বিশেষ প্রতিনিধি ।।
প্রমত্তা ঘোড়াউত্রা নদীর ক্রমাগত ভাঙনে গৃহহারা সাধনা আক্তার (৩৫) কৈশরের শুরুতেই পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকা শহরে। বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে স্বপ্ন দেখেন বাবার পরিবারে একটু সহযোগিতার। সামান্য আয়ের পুরোটাই তুলে দেন বাবা-মায়ের হাতে।
একদিন পরিচয় হয় চাঁদপুর জেলার ছিদ্দিক মিয়ার সাথে। ছিদ্দিকও ঢাকার কামরাঙ্গির চরের মাতবর বাজার এলাকায় থেকে রিকশা চালান। দুজনের মধ্যে গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক। এক সময় পরিবারের সমর্থনে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। নিজেদেরও একটি ঠিকানা হবে বলে সামান্য আয় থেকেই সঞ্চয় করতে থাকেন।
সাধনার কোলজুড়ে জন্ম নেয় একে একে ৬ কন্যা সন্তান। বড় মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হতেই ভালো পাত্রে পাত্রস্ত করতে কন্যাদের নিয়ে স্বামীর বাড়ি চাঁদপুরে স্থায়ী হন বছরসাতেক আগে। ৪ মেয়েকে সাধ্যমতো বিয়ে দিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে সাধনা-ছিদ্দিক পরিবার। বিয়ের বাকি স্কুলপড়ুয়া আঁখি (৯) ও পাখি (৭)-এর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সাধনা আবার আশায় বুক বাঁধেন।
সিদ্ধান্ত নেন প্রবাসে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে যাওয়ার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধারকর্জ করে স্থানীয় এক দালালকে টাকাও দেন সাধনা-ছিদ্দিক। মেডিকেল ও ফিঙ্গার প্রিন্ট করতে এ মাসেরই ৮ তারিখে ঢাকায় আসেন। ওঠেন ছোট ভাই নাজমুলের কামরাঙ্গির চরের ভাড়া বস্তিতে।
নাজমুল কামরাঙ্গির চরে থাকা তার এলাকার লোকজনের সাথে ফাল্গুনের প্রথম মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য গ্রাম্যমেলায় বাড়ি আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। মেলার আগেই রোববার ১২ ফেব্রুয়ারি ছিলো এলাকার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল। সাধনা তার প্রবাস জীবনের আগে বাল্যসখী, বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন আর কৈশরের স্মৃতি বিজড়িত জন্মস্থানের টানে বাপের বাড়ি আসতে ভাই নাজমুল ও এলাকার লোকজনের ভাড়া করা মাইক্রোবাসে করে রোববার ভোর ৬টায় রওনা হন।
বাপের বাড়ি কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলার নদীঘেরা ছাতিরচর ইউনিয়নে ফিরতে নরসিংদী জেলার বেলাবোর কাছে কেওড়াকান্দি নামক স্থানে মাইক্রোবাসটির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় একটি নিয়ন্ত্রণহীন বাসের। মুহূর্তেই সব শেষ। নিহত ১৩ জনের মধ্যে ভাই নাজমুল ও সাধনারও মৃত্যু ঘটে। সাধনার প্রবাস জীবনের স্বপ্ন হয়ে উঠে শুধুই স্মৃতি।