মা, তোমায় ভালোবাসি

রাখী গোপাল দেবনাথ ।।

আজ বিশ্ব মা দিবস! সবাই মা’কে ভালোবাসার একটা দিন পেল। নির্দিষ্ট এই দিনে একদিন মা’কে ভালোবাসব। সবার দলে আমিও আছি।

মায়ের অবদান কি একদিনের জন্য! মা কি আমাদের একদিনে বড় করেছেন। মাতৃগর্ভ থেকে মাকে জ্বালানো শুরু করে শেষ করি মৃত্যুর পর সম্পদ ভাগাভাগির মাধ্যমে।

লেখকের মা বীণা রাণী দেবনাথ

মা সম্পদ, কিন্তু এর ভাগ করা যায় না। মায়ের উপার্জনের টাকায় আমরা বিলাসিতা করতে পারি; কিন্তু শেষ বয়সে মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর চিন্তা করি।

রবীন্দ্রনাথের কথাগুলো খুব মনে পড়ছে “তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমা নিশীথিনী-সম॥ মম জীবন যৌবন মম অখিল ভুবন তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম॥ জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি, তব অঞ্চল ছায়া মোরে রহিবে ঢাকি। মম দুঃখ-বেদন মম সফল স্বপন তুমি ভরিবে সৌরভে নিশীথিনী-সম॥”

মা তার জীবন যৌবন সবই ছেলেমেয়েদের জন্য উৎসর্গ করেন। বৃদ্ধ বয়সে সকল দুঃখ বেদনা ভুলে আমাদের সাফল্য আর সমৃদ্ধি কামনা করেন। আর আমরা উল্টোটাই করি! সংসারে বৃদ্ধ মাকে বোঝা মনে করি। তার সকল অবদানকে ভুলে বলি বউ, তুমি রবে নিরবে মম।

পূজোয় ঘুরে বেড়ানো লেখকের পরিবার

গর্ভধারণকারী মা সারারাত জেগে আমাদের সুস্থ করার জন্য সেবা করেছেন। মা আজ আমাদের সম্পদ হিসেবে রূপান্তর করেছেন। আমরা বলি তোমার সম্পদ কোথায়? আমাদের জন্য তো কিছুই রাখনি। ভুলে গেছি মায়ের সম্পদ তো আমরাই। মায়ের শেষ ঠিকানা তো আমরাই। ধর্মের কথা বাদই দিলাম। ধর্মের কথা অনুযায়ী কাজ করলে তো মাথার ওপরে রাখতে হবে। ধর্ম-কর্ম বাদ দিলেও “মা” তোমার অবদান বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না।

মনে রাখব “তুমি যে জলরেখা সৃষ্টি করেছ তা নষ্ট করলে আমারও অস্থিত্ব নষ্ট হবে। মা আমি তোমায় ভালবাসি।”

কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হই। বছরের ৩৬৫ দিনই মায়ের পদতলে সমর্পণ করি। তাহলে মাকে মনে করার জন্য বিশেষ দিন থাকবে না। মায়ের ভরণ-পোষণের জন্য হাইকোর্ট স্ব-প্রণোধিত হয়ে রুল জারি করবে না। কোন বৃদ্ধাশ্রম থাকবে না। কোন প্রতিষ্ঠান মা’র কষ্টকে নিয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্যর ছবি তৈরি করে টিআরপি বাড়াবে না। মায়ের পায়ের চিহ্ন থাকবে মাথার ওপর।

লেখক : প্রবাসী, বুসান, দক্ষিণ কোরিয়া।

Similar Posts

error: Content is protected !!