আজিজুল হক বিপুল, মহাস্থান (বগুড়া) প্রতিনিধি ।।
ফলের মৌসুম জ্যৈষ্ঠ। মধু মাস শেষ। তারপরেও চারদিকে মৌসুমী ফলের মৌ মৌ সুগন্ধে একাকার। আর এই গন্ধের প্রতিযোগিতায় সব ফলকে বিলুপ্তিতায় ফেলে এখন এগিয়ে জাতীয় ফল কাঁঠাল। এমন চিত্রই মিললো জমে উঠা বগুড়ার প্রসিদ্ধ মহাস্থানের কাঁঠাল হাট।
রমজান মাস জুড়ে পানির দরে কাঁঠাল বিক্রি করা দেখা গেলেও এখন কাঁঠালের দাম অনেক বেশি। দেশের কাঁঠাল উৎপাদনকারী অনেক অঞ্চলের নাম শোনা গেলেও এর মধ্যে মহাস্থান অন্যতম। এখানে আশেপাশের ৮/১০ গ্রামের গৃহস্থ ও কাঁঠাল ব্যবসায়ী, চাষিদের কাঁঠালে ভরপুরে জমজমাট থাকে। প্রতিদিন এখানকার ১০ থেকে ১২ ট্রাক কাঁঠাল যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়।
আগের দিনেই ব্যাপারী, পাইকার, আড়ৎদাররা ভীড় জমায় এখানকার কাঁঠাল হাটে। সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এ হাটে কাঁঠাল কেনাবেচা হয়। বগুড়া সদর উপজেলার গোকুল ইউনিয়নের আটোবালা গ্রামের সবচেয়ে বড় কাঁঠাল হাটে বিক্রি করতে আসা চাষি লুৎফর রহমান জানান, তার ৭টি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। তার গাছের বাছাইকৃত ১৮টি কাঁঠাল ৩৬শ’ টাকা বিক্রি করলেন।
ভ্যানবোঝাই করে কাঁঠাল নিয়ে আসা আরেক ব্যবসায়ী শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা গ্রামের রিপন মিয়া জানান, প্রতিদিন তারা গ্রাম-গঞ্জ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ করে মহাস্থান হাটে সরবরাহ করে থাকেন। প্রতি পিস কাঁঠাল সাইজ অনুসারে ৪০/৫০ টাকা পর্যন্ত তার লাভ হয়।
মহাস্থান হাটে কাঁঠাল সংগ্রহ করতে সুদূর সিলেট, নোয়াখালী, ফেনি, শরীয়তপুর, বরিশাল, কাঁচপুর ও কুমিল্লা থেকে এসেছে বেপারীরা। এদের মধ্যে কুমিল্লার খলিলুর রহমান জানান, এই এলাকাতে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠালের চাষ হয়। তাই মৌসুম জুড়ে অনেক কাঁঠাল পাওয়া যায় বলে কুমিল্লা থেকে এসে ট্রাকভর্তি করে কাঁঠাল কিনে নিয়ে যান।
স্থানীয় আড়ৎ ব্যবসায়ী রহেদুল ইসলাম ও রেজা মিয়া জানান, দেশের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে বেপারীরা মহাস্থানহাটে কাঁঠাল কিনতে আসে। এরা আগের দিনে বিভিন্ন আড়ৎ, আবাসিক বোর্ডিং অথবা ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তারা আমাদের মাধ্যমে কমিশনে কাঁঠাল কিনে ট্রাক লোড দিয়ে নিজ গন্তব্যে যায়। মহাস্থান হাট থেকে কিনে তাদের এলাকায় প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। ট্রাকপ্রতি ১২ থেকে ১৩শ’ পর্যন্ত কাঁঠাল নেয়া হয়। দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি।
এদিকে বেশ কয়েজন স্থানীয় আড়ৎ ব্যবসায়ী আক্ষেপ করে বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা কাঁঠাল কিনতে আসেন। যেখানে কাঁঠাল হাট বসে সেখানে বৃষ্টির পানিতে কাদায় পরিণত হয়। এক ট্রাক কাঁঠাল কিনলে ২৫শ’ টাকা হাটের খাজনা বাবদ ইজাদারদের দিতে হয়। যা থেকে সরকার রাজস্ব পায়। অথচ কর্তৃপক্ষ এই অসুবিধাগুলো নিরসন করে না। হাট কর্তৃপক্ষ যদি মহাস্থান কাঁঠাল হাটের প্রশস্ত বাড়ায় তাহলে আগামীতে মহাস্থান কাঁঠাল হাটের সুফল বাড়বে।