বিশেষ প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ ।।
কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ কথা কাটাকাটির জেরে প্রথমে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া পরে দুপক্ষই লোহার রড, লাঠিসোটা এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রক্তাক্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধের ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
২৫ সেপ্টেম্বর রোববার দুপুর একটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন কলেজ অধ্যক্ষ ডা. মো. রুহুল আমিন। একই সাথে ছাত্রদের বিকেল পাঁচটা ও ছাত্রীদের ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাতটার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশের পাশাপাশি সাময়িকভাবে ছাত্র রাজনীতির ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শনিবার রাত থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল সজল কুমার সাহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ।
জানা গেছে, সম্প্রতি নাসিরুল ইসলামকে সভাপতি ও রাজিব মাহমুদ রাজুকে সাধারণ সম্পাদক করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই কমিটির পক্ষে-বিপক্ষের ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ওই কমিটির বিরোধিতাকারী গ্রুপের ছাত্রদের সাথে মনছুর খলিল ছাত্রাবাসে প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে দুপক্ষই লোহার রড লাঠিসোটা এবং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রক্তাক্ত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় দু’পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতরা হলেন আমিনুল (২২), আল আমিন রিয়াদ (২১), শাহীনূর (২২), এস এম জাহিদ (২০), তিতাস (২১), মারুফ আহমেদ (২০), মামুন (২২), আজিজুল (২০), আহসান রানা (২২)।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা শেষে কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
তবে হঠাৎ করে কলেজ বন্ধ ঘোষণা দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। তাদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যাদের কারণে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম হয়েছে, কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে কলেজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে তাদের মতো সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছে। শনিবার কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ছেলেদের হল থেকে ছাত্ররা তাদের ব্যাগ গুছিয়ে হল ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কয়েকজন ছাত্রীর সাথে কথা হলে তারা জানান, তারা হল ছেড়ে যাবেন।
কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. সজল কুমার সাহা সাংবাদিকদের জানান অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির কারণে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঘটনার জন্য দায়ী ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া সাময়িকভাবে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত কলেজ খুলে দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ওসি মোর্শেদ জামান (ওসি তদন্ত) বলেন, ঘটনার পরপরই মেডিক্যাল কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে। তাছাড়া বাইরে থেকে কোনো বহিরাগত গিয়ে যেন পরিবেশ অশান্ত করতে না পারে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।