বিশেষ প্রতিনিধি ।।
জামাতে চেয়ারে বসে নামাজ আদায়কে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে শালার পক্ষের লোকজনের অতর্কিত হামলায় দুলাভাইয়ের বাড়িঘর ভাংচুরসহ লুটতরাজের অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার ৩০ জুন জুমার নামাজের পর উপজেলার কারপাশা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, নিকলী উপজেলার কারপাশা উত্তরহাটি জামে মসজিদের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক গোলাম মস্তুফা ওরফে আশরাফ আলী মাস্টারের সাথে তারই চাচাত শালা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সম্পাদক কারপাশা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী মো. মশিউর রহমানের পারিবারিক বিরোধ চলছিলো। এই বিরোধের জেরে মাসচারেক আগে আহত হয় গোলাম মস্তুফা আশরাফ আলী মাস্টার। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেও ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন তিনি। নামাজ আদায় করেন চেয়ারে বসে। গত বৃহস্পতিবার মসজিদে নামাজ আদায়কালে আশরাফ আলী মাস্টারের চেয়ারে বসা নিয়ে চড়াও হয় শালা লাল মিয়ার সমর্থকরা। উপস্থিত মুসল্লিরা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ওই দিন রাত ১০টায় লাল মিয়া সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আশরাফ আলী মাস্টারের বাড়ি ঘেরাও করে। ভয়ে আশরাফ আলী মাস্টার ও তার পরিবারের লোকজন ঘরেই অবস্থান করে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ঘরের বেড়া ভাংচুরের চেষ্টা করে পরের দিন আক্রমণের হুমকি দিয়ে চলে আসে ঘেরাওকারীরা।
পরদিন সকালে মসজিদের ইমাম এমএ আবদুল্লাহকে পালিয়ে যেতে হুমকি দেয় তারা। দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে লাল মিয়ার লোকজন মসজিদ ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়ার খবর পেয়ে ভয়ে আশরাফ আলী মাস্টারের পক্ষের কেউ জুমা আদায় করতে মসজিদে যায়নি। লাল মিয়া পক্ষের নতুন এক ইমামের নেতৃত্বে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে পূর্বপরিকল্পনা মতো লাল মিয়া পক্ষের অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য ইসরাফিল (৫৩), তার ছেলে ছুটিতে থাকা পুলিশ সদস্য মাসুদ (২৮), জাহাঙ্গীর (২৫), ফাইজুল (৩০), ইসলাম (৩৫), কিবরিয়া (২৫), জাহাঙ্গীর (২৮)সহ শতাধিক লোক দা, কিরিচ, টেঁটা ও পিস্তল নিয়ে আশরাফ আলী মাস্টারের বাড়িঘরে অতর্কিত আক্রমণ চালায়।
বাড়ির বন্ধ গেট ভাঙ্গার চেষ্টা করে। কিছু লোক আশরাফ আলী মাস্টারের পক্ষের ইসহাক (৪০)-এর রাস্তার পাশের বসতঘরটি কুপিয়ে তছনছ করে। এ সময় ঘরে ঘুমিয়ে থাকা ইসহাকের দুই সন্তানকে উদ্ধার করতে তার গর্ভবতী স্ত্রী কুলসুম এগিয়ে এলে তার তলপেট লক্ষ্য করে দা দিয়ে কোপ দেয় একজন। কোন রকম সরে গিয়ে সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় কুলসুম। কাটা বেড়ার ফাঁক গলে বাড়িতে ঢুকার সময় ইসহাকের ঘরের নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। দুই দিক থেকে বাড়িতে প্রবেশ করে অপরাপর ঘরে কুপিয়ে তছনছ করে। প্রতিটি ঘরে ঢুকে বাড়ির লোকজনকে খুঁজতে থাকে আক্রমণকারীরা। তাণ্ডবে বাড়ির শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা পালিয়ে গেলেও অসুস্থ্য আশরাফ আলী মাস্টারকে ঘরে পেয়ে বিছানা থেকে ফেলে দেয় হামলাকারীরা। বুকে পিস্তল ঠেকায় মাসুদ, তার স্ত্রীকে ঠেলে ফেলে দিয়ে গলায় কিরিচ ঠেকিয়ে মারধোর করে কয়েক হামলাকারী। ঘরে থাকা নগদ ২ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে বলে আশরাফ আলী মাস্টার জানায়। তিনি এ প্রতিনিধিকে আরো জানান, ওদের ভয়ে বাড়িছাড়া সবাই। বাড়িতে থাকা একমাত্র পুরুষ আমি অসুস্থ্য বলে এখন পর্যন্ত অভিযোগ নিয়ে থানায় যেতে পারছি না।
মো. মশিউর রহমান ভূইয়া ওরফে লাল মিয়া বলেন, ঘটনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। শুনেছি আমাদের লোকজন মসজিদ থেকে বের হবার সময় আশরাফ আলী মাস্টারের লোকজন আক্রমণ করেছে। ৩ জনকে রক্তাক্ত আহত করেছে।
নিকলী থানার অসিার ইনচার্জ মো. নাসির উদ্দিন ভূইয়া জানান, এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেবো।