আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ-নীতি এখনো স্পষ্ট নয়। দক্ষিণ এশিয়া নীতি ঘোষণার আগে তা স্পষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তবে এরই মধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তার প্রশাসনের কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখানো হয় গত ৬ জুন। এর আগে ২ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ২০১৫ সালে সই হওয়া প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সবুজ এবং নিরাপদ পৃথিবী তৈরির বৈশ্বিক প্রক্রিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় একটি দেশ বের হয়ে যাওয়া দুঃখজনক। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। বাংলাদেশ তার বন্ধু ও অংশীদারদের সাথে মিলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্পদ আহরণ করবে।”
প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৮৭টি দেশ মিলে অঙ্গীকার করেছিল বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটে বাংলাদেশ-নীতির প্রতিফলন
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম বাজেটে বাংলাদেশকে দেয়া আর্থিক সহায়তার পরিমাণ কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ২১ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল। ট্রাম্পের পররাষ্ট্র দফতর তা কমিয়ে ২০১৮ সালের জন্য বাংলাদেশকে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার আর্থিক সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব করেছে। মার্কিন বাজেট প্রস্তাবনায় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সব সামরিক অনুদান বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সচল রাখার জন্য নতুন করে ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে জঙ্গিবাদ দমনে অ্যান্টি-টেরোরিজম অ্যাসিসট্যান্স হিসেবে বাংলাদেশকে ৩০ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে শক্তিশালী করতে তা কাজে লাগানো হবে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য খাতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ আর্থিক বরাদ্দ পেয়েছে সাত কোটি ৯০ লাখ ডলার। ট্রাম্প প্রশাসন এ খাতেও বড় রকমের কাটছাঁটের প্রস্তাব করেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশকে তিন কোটি ৬৭ লাখ ডলার আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাস্থ্য খাতে এটাই সবচেয়ে বড় মার্কিন সহায়তা। প্রস্তাবনায় দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত।
২০১৬ সালে বাংলাদেশে সামরিক খাতে আর্থিক বরাদ্দ ছিল ২০ লাখ ডলার। এবার সামরিক খাতে সব সহায়তা বন্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সামরিক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার জন্য ১৫ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অপরদিকে, ২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশের জন্য আর্থিক সহায়তা ও উন্নয়ন তহবিলে (ইকোনমিক সাপোর্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফান্ড- ইসিডিএফ) ৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৬ সালে এ খাতে কোনও বরাদ্দ ছিল না।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা স্থিতিশীল এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য ইসিডিএফ খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ট্রাম্প পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রীয় অংশে রয়েছে এ অঞ্চলের ‘রেডিক্যাল ইসলামিক টেরোরিজম’ বা উগ্রবাদী ইসলামী সন্ত্রাস দমন। এক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের দক্ষিণ এশীয় কূটনীতিতে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রচলিত ভূমিকার চেয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পাবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দের খাত দেখলে তা স্পষ্ট হয়।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বাজেট ১০০ কোটি মার্কিন ডলার কমানোর প্রস্তাব করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে মিশনের চার ভাগের এক ভাগ খরচ বহন করে দেশটি। ফলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন হুমকিতে পড়তে পারে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট কমানোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে জাতিসংঘের পক্ষে মানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেয়া একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
আর এই কারণে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বর্তমানে পুলিশসহ বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ৭ হাজার ১২৯ জন কর্মরত আছেন। জাতিসংঘ মিশনে সেনাবাহিনীর ৪ হাজার ৯২৬ জন, নৌবাহিনীর ৫২৪ জন, বিমান বাহিনীর ৬৩৯ জন এবং পুলিশ বাহিনীর এক হাজার ৪০ জন সদস্য রয়েছেন। বাংলাদেশি বাহিনী বর্তমানে জাতিসংঘের ৯টি মিশনে কাজ করছে। মিশনগুলো হলো মোনুস্কো (ডি আর কঙ্গো), ইউনোসি (আইভরিকোস্ট), আনমিল (লাইবেরিয়া), ইউনিফিল (লেবানন), আনমিস (দক্ষিণ সুদান), ইউনামিড (সুদান-দারফুর), মিনারসো (ওয়েস্টার্ন সাহারা), মিনুসমা (মালি) ও মিনুস্কা (সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক)।
অভিবাসন নীতি
২৭ জানুয়ারি সাত মুসলিম দেশ ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন ট্রাম্প, যা ওইদিন থেকেই কার্যকর হয়। এতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। আন্দোলন শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরেও। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। ওই নিষেধাজ্ঞার কবলে বাংলাদেশ না পড়লেও অভিবাসন নীতি এবং ভিসা নীতির কারণে বাংলাদেশের নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সীমান্ত শুল্ক এবং টিপিপি
ট্রাম্পের সীমান্ত শুল্ক (বর্ডার ট্যাক্স) পরিকল্পনা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে নতুন এক আশঙ্কা তৈরি করেছে। আর আশঙ্কার কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সীমান্ত শুল্ক (বর্ডার ট্যাক্স) পরিকল্পনা। তার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটা যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে পোশাক শিল্প আরও বেশি শুল্ক প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এখনো চালু না হলেও নির্বাচনি প্রচারণার সময় ট্রাম্প যেসব বড় পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন তার মধ্যে সীমান্ত কর পরিকল্পনা একটি। ১৭ মাসের নির্বাচনি প্রচারণার সময় আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ সীমান্ত শুল্ক আরোপের কথা বলেছিলেন তিনি। এ পরিকল্পনার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কোম্পানি পণ্য আমদানি করবে তাদেরকে সীমান্তে শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।
যদি শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবিত সীমান্ত শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে অন্য দেশগুলের মতো বাংলাদেশও ভুক্তভোগী হবে। বাংলাদেশ একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে এখন ১৬ ভাগের কম শুল্ক দিতে হয়। তখন শুল্ক দিতে হবে ৪০ ভাগ।
বর্তমানে মার্কিন খুচরা বিক্রেতাদেরকে বাংলাদেশ থেকে পোশাক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। আর বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ পণ্য রফতানি হয় তার ৯৫ ভাগই পোশাক পণ্য। যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিকারকদেরকে চীন থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ, ভিয়েতনাম থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ভারত থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ২ দশমিক ২৯ শতাংশ, তুরস্ক থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়।
তুলনা করলে এখনই বাংলাদেশি পোশাকের ওপর শুল্ক অনেক বেশি। তাই সীমান্ত শুল্ক অনেক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে। অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে যাবে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রসহ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশ ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি অনুস্বাক্ষর করেনি। দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিনা শুল্ক সুবিধার কথা উল্লেখ রয়েছে এই চুক্তিতে। দীর্ঘ আলোচনার পর ২০১৫ সালে চুক্তিটি সই হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলো হলো– অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ব্রুনাই দারুস সালাম, ক্যানাডা, চিলি, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম। দেশগুলো বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্যের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
হোয়াইট হাউজে প্রথম দিনই টিপিপি বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই মোতাবেক চুক্তিটি বাতিলও করেছেন তিনি।
ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের অন্যতম বড় বাজার। আবার একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রেই বেশি পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ট্রাম্পের শাসনামলে সেই রপ্তানিখাত প্রভাবিত হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
সম্পর্ক কোন পথে?
গত নভেম্বরে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেডিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে রুটিন বা দৈনন্দিন কার্যক্রমের বাইরে কোনো নতুনত্ব চোখে পড়েনি। গত কয়েক মাসে রুটিন কাজের বাইরে দুই দেশ টিকফা বৈঠক করেছে। সেখানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্র দাবি করেছে।
তবে গত ২১ মে সৌদি আরবে আরব ইসলামিক আমেরিকান সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে শেখ হাসিনা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। ওই সময় শেখ হাসিনা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তখন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সৌজন্য বিনিময় করেছেন। এরই এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। উত্তরে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি আশা রাখি, বাংলাদেশে যাবো।।”
বিশ্লেষকরা যা বলছেন
এখন পর্যন্ত এশিয়ার চীন ও ভারতের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনেক দেশেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেশিরভাগ কর্মকর্তাও এখনও নিয়োগ পাননি। ট্রাম্প প্রশাসন এখনও তাদের এশিয়া নীতি তৈরি করেনি। ট্রাম্পের এশিয়া নীতি কী হবে এবং সেই নীতি পরিচালনার জন্য কাদের নিয়োগ দেয়া হবে সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়।
আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ দক্ষিণ এশিয়া নীতির একটি অংশ বাংলাদেশ। যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই নীতি সবার কাছে পরিষ্কার হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে নতুন উদ্যোগের জন্য। ট্রাম্প কিছুদিন আগে সৌদি আরব সফর করেছেন এবং তার মধ্যপ্রাচ্য নীতির বিষয় অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী কিছুদিনের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা আছে। এই সফর হলে ওয়াশিংটন হয়তো তার বৃহৎ দক্ষিণ এশিয়া নীতি তৈরি ও বাস্তবায়ন শুরু করবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং কুটনীতিক মোহাম্মদ জমির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যারই সমাধান করে উঠতে পারেনি। অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান করেই না আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে কাজ করবে। তবে এরই মধ্যে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন। জি-৭ এ গেছেন। ন্যাটোতে গেছেন। ইসরায়েলে গেছেন। জাপান ও চীনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যুক্তরাষ্ট্র যাবেন কিছুদিন পরে। তখন হয়তো দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে কথাবার্তা হবে। তবে এখন পর্যন্ত যা মনে হচ্ছে, তাতে সন্ত্রাস দমনই ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান এজেন্ডা। তাতে বাংলাদেশও প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা যায়।”
আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত কিছু সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কার কথা বলা যায়। এর মধ্যে ভিসা ও অভিবাসন নীতি, বাংলাদেশের জন্য অর্থ সহায়তা কমানো, জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানো, জাতিসংঘ শান্তি মিশনের বাজেট প্রত্যাহার ইত্যাদি। তবে এখনো ট্রাম্প প্রশাসনের দক্ষিণ এশিয়া নীতি স্পষ্ট নয়। তারা ওবামা প্রশাসনের দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাপারে প্রাইভেট নীতি বহাল রাখবে বলে মনে হয় না। দক্ষিণ এশিয়া নীতি স্পষ্ট হলে তবেই বাংলাদেশ নীতির কথা আসবে।”
তিনি আরো বলেন, ‘‘চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রো নীতি, ভারত মহাসাগর এবং কাতারকে নিয়ে উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে প্রভাব ফেলবে। ভারত এবং চীনকে মাথায় রাখছে মার্কিন প্রশাসন।”
মোহাম্মদ জমিরের মতো তারেক শামসুর রহমানও মনে করেন, ‘‘ট্রাম্প প্রশাসন জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনকে যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ বাইরে থাকবে না। বাংলাদেশ ট্রাম্প প্রশাসনের নজরদারি এবং মনিটরিং-এ থাকবে।”
সূত্র : ট্রাম্পের আমলে কেমন থাকবে বাংলাদেশ? [ডয়চে ভেলে, ২৪ জুন ২০১৭]