নিকলী উপ-নির্বাচন, শেষ মুহূর্তের হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত প্রার্থীরা

তাফসিলুল আজিজ ।।

নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নবীন- প্রবীণ দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াই জমে উঠেছে। ভোটারদের ধারণা এবার এ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

আগামী ১৩ জুলাই অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন দুইজন প্রার্থী। তাঁরা হলেন, আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ইউনিয়নটির সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান কারার বুরহান উদ্দিনের ছেলে নিকলী উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি কারার শাহরিয়ার আহমেদ (নৌকা) এবং বিএনপি প্রার্থী দলটির উপজেলা সহসভাপতি ডা. কফিল উদ্দিন আহম্মদ (ধানের শীষ) নির্বাচনী মাঠে লড়াই করছেন।

সরেজমিনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, নেতা-কর্মী এবং ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এবং নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য নানা উন্নয়নমূলক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দল থেকে আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থীর বয়স অনেক কম হওয়ায় দলের অনেকেই এটা মেনে নিতে পারেননি। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রকাশ্যে না হলেও দলের অনেকেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িত। অপরদিকে দুই বারের পরাজিত বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে অনেকটা সহানুভূতি থেকেই দলীয় কোন্দল উপেক্ষা করে সবাই এক হয়ে তাঁর পক্ষে কাজ করছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা কারার বুরহান উদ্দিন এই ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ চেয়ারম্যান ছিলেন। এ বছরের ১৯ মে তিনি মারা যান। সে জন্য দল থেকে তাঁর ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি কারার শাহরিয়ার আহমেদকে মনোনয়ন দেয়া হয়।

ইউনিয়নটির মোহরকোনা, পূর্বগ্রাম, নতুন বাজার, ষাইটধার, গোবিন্দপুর, পাঁচরুখি ও কুর্শা এলাকার প্রায় ২৫-৩০ জন ভোটারের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির প্রার্থী ডা. কফিল উদ্দিন আহম্মদ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো লড়াই করছেন। সেজন্য অনেকটা সহানুভূতি থেকে নেতা-কর্মীরা ভেদাভেদ ভুলে একাট্টা হয়ে কাজ করছেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নতুন মুখ হওয়ায় ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে অনেক ভোট বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে চলে যেতে পারে।

ইউনিয়নটির ১নং ওয়ার্ডের ভোটার মাহবুব হোসেন, ৩নং ওয়ার্ডের ভোটার জোনায়েদ হোসেন ও ৭নং ওয়ার্ডের ভোটার মো. ছাদির মিয়া বলেন, ‘অতীতে যা-ই হয়েছে, এবার আমরা বুঝে-শুনে ভোট দেব। আমরা দল দেখব না, যে ব্যক্তি এলাকার উন্নয়ন করবে তাঁকেই ভোট দেব।’

সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কারার শাহরিয়ার আহমেদের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, দলের অনেক নেতাই তাঁর বিপক্ষে কাজ করছেন। তবে তিনি দাবি করেন, দলের সব তরুণ নেতা-কর্মী তাঁর সাথে আছেন এবং শেষ পর্যন্ত থাকবেন। নির্বাচনে তাঁর বিকল্প প্রার্থী নেই। কারণ তাঁর বাবা একাধারে তিনবার ক্ষমতায় ছিলেন। তাই তিনি তাঁর বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করতে চান। অন্য কেউ নির্বাচিত হলে তাঁর মতো এলাকার উন্নয়ন করতে পারবে না।

একই দিন বিএনপির প্রার্থী ডা. কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আগের দুটি নির্বাচনের ফলাফল আমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এবার যদি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে আমার জয় সুনিশ্চিত। তবে তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলীয় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। ভোটারদের বিভ্রান্ত ও নানা রকম হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। এবং দলের প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। এ নিয়ে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি।

রিটার্নিং অফিসার ও বাজিতপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। এতে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। বিএনপির প্রার্থীর কাছ থেকে একটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী যেন আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন সেজন্য তাঁকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ইউনিয়নটিতে মোট ভোটার রয়েছেন ২২, ৬৬২জন।

সূত্র : শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে নবীন-প্রবীণের লড়াই  [কিশোরগঞ্জ নিউজ, ১১ জুলাই ২০১৭]

Similar Posts

error: Content is protected !!