দীপ্ত আহসান ।।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ২০ জানুয়ারি ২০১৭, শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ‘হাওরের স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের রূপরেখা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় পরিবেশ-প্রতিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে হাওরের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে হাওর অঞ্চলবাসী। একইসঙ্গে হাওরের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বাড়ানো ও তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। হাওর রক্ষায় সোচ্চার ‘হাওর অঞ্চলবাসী’ সংগঠন এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
‘হাওর অঞ্চলবাসী’র সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় মূল বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার লকহ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. খালেকুজ্জামান মতিন। তাঁর বক্তব্যের ওপর প্রধান আলোচক ছিলেন হাওর বোর্ড-এর সাবেক মহাপরিচালক ও জল-পরিবেশ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন হাওর রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা অমর চান্দ দাস, হাওর অঞ্চলবাসীর প্রধান সমন্বয়ক ড. হালিম দাদ খান, সমন্বয়ক হাবিব রাজা ও জাকিয়া শিশির, প্রকৌশলী এনায়েতুর রহমান, কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।
হাওরের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, বেকারত্ব প্রভৃতি ক্ষেত্রে দুরাবস্থার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন ড. খালেকুজ্জামান মতিন। চিহ্নিত সমস্যা সমাধানে তিনি মূল্যবান কিছু সুপারিশও করেন।
তিনি বলেন, যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে পরিবেশ-প্রতিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে হাওরের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব। এ লক্ষ্যে সঠিক নীতিনির্ধারণের ওপর গুরত্ব আরোপ করেন তিনি।
ম. ইনামূল হক ড. খালেকুজ্জামানকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, নদীর গতিপথ রুদ্ধ হয় কিছুতেই এমন প্রকল্প হাতে নেওয়া যাবে না। হাওরের জলাভূমি লিজ দেওয়ার পরিবর্তে জেলেদের লাইসেন্স দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সভায় আলোচকরা বলেন, হাওরের মিঠা পানির মাছ দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ অঞ্চলের ধান দেশবাসীর ভাতের চাহিদা পূরণ করে। এমন উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া উচিত নয় যাতে মাছ, ধান আর মিঠা পানির বিশাল ক্ষেত্র এই হাওর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
আলোচকরা হাওর উন্নয়নে যথাযথ নীতিনির্ধারণে জনপ্রতিনিধিদের ওপর চাপ সৃষ্টিরও তাগিদ দেন। পাশাপাশি সরকার পরিচালিত হাওর উন্নয়নকাজ পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ওয়াচডগ কমিটি গঠনেরও সুপারিশ করেন তারা।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির আধার সাড়ে ৮ লাখ হেক্টরের এই জলাভূমিকে শুধু হাওর অঞ্চলবাসীর বিষয় হিসেবে না দেখে সুন্দরবনের মতো জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়ে এটি রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সভার সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম। উল্লেখ্য, মতবিনিময় সভায় উপস্থিত অনেকে হাওর নিয়ে গবেষণা ও মূল্যবান তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করার জন্য ড. খালেকুজ্জামানকে ধন্যবাদ জানান। অনেকে আবার হাওর নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে মত প্রকাশের পাশাপাশি বিভিন্ন সুপারিশও তুলে ধরেন। হাওরের বাসিন্দা না হয়েও অনেকে হাওর নিয়ে তাঁদের স্মৃতিচারণের সঙ্গে সঙ্গে সমৃদ্ধ হাওরের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ও প্রধান আলোচক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেকের প্রশ্নের জবাব দেন।
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা অঞ্চল হাওর জেলা হিসেবে পরিচিত। এই সাতটি জেলার আয়তন ২০ লাখ হেক্টরের মধ্যে সাড়ে ৮ লাখ হেক্টর এলাকা হাওর। লোকসংখ্যা প্রায় ২ কোটি। এ অঞ্চলে দেশের মোট ধানের ২০ শতাংশ ও ১৪৭ প্রজাতির মাছ উৎপাদিত হয়। এছাড়া বিপুল পরিমাণ পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে এখানে। উপযুক্ত পদক্ষেপের ফলে এই হাওর অঞ্চল হয়ে উঠতে পারে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।