হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ২১

শেখ মোবারক হোসাইন সাদী ।।

“হাওর”। একটি বিস্তৃত জলরাশি এলাকাকে বোঝায়। “হাওর” “সাগর” শব্দের আঞ্চলিক অপভ্রংশ‌। সাগরের অন্যতম প্রতিশব্দ “সায়র”। আর সাগরের দন্ত্য-স’র উচ্চারণে আসাম কামরূপ ভাষায় “হ” করা হয়ে থাকে। তাই সাগর থেকে “হাওড়” এবং আঞ্চলিক উচ্চারণ সুবিধার্থে “হাওর” নামে খ্যাত। কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী, অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন হাওর সুভাষিত উপজেলা। সেই সাথে বাজিতপুর, কটিয়াদী, করিমগঞ্জ, ভৈরব উপজেলার পূর্ব প্রান্তে রয়েছে হাওর। বর্ষার প্লাবনে সৃষ্ট বিস্তৃত জলরাশি যা দেখতে অনেকটা সাগরের প্রতিরূপ। এই হাওরের শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে সোনালী প্রান্তরে রূপ নেয়। দু’চোখ যতদূর যায় শুধু পানি আর পানি থইথই করছে। মাঝে মাঝে গ্রামগুলো ভেসে উঠছে, মনে হচ্ছে কোনো সাগরের মাঝখানে ছোট্ট একটি দ্বীপ।

আর যখন হাওরপাড়ের পানিগুলো কমে যায়, তখন সবুজে সবুজ ভূমি হয়ে যায়। আকাশপথে দেখলেই মনে হবে সেই সবুজের বুক চিরে কিছু নদী বয়ে চলেছে যেন অজগর সাপ। এমনই একটি হাওরে আমার জন্ম। হাওরে আমার বেড়ে ওঠা, আমার জীবন, আমার পথচলা। ধারাবাহিক এই লেখাটির প্রথম পর্বে কথা দিয়েছিলাম, হাওরের ছুটে চলার অভিজ্ঞতা পাঠকদের সাথে ভাগাভাগি করবো। আমি চেষ্টা করছি মাত্র। আমার এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। হাওরপাড়ের সংস্কৃতি সংগ্রহ করাকালীন আমি যে কত কিছু শিখেছি, কত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি, তাও হয়তো একদিন আপনাদের মাঝে আলোচনা করবো। কত বাধা-বিপত্তি, কত বিপদ সামনে এসেছে। তবে আমি পিছপা হইনি। কারণ চলমান এই প্রকাশনাটির যারা পাঠক আছেন তারা আমার সাথে ছিলেন। এখনো আছেন ভবিষ্যতেও থাকবেন এই প্রত্যাশাই করি।

হাওরের ছেলে হিসেবে আমার রয়েছে দারুণ দারুণ কিছু অভিজ্ঞতা। পরিচয় হয়েছে কিছু হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির সাথে। কালের কবলে পড়ে আমিও সেগুলো থেকে আজ বঞ্চিত হয়েছি। কিন্তু স্মৃতির পাতাতে এখনো রয়ে গেছে সেই অভিজ্ঞতাগুলো। আজকের পর্বে আমার জানা থেকে কিছু বিষয় আপনাদের জন্য তুলে ধরবো।

তই তই

ঠাকুরদাদার বউ গো, তেতই গাছে টিয়া,
টিয়ায় যে খাইলো ধান, দেখছো নারে ছাইয়া
টিয়া উড়াইয়া দেও গিয়া।
আমি কি বিয়া করলাম
মাউগের সল্লাই শ্বশুর বাড়ি গেলাম।
শশুর বাড়িতে যাইতে রে ভাই চিপাচাপা পথ
আধা পথ গিয়া দেখি, ব্যাঙে দৌড়ায় রথ।

হাওরের একটি জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে “তই তই” খেলা। এ তই তই খেলাকে জলখেলা বললেও কোনো প্রকার ভুল হবে না। এই খেলাটি কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ অন্যান্য অঞ্চলে হয়ে থাকে। মূলত হাওরের দুরন্তপনার ছেলেরাই এই খেলাটি খেলে থাকে। যখন হাওরের পানি শুকিয়ে যায় তখন হাওরের ছেলেরা নদী, পুকুর কিংবা জলাশয়ে নেমে এই খেলাটি খেলে থাকে। তবে এই খেলাটি খেলার জন্য কোমর পানি হলে ভালো হয়।

বালকেরা কোমর পানিতে নেমে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে এক বালক অন্য বালকের কাছে বল ছুঁড়ে মারে। এ বল নিয়ে সবাই কাড়াকাড়ি শুরু করে দেয়। ফলে পানিতে এক প্রকারের হৈ-হুল্লোড় শুরু হয়। হৈ-হুল্লোড়ের কারণে পানিতে সৃষ্টি হওয়া তরঙ্গের ফলে মাছও লাফাতে থাকে। এই বলটির মালিক হওয়ার জন্য সবাই সবার জায়গা থেকে নিজের কাছে ধরে রাখার চেষ্টা করে। তাই অনেক সময় নিজের হাতে বলটি নিয়ে পানির নিচে ডুব দেয়। অন্যরা আবার ডুব দিয়ে তাকে খুঁজে বের করে এবং তাকে নিয়ে উপরে উঠে। এই খেলার মজার বিষয়টি হচ্ছে যে বালক বল নিয়ে পালাবে বা পানির নিচে ডুব দিবে এবং প্রতিপক্ষের অন্য কেউ যদি তাকে ধরে আনতে পারে তাহলে যে ধরে আনবে সে হবে বিজয়ী। কোনো কোনো অঞ্চলে এ খেলাকে কাড়াকাড়ি খেলা বলে। এ খেলা খেলার সময় বালকেরা যে ছড়াটি বলে তা নিচে দেওয়া হল-

তাই তই তই
বগা মাইরা বুলাতে থই।
বগা তর নানা
ঘাড়-ও বইয়া চেনা।

এই ছড়াটির মূল ভাব হলো- যে ছেলেটি বিজয়ী হয়েছিল এবং যাকে পানির নিচ থেকে ধরে এনে বিজয়ী হয়েছিল তার উদ্দেশ্যেই এই ছড়াটি পাঠ করা।

উপরোক্ত ছড়া এবং তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দী উপজেলার মোহাম্মদ ঈদুল মিয়ার (৩২) কাছ থেকে।

ফাইক্কা দৌড়ানি

হাট্টি ল নারে গাট্টি চুলার হুত
এ্যার বউরে দ্যাইক্কা আইছি
উইড়া গাছের তলে,
উইড়া যদি লড়ে
ধইরা ফুটকি মারে।

হাওরের একটি জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে “ফাইক্কা দৌড়ানি”। এই খেলাটির আভিধানিক নাম হচ্ছে “গোল্লাছুট”। ৬ থেকে ২০ বছরের ছেলেমেয়েরা এই খেলা খেলে থাকে। ফাইক্কা দৌড়ানি খেলা ৫ থেকে ২০ এমনকি একটি দলে ৩০ জন অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে বয়সের তারতম্য অনুযায়ী বেশ কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে তারা খেলে থাকে। হাওরপাড়ে সাধারণত এই খেলাটি হয় হাওরের পানি শুকিয়ে যাওয়ার সময়। তখন খোলা মাঠে হাওরের ছেলেরা বা মেয়েরা খেলে থাকে। বিশেষ করে যখন ছেলেরা অথবা রাখালরা মাঠে গরু চরায় তখন গরু ছেড়ে দিয়ে তারা এই খেলাটি খেলে। এই খেলাটি খেলার জন্য দু’টি দলের প্রয়োজন হয়। দু’টি দলেই সমান সমান সদস্য থাকে। আর দুই দলে থাকে দু’জন দলনেতা। তারাই মূলত খেলাটি পরিচালনা করে।

ফাইক্কা দৌড়ানি যেখানে খেলা হবে সেখানে মাঠের এক প্রান্তে একটি গোল চিহ্ন থাকবে। আর দলনেতা থাকবে এই চিহ্নের ভেতরে। বাকিরা দলনেতার হাত ধরে এবং একে-অপরের হাত ধরে সামনাসামনি হবে। তারা একটি চেইন আকৃতির তৈরি করে সারা মাঠ ঘুরে বেড়াবে এবং প্রতিপক্ষকে ছোঁয়ার জন্য চেষ্টা করবে। এখান থেকে একজন একজন করে ছুটে অন্যপ্রান্তে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং অন্যরা তাকে ছুঁয়ে দেয়। যদি তাকে ছুঁতে না পারে তাহলে সে তাকে বলা হয় পাকনা। পাকনা বালকটি পরবর্তীতে আবার খেলতে পারবে। আর প্রতিপক্ষ তাকে ছুঁয়ে দিবে সে পৌঁছে যাবে অর্থাৎ খেলা থেকে বাদ পড়বে। তার মধ্য থেকে যে দলনেতা ছিল সে হঠাৎ করেই চতুরতার সুযোগ নেবে। এবং আঁকাবাঁকা দৌড়াতে থাকবে যেন তার প্রতিপক্ষ ছুঁতে না পারে। যদি দলপ্রধান আঁকাবাঁকা দৌড়ার পর নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারে তাহলে তাদের দল হবে জয়ী দল এবং তারা আবার খেলবে। আর এভাবেই ফাইক্কা দৌড়ানি খেলাটি খেলা হয়। কোথাও কোথাও এ খেলাটিকে “দুলহই” বলতে শুনেছি।

১৬ গুটি খেলা

হাওরপাড়ের মানুষেরা মূলত অলস সময় অতিবাহিত করার জন্য যে খেলাটি আবিষ্কৃত হয়েছে সে খেলাটির নাম হচ্ছে “১৬ গুটি খেলা”। হাওরপাড়ের মানুষদের জন্য এটি একটি মজার খেলা। “ষোল গুটি খেলা”টির জন্য দরকার বুদ্ধি, ধৈর্য, কৌশল ও সতর্কতা। খুব সময় নিয়ে চিন্তা-ভাবনার সাথে খেলাটি খেলতে হয় বলে বয়স্ক লোকসহ সব বয়সের লোকেরা এটি খেলে থাকে। এই খেলার উপকরণ একদম সহজলভ্য।

দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে খেলা হয়ে থাকে। উভয় খেলোয়াড় ১৬টি করে মোট ৩২টি গুটি দিয়ে খেলা শুরু হয়। খেলার সুবিধার্থে উভয়পক্ষের গুটির আকার-আকৃতি বা রং আলাদা হয়। সাধারণত মাটিতে দাগ কেটে ষোল গুটির ঘর বানানো হয়। শুধু ঘরের মাঝখানের দাগটি দান চালার জন্য খালি থাকে। কোনাকুনি দাগের গুটিগুলো সারা ঘর জুড়ে এক ঘর করে কোনাকুনি খেতে পারে। উলম্ব দাগ কাটা ঘরের গুটিগুলো লম্বভাবে এক ঘর করে খেতে পারে। অপর পক্ষের গুটিকে ডিঙ্গাতে পারলেই সে গুটি কাটা পড়ে। এভাবে প্রতিপক্ষের গুটির সংখ্যা কমিয়ে শূন্য করে ফেলতে পারলেই খেলা শেষ হয়ে যায়।

অনেকেই মনে করেন এই খেলাটির উদ্ভব হয়েছে আমাদের হাওর থেকে। কিন্তু হাওর ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই খেলাটি খেলতে দেখা যায়। বর্তমান সময়ে মোবাইলে সফটওয়্যারের মাধ্যমে এই খেলাটি খেলা যায়। তাই এর জনপ্রিয়তা আগে যেমন ছিল বরং এখন আরো আধুনিক হয়েছে।

লাটিম খেলা

হাওরপাড়ের ছেলেদের এ এক দারুণ খেলা। ছোটবেলা থেকে আজ অব্দি আমি কখনো লাটিম খেলা খেলিনি। কিন্তু দেখতে বেশ ভালো লাগতো‌। আমার লাটিম খেলা না খেলার পেছনের একটি কারণ হচ্ছে আমি লাটিম ঘোরাতে পারি না। প্রতিবেশী বন্ধুরা যখন লাটিম খেলা খেলত আমি পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে খেলা দেখতাম। আজ সেই দেখা থেকে আজ আপনাদের মাঝে কিছুটা বর্ণনা দিচ্ছি।

লাটিম একজন যেমন খেলতে পারে তেমনি ২ বা ততোধিক দলবদ্ধ হয়ে খেলতে পারে। একজন খেললে তার কাছে লাটিম খেলা মানে এটি কতক্ষণ ঘোরাতে পারে তা পরীক্ষা করে দেখা। আর কয়েকজন মিলে খেললে সেটা হয় প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় যে জিতে সে হেরে যাওয়া খেলোয়াড়ের লাটিমের মালিক হয়ে যায়। এই লাটিম হাওরের ছেলেরা নিজের হাতে বানাতে দেখেছি। লাটিম ঘুরানোতে পাটের দড়ি বা চিকন সুতলি ব্যবহার করা হয়। একে কোনো কোনো অঞ্চলে নেতি বলে।

খেলার শুরুতে সমতল মাটিতে একটি বৃত্ত আঁকা হয়। এই বৃত্ত আঁকারও একটা নিয়ম আছে। প্রথমে একটি লাটিমের সঙ্গে পাটের দড়ির বা সুতলি লাটিমের এক মাথা বাধা হয়। এরপর একজন পাটের দড়ির অপর মাথা মাটিতে এক স্থানে চেপে ধরে। আরেকজন খেলোয়াড় সুতলি টানটান করে লাটিমটি মাটি স্পর্শ করে ঘুরালে যে বৃত্ত তৈরি হয় এটিই খেলার নির্ধারিত স্থান। এরপর শুরু হয়।

খেলা : একেকজন খেলোয়াড় লাটিম বৃত্তের মধ্যে ঘোরানো শুরু করে। এরপর যার লাটিমটি ঘুরতে ঘুরতে বৃত্ত থেকে বেরিয়ে সবচেয়ে বেশি দূরে যায় সে প্রথম, তারপর যারটি থাকে সে দ্বিতীয় হয়। এমনভাবে তৃতীয়, চতুর্থও নির্ধারণ হয়। এরপর চতুর্থ অবস্থানের খেলোয়াড় বৃত্তে লাটিম ঘুরিয়ে দেয়, তৃতীয়জন তার লাটিম দিয়ে ঘোরানো লাটিমকে আঘাত করে বৃত্তের বাইরে আনতে পারলে লাটিমটি তার হয়ে যায়। এরপরে তৃতীয় অবস্থানের খেলোয়াড় তার লাটিম ঘুরালে, দ্বিতীয় অবস্থানের খেলোয়াড় একইভাবে ওই লাটিমকে তার লাটিম দিয়ে আঘাত করে বৃত্তের বাইরে নিতে পারলে সেটির মালিক হয়। এরপর দ্বিতীয় খেলোয়াড়ের লাটিমকে প্রথম অবস্থানের খেলোয়াড় আঘাত করে বাইরে নিতে পারলে সেটির মালিক সে হয়। এভাবে চলতে থাকে খেলা। তবে এ খেলায় লাটিমের আঘাতে অন্যের লাটিম ভেঙেও যায় অনেক সময়। আর সেটা করতে পারলে খেলোয়াড়রা অনেক বাহবা পায়। এজন্য লাটিমের আল সোঁচালো করতে পছন্দ করে খেলোয়াড়রা। এছাড়াও কে কতক্ষণ সময় ধরে লাটিম ঘোরাতে পারে সে প্রতিযোগিতাও হয় শিশু-কিশোরদের মধ্যে। গ্রামের অনেক শিশু-কিশোরই মাটিতে ঘুরানো লাটিম অদ্ভুত কৌশলে হাতের তালুতে তুলে নিলেও তা ঘুরতে থাকে। হাতের তালুতে লাটিম ঘোরানোর প্রতিযোগিতায় কখনও কখনও মেতে উঠে হাওরের ছেলেরা।

মাছ ধরার উৎসব

হাওরপাড়ের অন্যান্য উৎসবের মধ্যে মাছ ধরার উৎসব ছিল এক সময়ের জনপ্রিয় উৎসব। এই উৎসবটির স্থানীয়ভাবে আরো কিছু নাম রয়েছে। কেউ কেউ এই উৎসবকে “হাতনামা” বলে থাকে। আঞ্চলিক উচ্চারণের কারণে কোনো কোনো স্থানে “আতনামা” বলে। তবে শিক্ষিতজনেরা এটাকে পলো বাওয়া উৎসব বলে অভিহিত করেছেন। এই উৎসবের মধ্যে অংশ নেয় কিশোর-যুবক অর্ধবয়স্ক পুরুষ, এমনকি নারীদেরও এই উৎসবে অংশ নিতে দেখেছি। আমি যখন বেশ ছোট, এমন বেশকিছু উৎসবে বাবার সাথে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল।‌

মাগ এবং ফাল্গুন মাসে মাছ ধরার উৎসবটি শুরু হয়। এই উৎসবের মধ্যে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। আশপাশের গ্রামের এমনকি অন্য উপজেলা/থানা থেকেও মানুষ এসে অংশ নিত। এখন প্রশ্ন হলো আগের সময় মানুষ কিভাবে জানত যে আগামীকাল বা তার পরদিন, কত তারিখ মাছ ধরার উৎসব হবে, অমুক জায়গায়? তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমি। দেখেছি গ্রামের হাট-বাজারে একটি খালি টিন নিয়ে তার মধ্যে লাঠি দিয়ে শব্দ করে ঘোষণা দিত কোন জায়গায় মাছ ধরার উৎসব হবে। এতে করে মানুষ জানত। মূলত মাঘ-ফাল্গুন মাসে যখন হাওরের পানি একেবারে শুকিয়ে যেত তখন কোনো কোনো বিলে, ঝিলে, হাওরে চপচপে বা হাঁটুসমান পানিতে এই উৎসবটি পালিত হতো।

বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ একযোগে সেখানে মাছ ধরতো। কেউবা শুধু খালি হাতে মাছ ধরতে, কেউ ছোট জাল ব্যবহার করত, কেউ আবার পোলো ব্যবহার করত। তবে এই উৎসবের রীতি অনুযায়ী বেশিরভাগ মানুষই খালি হাতে মাছ ধরত। এর সময়কাল হতো ভোর থেকে শুরু করে বেলা বারোটা পর্যন্ত‌। এমন মাছ ধরার উৎসব শুধুমাত্র হাওরে দেখা যায়। বিলুপ্তপ্রায় এই উৎসবটি আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসবে এই প্রত্যাশাই আমি করি।

দেয়াশলাই ও সিগারেটের বাক্স দিয়ে খোলা খেলা

সিগারেটের বাক্সকে দুই ভাগ করা হত। প্রতিটা আলাদা ব্র্যান্ডের সিগারেটের জন্য আলাদা ধরনের দাম নির্ধারণ করা হত। কাঁচের বা মাটির হাড়ির ভাঙা টুকরা দিয়ে খেলা হত। কারো খোলা বা ভাঙা টুকরা সেটা হাত দিয়ে দূরে ফেলা হতো এবং বলা হতো এতগুলো এত টাকা দেবো। কারো খোলাকে দূর থেকে ছুঁড়ে স্পর্শ করতে পারলে সে ওই পরিমাণ টাকা পেতো। এই টাকা সিগারেটের বাক্সের মুদ্রায় পরিশোধ করা হত।

কড়ি খেলা

বৃষ্টির দিনে খেলা বন্ধ থাকবে, তা তো হতে পারে না! তাই তো এমন দিনে ঘরে বসে শিশু-কিশোররা কড়ি খেলায় মেতে উঠতো। কড়ি হচ্ছে একপ্রকার শামুকের শুকনা খোল। অনেক সময় খেঁজুরের ২টা বিচিকে ৪ভাগ করে তা দিয়ে চলে কড়ি খেলা। দুটাকে আলাদা আলাদা জোড় বানিয়ে হাতের আঙ্গুলের টোকা দিয়ে লাগাতে পারলে ১ পয়েন্ট হবে। এভাবে যার পয়েন্ট বেশি হবে সে জয়ী হবে। তবে পয়েন্ট গণনা শুরুর আগে তার অবশ্যই একসাথে ৪ বা ১৬ পড়তে হবে। ৪ পড়া মানে হচ্ছে কড়ির ৪টা অংশকে একত্রে ওপর হয়ে পড়তে হবে। আর ১৬ পড়া মানে হচ্ছে ৪টাকে একত্রে চিত হয়ে পড়তে হবে। ১৬ পড়লে যে যতটা গুটি হাতে নিতে পারবে সে তত ৪ পয়েন্ট করে পাবে। দু’টি গুটি একসাথে জোড়া লেগে পড়লে সেটিতে পয়েন্ট গণনা করা যাবে না। ৩টা গুটি যদি একসাথে চিত হয়ে পড়ে তবে তার ওই দান বাতিল হবে। তখন অন্যরা সুযোগ পাবে। এভাবে বৃষ্টির তালে পয়েন্ট গুনে হারজিতের খেলা চলতো।

বাঘবন্দী খেলা

হাওরপাড়ে এই বাঘবন্দী খেলাটিও খুবই জনপ্রিয়। মূলত ১৬ গুটি খেলার নিয়মে বাঘবন্দী খেলতে হয়। কোথাও কোথাও আবার বাঘ-বকরি বন্দী খেলাও বলা হয়।

বাঘ-বকরি বা বাঘবন্দী খেলায় একটিমাত্র গুটি থাকে, যাকে বাঘ বলে। এই বাঘকে ছাগল খেতে পারে না। একে আটকানোর চেষ্টা করা হয়, যেন কোনো দিক গুটি সরাতে না পারে। আরেকপক্ষে ১৬টি ছাগল, তথা গুটিগুলো ষোলগুটির নিয়মেই সাজানো থাকে। ঐ একই নিয়ম, বাঘ-বকরি খেলার ঘরের মধ্যে যে বিন্দুগুলো থাকে, গুটিগুলো ঐ বিন্দুগুলো দিয়েই নড়াচড়া করবে। ধরা যাক একটি সরল রেখার তিনটি বিন্দুর মাঝে প্রথম বিন্দুতে কোনো গুটি নেই, দ্বিতীয় বিন্দুতে ছাগলের গুটি আর তৃতীয় বিন্দুতে বাঘের গুটি রয়েছে। এক্ষেত্রে বাঘের চাল দেয়ার সময় হলে বাঘ তৃতীয় বিন্দু থেকে গুটি সরিয়ে প্রথম বিন্দুতে রাখবে এবং ছাগলকে ঘরের বাইরে রেখে দেবে, যাকে “গুটি খেয়ে দেয়া” বলে। এভাবে গুটি সবগুলো খেলে বাঘপক্ষ জিতবে। আবার বাঘের চাল দেয়া আটকাতে পারলে ছাগলপক্ষ জিতে যাবে।

কুতকুত খেলা

কুতকুত খেলাটি সম্পর্কে সবাই জেনে থাকবেন। ছোটবেলায় এই খেলাটি কম-বেশি সবাই খেলে। বাড়ির উঠোন বা যে কোনো খোলা জায়গায় এটি খেলা যায়। এই খেলাটির জন্য প্রথমে আয়তাকার আকৃতির দুইটি ও বর্গাকৃতির একটি ঘর করতে হয়। বর্গাকৃতির ঘর কোনাকুনিভাবে দাগ টেনে চারভাগ করা হয়। কমপক্ষে দুইজন খেলোয়াড় প্রয়োজন হয়, তবে একাও খেলা যায়।

মাটির হাঁড়ির ভাঙা টুকরা বা এমন কিছু যা এক পায়ে টোকা দিয়ে সরানো যাবে, এই উপকরণটিকে “চাড়া” বলা হয়। এবার একজন চাড়াটি প্রথম ঘরে ফেলে এক পায়ে দাঁড়িয়ে পায়ের আঙুল দিয়ে টোকা দেয়ার সময় “কুত কুত” বলতে বলতে একটি করে ঘর অতিক্রম করবে। সবগুলো ঘর ঘুরে চাড়াটি দাগের বাইরে নিয়ে আসতে হবে। এরপর দ্বিতীয় ঘরে চাড়া ফেলে চাড়াটি টোকা দিয়ে সবগুলো ঘর অতিক্রম করতে হবে। এভাবে একটি একটি করে সবগুলো ঘরে চাড়া ফেলতে হয়। যে নিয়ম মেনে সবগুলো ঘরে চাড়া ফেলে সবার আগে অভিযান সম্পন্ন করবে, সে-ই জয়ী হবে। এই প্রক্রিয়ার কোথাও চারা বা পায়ের কোনো অংশ ঘরগুলোর দাগে স্পর্শ করলে, টোকা দেয়ার সময় একটি ঘর বাদ রেখে অন্য ঘরে চারা চলে গেলে, কিংবা দম ফুরিয়ে গেলে, তখন অন্য খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পাবে। স্থানভেদে ঘর কমবেশি বা ভিন্নরকম করে আঁকানো হয়, কিন্তু খেলার অন্যান্য নিয়ম প্রায় একই।

জাত লুকানো খেলা

হাওরপাড়ে জাত লুকানো খেলাটি অত্যন্ত চমৎকার এবং মজাদায়ক। এই খেলাটি বেশিরভাগ শিশুরাই খেলে থাকে। ৮ থেকে ১০ বছরের ছেলেমেয়েরা অংশগ্রহণ করে থাকে। এ খেলায় একজন রাজা থাকে। বাকিরা থাকে তার কর্মচারী। রাজার নির্দেশে বিভিন্ন গাছের পাতা এনে রাজার কাছে জমা করতে হয়। এর মধ্য থেকে সাত প্রকারের পাতা আনতে হয়। যে রাজা থাকে সেই নির্দেশ করে, যেই গাছের পাতাগুলো সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না সেই গাছের পাতাগুলো রাজার কাছে নিয়ে আসার জন্য। এখানেই খেলার মজার বিষয় লুকায়িত রয়েছে। আমরা দেখেছি পাতা আনার জনের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে হয়েছে শিশুদের। এভাবে সাত প্রকার পাতা সংগ্রহ শেষ হলে, রাজা আবার প্রত্যেককে তাদের পাতা তাদের হাতে ফিরিয়ে দেয়। আর পাতাগুলো অন্য সদস্যরা নিজেদের মতো করে একটা স্থানে লুকিয়ে রাখে। আর এই লুকানো পাতাগুলোকে খুঁজে বের করতে হয় রাজার। যদি একে একে সবার পাতা খুঁজে বের করতে পারে তাহলে সে হবে জয়ী এবং আবার রাজা হবে। আর যার পাতা খুঁজে বের করতে পারল না সে হবে রাজা আর রাজা হয়ে যাবে অন্য সাধারণের মতোই খেলোয়াড়। এমনই চমৎকার একটি জাত লুকানো খেলা হাওরপাড়ের ছিল। কিন্তু আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। হাওরপাড়ের কোনো কোনো অঞ্চলে এ জাতীয় খেলাটিকে সাতপাতা বলেও ডাকতে শুনেছি।

আমের বড়া খেলা

হাওরপাড়ের গ্রীষ্মকালীন খেলা হচ্ছে আমের বড়া খেলা। এই খেলার বাইরেও গ্রীষ্মকালীন অনেক খেলা রয়েছে। আমের বড়া খেলাটি সাধারণত দু’জনকেই খেলতে দেখেছি। আমিও বেশ খেলেছি বলে এখনো মনে রয়েছে।

এই খেলাটি খেলার জন্য মাটিতে একটি গোলাকার বৃত্ত করা হয়। তারপর দু’জনের মধ্যে টস হয়। যে জয়ী হবে সে হবে প্রথম খেলোয়াড়, মানে গোলাকার আকৃতির জায়গায় দাঁড়াবে। অন্যজন বাইরে তার ইচ্ছেমত জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। তবে বৃত্তের ব্যক্তি বাইরের জনের পেছন দিকে মুখ করে দাঁড়ায়। তারপর বৃত্তের ব্যক্তির নিজের মাথার উপর দিয়ে একটি আমের বড়া বা আটি উপরের দিকে ছুঁড়ে মারে। বাইরেরজন তা লুফে নিতে পারলেই বৃত্তের ব্যক্তি মারা যাবে এবং সে বৃত্তে গিয়ে আবার দাঁড়াবে। যদি লুফে নিতে না পারে তাহলে আমের বড়াটি যতদূর পরে সেখান থেকে এক পা তুলে অন্য পায়ে দিয়ে তিনবার লাথি মেরে বৃত্তের কাছে নিয়ে আসতে হয়। আর যদি তিনবারে লাথি দিয়ে নামতে পারে তাহলে সে হবে আবারও কাকুর এবং বৃত্তের বাইরে নিজের মতো করে নিজের জায়গায় দাঁড়াতে হবে। আর এই ভাবেই চক্রাকারে খেলাটি চলতে থাকে। কোনো কোনো অঞ্চলে খেলাটিকে “বড্ডা” খেলাও বলে থাকে।

রস-কস খেলা

হাওরপাড়ের জনপ্রিয় খেলার মধ্যে রস-কস খেলাটি অন্যতম। হাওরের ছেলেরা অবসর সময়ে এই খেলাটি খেলে থাকে। এই খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারে দুই থেকে সর্বোচ্চ ৬ জন।

রস-কস খেলাটি খেলার একটি নিয়ম রয়েছে। নিয়মটি হল রস, কস, সিংগা, বুলবুল, মালেক, মস্তক এই শব্দগুলো থেকে প্রত্যেক খেলোয়াড় যেকোনো একটি নাম ধারণ করে। এরপর তার ইচ্ছে অনুযায়ী মাটির মধ্যে তার যে কোনো এক হাত অথবা দুই হাতের আঙ্গুলগুলো রাখে। তারপর রস, কস, সিংগা, বুলবুল, মালেক, মস্তক এভাবে যথাক্রমে আঙুলের উপর অন্য একজন গণনা করে। যার নাম একেবারে শেষে পড়ে তাকে আর আঙ্গুল রাখতে হয় না, অর্থাৎ আঙ্গুলটা গুটিয়ে নিতে হয়। যদি দু’জন খেলোয়াড় হয় তাহলে যার নাম উঠে যায় সে অপরজনকে হাতে আঘাত করে। যদি তার চেয়ে বেশি খেলোয়াড় হয় তাহলে একজন ছাড়া একে একে সবার নাম উঠে গেলে, যার নাম উঠে না তাকে সবাই আঘাত করে।

এখানে যার নাম উঠবে না সে কাকুর হবে। আর কাকুরের হাতে বাকি সবাই আঘাত করতে থাকবে। কাকুর তার এক হাত মাটি স্পর্শ করে দাঁড় করিয়ে রাখবে বাকি একজন একজন করে তার হাতে দুই পাশে আঘাত করবে। আঘাত করার সময় কাকুর যদি তার হাত উঠিয়ে নিয়ে আসতে পারে অথবা যে আঘাত করছে সে যদি তাকে স্পর্শ না করতে পারে তাহলে কাকুর হয়ে যাবে রাজা, মানে জয়ী। আর যে আঘাত করতে পারেনি সে হয়ে গেল আবার কাকুর।

গুলাইল/গুলতি

হাওরপাড়ের এই খেলাটি আমার খুব প্রিয় খেলা ছিল। পাখি শিকার করা আমার খুব শখ ছিল এক সময়। আর এর জন্যেই এই খেলাটি আমি খেলতাম।

গাছের ডাল কেটে তৈরি করা হতো ইংরেজি “ওয়াই” আকৃতির একটা কাঠামো। ওপরের দু’দিকে বেঁকে থাকা ডালের মাথায় শক্ত করে বেঁধে নেয়া হতো ইলাস্টিক। এবার ইলাস্টিকের ঠিক মাঝ বরাবর একটা মার্বেল, শক্ত মাটি বা খোয়া রেখে লক্ষ্যবস্তুর দিকে ছুঁড়ে মারলেই ঠুস! লেগে গেলে সে কী আনন্দ! আনন্দগুলো খুব মিস করি। নদীর পাড় থেকে এঁটেল মাটি এনে এগুলোকে গোল করে মার্বেলের মতো তৈরি করতাম এবং রোদে শুকাতে দিতাম। তারপর এগুলো হাতে করে নিয়ে খেলা খেলতাম।

গোলাপ-টগর

হাওরপাড়ে এই গোলাপ-টগর খেলাটি খুবই জনপ্রিয় ছিল। গোলাপ-টগর কোথাও ফুলটোক্কা, বউরাণী আবার কোথাও টুকাটুকি নামে পরিচিত। অল্পবয়েসি ছেলেমেয়েরা সমানসংখ্যক সদস্য নিয়ে দুই দলে ভাগ হয়। দলের প্রধান দু’জনকে বলে রাজা। খেলার শুরুতে রাজা ফুল-ফলের নামে নিজ দলের সদস্যদের নাম ঠিক করে দেয়। তারপর সে বিপক্ষ দলের যে কোনো একজনের চোখ হাত দিয়ে বন্ধ করে “আয়রে আমার গোলাপ ফুল বা আয়রে আমার টগর ফুল” ইত্যাদি নামে ডাক দেয়। সে তখন চুপিসারে এসে চোখ বন্ধ থাকার কপালে মৃদু টোকা দিয়ে নিজ অবস্থানে ফিরে যায়। এরপর চোখ খুলে দিলে চোখ আটকে রাখা খেলোয়াড় টোকা দেওয়া সদস্যকে শনাক্ত করার চেষ্টা করে। সফল হলে সে সামনের দিকে একধাপ এগিয়ে যায়। এবার বিপক্ষের রাজা একই নিয়ম অনুসরণ করে। এভাবে লাফ দিয়ে মধ্যবর্তী সীমা অতিক্রম করে প্রতিপক্ষের জমি দখল না করা পর্যন্ত খেলা চলতে থাকে।


সহযোগিতায় : মোঃ জুনাইদ হাসান রাজু, কবি সিদ্দিকুর রহমান আনার, বৃষ্টি আক্তার (নেত্রকোনা), আফরোজা বেগম (উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, কলমাকান্দা, নেত্রকোনা)।

সংগ্রহ সূত্র : মোহাম্মদ ঈদুল (কলমাকান্দা, নেত্রকোনা); রোজিনা আক্তার (নিকলী, কিশোরগঞ্জ); লেখকের মা; লেখকের নিজের অভিজ্ঞতা থেকে।

তথ্যসূত্র :
১. বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা, হবিগঞ্জ।
২. বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা, সুনামগঞ্জ।
৩. বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
৪. বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা, নেত্রকোনা।
৫. বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা, সিলেট।
৬. বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা, কিশোরগঞ্জ।
৭. জালালাবাদের কথা, বাংলা একাডেমি, দেওয়ান নুরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
৮. কিশোরগঞ্জের লোক ঐতিহ্য, প্রিন্স রফিক খান।
৯. কিশোরগঞ্জ জেলার ইতিহাস, রফিক আখন্দ।
১০. নাটক, নননপুরের মেলায় কমলা সুন্দরী ও একটি বাঘ আসে, বদরুজ্জামান আলমগীর।

 

সকল পর্ব :

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ২

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৩

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৪

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৫

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৬

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৭

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৮

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৯

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১০

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১১

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১২

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১৩

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১৪

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১৫

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১৬

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১৭

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১৮

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১৯

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ২০

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ২১

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ২২

Similar Posts

error: Content is protected !!