তেলাকুচা বা কুচিলার ঔষধি গুণাগুণ

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

তেলাকুচা একটি লতানো উদ্ভিদ। এটি গাঢ় সবুজ রঙের নরম পাতা ও কাণ্ডবিশিষ্ট একটি লতাজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। লতার কাণ্ড থেকে আকশীর সাহায্যে অন্য গাছকে জড়িয়ে উপরে উঠে। পঞ্চভূজ আকারের পাতা গজায়, পাতা ও লতার রং সবুজ।

তেলাকুচা, বসতবাড়ির আশেপাশে, রাস্তার পাশে, বন-জঙ্গলে জন্মায় এবং বংশবিস্তার করে। সাধারণত বাংলা চৈত্র-বৈশাখ মাসে তেলাকুচা রোপন করতে হয়। পুরাতন মূল শুকিয়ে যায় না বলে গ্রীস্মকালে মৌসুমী বৃষ্টি হলে নতুন করে পাতা গজায় এবং কয়েক বছর ধরে পুরানো মূল থেকে গাছ হয়ে থাকে। শীতকাল ছাড়া সব মৌসুমেই তেলাকুচার ফুল ও ফল হয়ে থাকে। ফল ধরার ৪ মাস পর পাকে এবং পাকলে টকটকে লাল হয়। অবহেলিত এ লতা জাতীয় গাছটি অত্যন্ত উপকারী। আসুন জেনে নিই এর ঔষধি গুণ।

ডায়াবেটিস : ডায়াবেটিস হলে তেলাকুচার কাণ্ড সমেত পাতা ছেঁচে রস তৈরি করে আধাকাপ পরিমাণ প্রতিদিন সকাল ও বিকালে খেতে হবে। তেলাকুচার পাতা রান্না করে খেলেও ডায়াবেটিস রোগে উপকার হয়।

জন্ডিস : জন্ডিস হলে তেলাকুচার মূল ছেঁচে রস তৈরি করে প্রতিদিন সকালে আধাকাপ পরিমাণ খেতে হবে।

পা ফোলা রোগে : গাড়িতে ভ্রমণের সময় বা অনেকক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসলে পা ফুলে যায় একে শোথ রোগ বলা হয়। তেলাকুচার মূল ও পাতা ছেঁচে এর রস ৩-৪ চা চামচ প্রতিদিন সকালে ও বিকালে খেতে হবে।

শ্বাসকষ্ট : বুকে সর্দি বা কাশি বসে যাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট (হাপানি রোগ নয়) হলে তেলাকুচার মূল ও পাতার রস হালকা গরম করে ৩-৪ চা চামচ পরিমাণ ৩ থেকে সাত দিন প্রতিদিন সকালে ও বিকালে খেতে হবে।

কাশি : শ্লেষ্মাকাশি হলে শ্লেষ্মা তরল করতে এবং কাশি উপশমে ৩-৪ চা চামচ তেলাকুচার মূলও পাতার রস হালকা গরম করে আধা চা-চামচ মধু মিশিয়ে ৩ থেকে ৭ দিন প্রতিদিন সকালে ও বিকালে খেতে হবে।

শ্লেষ্মাজ্বর : শ্লেষ্মাজ্বর হলে ৩-৪ চা চামচ তেলাকুচার মূলও পাতার রস হালকা গরম ২-৩ দিন সকাল- বিকাল খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে তেলাকচুর পাতার পাটায় বেটে রস করতে হবে।

বুকে দুধ স্বল্পতা : সন্তান প্রসবের পর অনেকের বুকে দুধ আসে না বা শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এ অবস্থা দেখা দিলে ১টা করে তেলাকুচা ফলের রস হালকা গরম করে মধুর সাথে মিশিয়ে তেলাকচুর পাতা একটু তিতে হওয়ায় পরিমাণমত সকাল-বিকাল ১ সপ্তাহ খেতে হবে।

ফোঁড়া ও ব্রণ : ফোড়া বা ব্রণ হলে তেলাকুচা পাতার রস বা পাতা ছেঁচে ফোঁড়া ও ব্রণে প্রতিদিন সকাল-বিকাল ব্যবহার করতে হবে।
আমাশয়: প্রায়ই আমাশয় হতে থাকলে তেলাকুচার মূল ও পাতার রস ৩-৪ চা চামচ ৩ থেকে ৭ দিন প্রতিদিন সকালে ও বিকালে খেতে হবে।

স্তন্য হীনতায় : মা হলেও বুকে দুধ নেই। এদিকে শরীর ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে কাঁচা সবুজ তেলাকুচার ফলের রস একটু গরম করে ছেঁকে তা থেকে এক চা চামচ রস নিয়ে ২/৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে সকালে ও বিকালে ২ বার খেলে ৪/৫ দিনের মধ্যে বুকে দুধ আসবে।

অরুচিতে : সর্দিতে মুখে অরুচি হলে তেলাকুচার পাতা একটু সিদ্ধ করে পানিটা ফেলে দিয়ে ঘি দিয়ে শাকের মত রান্না করেতে হবে। খেতে বসে প্রথমেই সেই শাক খেলে খাওয়াতে রুচি আসবে। এই শাক খেলে পেটের গোলমাল কমে। পেটে সমস্যা এবং বদহজমের জন্য এই শাক খাওয়ার রেওয়াজ আছে। তেলাকুচার ভেষজ গুণ অনন্য। এর পাতা, লতা, মূল ও ফল ব্যবহার করা হয়।

উপকারিতা
* ডায়াবেটিস হলে তেলাকুচার কাণ্ডসহ পাতা ছেঁচে রস আধা কাপ পরিমাণ প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে খেলে উপকার হয়। পাতা ভেজেও খেতে পারেন।
* তেলাকুচার মূল ছেঁচে রস প্রতিদিন সকালে আধা কাপ পরিমাণ খেলে জন্ডিস কমে।
* অনেকক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে যাদের পা ফুলে যায়, তারা তেলাকুচার মূল ও পাতা ছেঁচে রস ৩-৪ চা চামচ প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে খেলে পা আর ফুলবে না।
* বুকে সর্দি বা কাশি বসে যাওয়ার কারণে অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়। তেলাকুচার মূল ও পাতার রস অল্প গরম করে ৩-৪ চা চামচ পরিমাণ ৩ থেকে সাত দিন সকালে ও বিকেলে খেলে সমাধান পাওয়া সম্ভব ।

তেলাকুচা বা কুচিলা (নিকলীর অনেকে এটিকে কুইচ্চালা হিসেবে চেনেন)

সংগৃহীত

Similar Posts

error: Content is protected !!