আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
যাঁরা মানসিকভাবে শক্ত, তাঁদের অভ্যাসও স্বাস্থ্যকর হয়। তাঁরা নিজেদের আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আবার এমন অনেক জিনিস আছে, মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা যা করেন না।
নিজেদের জন্য দুঃখ করে সময় নষ্ট করেন না
মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা বসে বসে ভাবেন না, আমার পরিস্থিতি কতটা খারাপ অথবা অন্যান্যরা আমার সঙ্গে কী রকম ব্যবহার করেছে। তাঁরা নিজেদের জীবনের দায়িত্ব নিজেরাই নেন। তাঁরা বোঝেন যে, জীবন সব সময় সহজ কিংবা ন্যায্য হয় না।
অপরের হাতের পুতুল হয়ে পড়েন না
মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা বলেন না, ‘বস’ আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে বলে আমার মন খারাপ। তাঁরা নিজেদের আবেগ-অনুভূতি নিজের বশে রাখতে পারেন। কাজেই তাঁরা নিজেদের প্রতিক্রিয়া নিজেরাই নির্ধারণ করতে পারেন।
পরিবর্তনে ভয় পান না
মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা সবরকম পরিবর্তন এড়ানোর চেষ্টা করেন না। বরং তাঁরা ইতিবাচক পরিবর্তনকে স্বাগত জানান। তাঁরা নিজেরাও নমনীয় হতে প্রস্তুত। তারা জানেন যে, পরিবর্তন আসবেই এবং সেই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তাঁদের আছে।
যা নিয়ন্ত্রণে নেই, তা নিয়ে মাথা ঘামান না
মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা বিমানযাত্রায় লাগেজ হারানো কিংবা রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যাম নিয়ে অনুযোগ করেন না। বরং তাঁরা জানেন যে, যে বস্তুটি তাঁরা সত্যিই নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, সেটা হলো তাঁদের নিজেদের মনোভাব।
অন্যদের খুশি রাখা নিয়ে চিন্তিত নন
মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা জানেন যে, সকলকে খুশি করা সম্ভব নয়। কাজেই তাঁরা ‘না’ বলতে কিংবা নিজের মত প্রকাশ করতে ভয় পান না। তাঁরা সদয় থাকার এবং ন্যায়বিচার করার চেষ্টা করেন, কিন্তু অন্য লোকেরা অখুশি হলে সে পরিস্থিতিও সামাল দিতে জানেন।
পরিকল্পিতভাবে ঝুঁকি নিতে ভয় পান না
তবে তাঁরা না-ভেবে-চিন্তে নির্বোধের মতো ঝুঁকি নেন না। মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব দিক তলিয়ে দেখেন। কোনো কিছু করার আগেই তাঁরা জানেন, তার ফলশ্রুতি কী হতে পারে।
অতীত নিয়ে পড়ে থাকেন না
মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা শুধু এই ভেবে সময় নষ্ট করেন না, অতীতে কী হয়েছে, বা অন্যরকম হলে কেমন হতো। তাঁরা অতীতকে মেনে নিয়ে দেখেন, অতীত থেকে কী শেখা যায়। কিন্তু তাঁরা অতীতের জয়পরাজয় নিয়ে দিবাস্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন দেখেন না। বরং তাঁরা বর্তমানে বেঁচে থাকেন আর ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করেন।
একই ভুল বার বার করেন না
মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা নিজেদের কৃতকর্মের পূর্ণ দায়িত্ব নেন। ফলে তাঁরা বার বার একই ভুল করেন না। বরং তাঁরা এগিয়ে যান, ভবিষ্যতের জন্য আরো ভালো সিদ্ধান্ত নেন।
অন্যের সাফল্যে ঈর্ষা বোধ করেন না
মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা পরের সাফল্যেও খুশি হতে জানেন। অন্যের ভালো হলে তাঁদের হিংসে হয় না। বরং তাঁরা জানেন, সাফল্য পেতে হলে পরিশ্রম করতে হয়। তাঁরা নিজেরাও সেভাবে পরিশ্রম করতে রাজি।
একবারের চেষ্টাতেই হাল ছাড়েন না
একবার পারলেন না বলেই যে আর কোনোদিন পারবেন না, এমনটা ভাবেন না তাঁরা। মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা অসাফল্যকে ব্যবহার করেন ভবিষ্যৎ সাফল্যের সোপান হিসেবে। যতদিন না পারছেন, চেষ্টা চালিয়ে যান তাঁরা।
একা থাকতে ভয় পান না
মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা একা থাকতে ভয় পান না। নিঃশব্দতাতেও তাঁদের কোনো শঙ্কা নেই। তাঁরা নিজেদের ভাবনাচিন্তা নিয়ে একলা থাকতে পারেন, এমনকি সেই সময়টুকুর সদ্ব্যবহার করতে পারেন। তাঁরা নিজেদের সঙ্গ নিয়েই খুশি, সবসময় অপরাপর সঙ্গী কিংবা মনোরঞ্জনের কোনো প্রয়োজন নেই তাঁদের। একা থেকেও হাসি-খুশি থাকেন তাঁরা।
দুনিয়া কি দিল না দিল, তা নিয়ে দুঃখী নন
তাঁদের যে দুনিয়ার কাছ থেকে কিছু পাওনা আছে, এমনটা ভাবেন না মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা। অন্যেরা যে তাঁদের জন্য কিছু করবে, সে প্রত্যাশাও নেই তাঁদের। বরং তাঁরা নিজেদের ক্ষমতা ও সুযোগ অনুযায়ী কাজ করে যান।
হাতে হাতে সাফল্য আশা করেন না
ফিটনেস কিংবা বিজনেস, কোনোক্ষেত্রেই চটজলদি সাফল্য প্রত্যাশা করেন না মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা। বরং তাঁরা তাঁদের সময় ও কর্মক্ষমতা সঠিকভাবে প্রয়োগ করেন। তাঁরা জানেন যে, বাস্তবিক পরিবর্তন আসতে সময় লাগে।
সূত্র : মানসিকভাবে শক্ত মানুষেরা যা করেন না [ডয়চে ভেলে, ২২ ডিসেম্বর ২০১৫]