্ম হয় খতিজা বেগমের। ফজর আলীর আগের সংসারের ছেলে আলী হোসেন লিখিয়ে নেয় জায়গা-জমিন। খতিজার বয়স যখন বছর দুয়েক ফজর আলীর মৃত্যু হলে বাটার মা মেয়ে খতিজাকে নিয়ে ফিরে যায় বাপের ভিটায়। খতিজা বড় হতে থাকে। ভালো লাগে মামাত ভাই আ. আজিজকে। ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা। পরিবারের চাপে আ. আজিজ বিয়ে করে অন্যত্র। অগত্যা কিশোরী খতিজার বিয়ে ঠিক হয় একই ইউনিয়নের জুক্কারপাড়ের শুক্কুর আলীর সাথে। কিন্তু দুজনেরই মন পড়ে থাকে ভালোবাসার মানুষের কাছে। বছর তিনেকের সংসারে শুক্কুর আলীর ঔরসে বেদেনা নামের এক কন্যা সন্তানের মা হলেও খতিজা স্বপ্নের রাজপুত্তুর ইতিমধ্যেই ৩ কন্যার জনক আ. আজিজের হাত ধরে পালিয়ে যায়।
নানা ঘাত-সংঘাতে আ. আজিজের ঘরে জন্ম নেয় ছেলে ফারুক। শেষ পর্যন্ত সতীনের সংসারে আর ঠাঁই হয়নি খতিজার। শিশু ফারককে নিয়ে মায়ের ঘরে ৮ বছরের কন্যা সমেত কিছুকাল।
এর মধ্যেই ফারুক বেদেনার শিশুসুলভ ঝগড়ায় সামান্য রক্তাক্ত আহত হয় ফারুক। পাড়া-পড়শীর দেখানো সৎ বাবার ভয়ে নিরুদ্দেশ হয়। মায়ের মৃত্যুর পর আর কোনো অবলম্বন এবং আ. আজিজের ঘরে আর কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় ফারুককে নিয়ে যায় পিতা আ. আজিজ। সব হারিয়ে মাথায় দেখা দেয় গণ্ডগোল। ঘর ছাড়ে খতিজা সেই ষোল বছর আগে। এখন অনেকটা সুস্থ হলেও আ. আজিজের ঘরে আর ফিরে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
মেয়ে বেদেনার কথা জিজ্ঞেস করলে সে এ প্রতিনিধিকে জানায়, বেদেনা সিলেটে গিয়েছিল। তার সাথে আর দেখা হয়নি। তবে ছেলের সাথে মাঝে মাঝে দেখা হয়। সে এখন আঠারো বছরের যুবক। কিন্তু স্বভাব ভালো হয়নি। খতিজার ভাষায় হাতনাড়ার (চুরি করা) বদভ্যাস আছে বলে ছেলেকে দেখতে পারে না সে। নিতে বললেও ছেলের সাথে সে জন্য যায় না।
ভোটার আইডিই হয়নি বলে কোনো দিন ভোটও দেয়া হয়নি তার। ঠিকানা না থাকায় কোনো জনপ্রতিনিধির দায়ের মধ্যেও নেই।
খতিজা আরো জানায়, মাঝে মাঝে আ. আজিজের সাথে এখনও দেখা হয়। ফিরিয়ে নেয়ার ইচ্ছা থাকলেও বড় বউয়ের ভয় কাজ করে। তবে খতিজাকে ভালো হয়ে চলতে পরামর্শ দেয়। একদিন ফিরিয়ে নেয়ারও আশ্বাস দেয়। কিছুই নেইয়ের মধ্যে খতিজা সেই আশ্বাসটুকু অবলম্বন করেই আছে এখনও।
সূত্র : ভিক্ষা ক্যারে ছেরার বাপের একটা ইজ্জত আছে না! মানবজমিন