সুমন চৌধুরী ।।
ইতিহাসে এই প্রথম ভোটাধিকার পাচ্ছেন সৌদি আরবের নারীরা। ভোটার হিসেবে নারীদের নিবন্ধন করানো হচ্ছে। সৌদি সমাজব্যবস্থায় এটি একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন, যা এত দিন ছিল শুধুই কল্পনা।
এ বছরের ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সৌদি আরবের পৌরসভা নির্বাচন। দেশজুড়ে একই দিনে পৌরসভা নির্বাচন হয়। যে কারণে এই নির্বাচনকে দেশটির জাতীয় নির্বাচন বলা হয়। এবারের নির্বাচনে ভোট দেবেন সৌদি নারীরা।
শুধু ভোটার হিসেবে নয়, অধিকারের আওতা আরো একটু বাড়ছে সৌদি নারীদের। তারা নির্বাচনে প্রার্থীও হতে পারবেন। অর্থাৎ এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসবেন নারীরা। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সৌদি আরবের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
সৌদি আরবে রাজতন্ত্র থাকায় রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো সুযোগ পাবেন না কেউ। তবে রাজতন্ত্রের অধীনে স্থানীয় প্রশাসন পরিচালনায় এখন থেকে অংশ নিতে পারবেন নারীরা। যে কারণে নারীদের ভোটাধিকার পাওয়াকে ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা বা রাজনৈতিক অধিকার’ বলা হচ্ছে না। তবে রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারীদের এই অন্তর্ভুক্তি সৌদির নারীদের অধিকার আদায়ের পথে হাঁটতে শেখাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইসলামি শরিয়্যাহ অনুযায়ী নারীদের নেতৃত্ব দেওয়ার যে বিধান রয়েছে সৌদি রাজতন্ত্রে তা অনুসরণ করা হচ্ছে। ২০১১ সালে পৌরসভা নির্বাচনের সময় প্রয়াত বাদশা আবদুল্লাহ ঘোষণা করেন, শরিয়্যাহ মোতাবেক নারীদের অধিকার রক্ষা করা হবে, তারা ভোট দিতে পারবে। এমনকি নির্বাচনে প্রার্থীও হতে পারবে।
২০১১ সালের পর এই প্রথম নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে বাদশা আবদুল্লাহর ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ভোটার হওয়ার জন্য নিবন্ধন করানো হচ্ছে। ২২ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে নারী ভোটাrরদের নিবন্ধন করানো হবে। তবে মক্কা ও মদিনায় নিবন্ধনের কাজ শুরু হয়েছে ছয় দিন আগে, রোববার থেকে।
সৌদি গেজেট অনুযায়ী, রোববার মক্কা ও মদিনায় যে দুজন নারী প্রথম ভোটার হয়েছেন, তারা হলেন- সানিফাজ আবু আল-শামাত (মক্কা) এবং জামাল-আল সাদি (মদিনা)। তার দুজন সৌদি আরবের ইতিহাসে প্রথম ভোটার। তবে আল-শামাত বলেছেন, ‘তিনি স্থির করেছেন, ভোটকেন্দ্রে তিনিই প্রথম প্রবেশ করবেন।’
এদিকে আলজাজিরা জানিয়েছে, এবারের পৌরসভা নির্বাচনে প্রায় ৭০ জন নারী প্রার্থী লড়বেন। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন ম্যানেজার হিসেবে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে ৮০ জন নারীর।
নারী-পুরুষের অংশগ্রহণমূলক একটি সমাজের দিকে যাত্রা করতে হাজার হাজার বছর কেটে গেছে সৌদি আরবের। নারীদের এই ভোটাধিকারকে সৌদির রাষ্ট্রব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন মনে করা হলেও আন্তর্জাতিক অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, দেশটিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ এখনো বহু দূর। কিন্তু ২০১১ সালে বাদশা আবদুল্লাহ বলেছিলেন, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সুরা কাউন্সিলেও নারীদের রাখা হবে। শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা-ই এখন দেখার বিষয়।