হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১১

শেখ মোবারক হোসাইন সাদী ।।

গত পর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম বাঘাই সিন্নি নিয়ে। বিস্তারিত আলোচনা না করলেও মোটামুটি ভাবে একটা ধারণা দিতে পেরেছি বলে আমার বিশ্বাস। বাঘাই সিন্নির ভিতর আরো ১৪ সিন্নির নাম উল্লেখ করেছি। আজকে আরো নতুন ৪টি সিন্নির নাম যোগ করছি। সবগুলো সিন্নির উপর সংক্ষেপে একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কিছুই হয়তো আড়াল হয়ে যাচ্ছে। তবে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, যেখানে যা পাচ্ছি সবকিছুই নোট করে রাখছি। সবগুলো বিষয় আরো বিস্তারিত ও নিখুঁত আলোচনা করব আমার প্রকাশিতব্য বইয়ে।
আমার সংগ্রহ করা আরো কিছু সিন্নির নাম নিম্নরূপ-
১। মাদার পীরের সিন্নি/মাদার বাঁশ
২। ত্রিনাদের সিন্নি
৩। শনির সিন্নি
৪। খোয়াজের সিন্নি।

পুরাপিঠার সিন্নি/পুরাপিঠা
হাওরপাড়ের পুরাপিঠার সিন্নি পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে তৈরি শুরু করে চলে পুরো মাস পর্যন্ত। কিন্তু এর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস থেকে। হাওরপাড়ের ৯৮ শতাংশ জমিই এক ফসলী। স্থানীয় ভাষায় বলে বুরো ফসল। এ ফসল ফলানোর/ রোপণের জন্য যে চারা তৈরি করা হয় হাওরপাড়ের চাষিরা তাকে বলে জালা (ধান গাছ)। হাওরপাড়ের কৃষকরা ধানের চারা/জালা তৈরি করার জন্য প্রথমে বীজ ধানকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিভিন্ন পাত্রে কলাপাতা/ পাটের চালা রেখে ঢেকে রাখে যাকে বলা হয় জাঁক দেওয়া। এখানে বলে রাখা দরকার যে, সবকিছুর আগে বীজ ধানকে ভিজিয়ে রাখে একদিন।

কিছুদিন যাওয়ার পর ধান থেকে ছোট চারা গাছ গজায়, যাকে বলে কুম। উপরের অংশ দেখেই কৃষকরা বুঝতে পারে আর কত সময় পরে এ ধানকে বীজতলায় ফেলতে হবে। এরপরে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়। এ বীজতলা তৈরি করা হয় খাল বা যেখানে খুব কাছাকাছি পানি আছে এমন জায়গায়। কুম জাগ্রত ধান থেকে কিছু ধান আলাদা করে রাখা হয় যেগুলোতে এখনো কুম গজায়নি। আর এরকম কম গজানো কুমগুলো গ্রামের মহিলাদের হাতে তুলে দেন কৃষকরা। মহিলারা এ ধানকে আবার নতুন করে কুম গজানোর প্রক্রিয়া চালায়। পরবর্তী সময়ে এগুলোকে রোদে ভালো করে শুকানো হয় এবং পিঠার জন্য উপযোগী করে তুলে।

এ ধানগুলো ঢেঁকি দিয়ে গুঁড়ো করে এবং মিহি কাপড় দিয়ে উত্তম অংশগুলো সংগ্রহ করে।

পুরা পিঠার সিন্নি বা পিঠা তৈরি করতে হলে এর সাথে আরো কিছু উপকরণ যুক্ত করতে হয়। যেমন-
১। আতব চালের গুড়া
২। পরিমাণমত আখের গুড়/মিঠাই

এবার পৌষ মাসের নির্দিষ্ট সময় দেখে এ পুরা পিঠা সিন্নি বা পুরাপিঠা তৈরির কাজ শুরু করে। এ পিঠা পোড়ার জন্য বিশেষ লাকরী বা খড়ি ব্যবহার করা হয়। যেমন- কচুরিপানা শুকিয়ে তা দিয়ে আগুনের কাজটি করা হয়। বিশেষ কোনো পাত্রে পুরা পিঠার উপকরণ। কলাপাতা দিয়ে মুড়িয়ে সম্পূর্ণ পাত্রকে/শুকনো কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় এবং আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আগুন ২৪ ঘণ্টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত একটানা জ্বলতে থাকে। দূর থেকে পুরাপিঠার গন্ধ নাকে এসে লাগে।

উদ্দেশ্য
বোরো ধানের ফসল যেন ভালো হয়, খড়া যেন না পড়ে এবং ফসল যেন নষ্ট না হয়- শিলাবৃষ্টিতে নষ্ট না করে এর জন্য এ পুরাপিঠার সিন্নি /পুরাপিঠা তৈরি করে থাকে হাওরপাড়ের মানুষ।

এ তথ্যটি সংগ্রহ করা হয়েছে নিকলী উপজেলার জারইতলা ইউনিয়নের ধারীশ্বর গ্রামের গিয়াস উদ্দীনের স্ত্রী জেলে বানুর কাছ থেকে।

গুচির সিন্নি/পিঠা
গুচির সিন্নিকে হাওরপাড়ে হোষ মায়া সিন্নি (পৌষ মাস) সিন্নি বলেও ডাকতে শোনা যায়। এ সিন্নি পৌষ মাসের প্রথম দিন থেকে ১৫তম দিন পর্যন্ত করে থাকে হাওরপাড়ের কৃষকরা। হাওরপাড়ের যারা কৃষক আছেন- স্থানীয় ভাষায় তাদের বলা হয় গেরস। গেরস তখন তাদের জমিতে গুচি দেয় (ধানের চারা রোপণ) তখন মুনিদের (শ্রমিক) উদ্দেশে এই সিন্নি বা পিঠা তৈরি করে থাকে। সিন্নি খাওয়ানো হয় পাড়ার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের। আর পিঠা খাওয়ানো হয় ধানের চারা রোপণকারী শ্রমিকদের। সাথে থাকে চ্যাপা শুঁটকি-লাল মরিচের ভর্তা। এ সিন্নিও করা হয় ফসল যেন ভালো হয় এই উদ্দেশ্যে।

এটা সংগ্রহ করা হয়েছে নিকলী সদর ইউনিয়নের কুর্শা গ্রামের আল আমিন-এর কাছে থেকে।

আগ আনার সিন্নি
হাওরপাড়ের গেরসদের একটাই ফসল, বোরো ফসল। সাধারণত বৈশাখ মাসের প্রথমে ধানকাটার কয়েকদিন আগে কোনো এক গুক্রবার ঘরের ছোট ছেলেকে সকালবেলা গোসল করিয়ে তার মাথায় “পাতলা” (বাতা) ও কাচি (কাস্তে) দিয়ে পাকা ধানের দু’টি মুরি (ধানের আটি/গোছা) কেটে মাথায় করে বাড়ি নিয়ে আসার জন্য।

তবে নিয়মানুযায়ী বাড়ি ফেরার পথে সে (ধানের আটি/গোছা বহনকারী) কারো সাথে কথা বলে না। ডানে-বাঁয়ে কোনো দিকে তাকায় না। এমনকি পিছনে ফিরেও দেখা নিষেধ। কিন্তু এ মুরি নিয়ে আসার সময় বালকের মুখে থাকে গুড় (মিঠাই)। তারপর দু’টি মুরি থেকে একটি মসজিদে, অপরটি দিয়ে সিন্নি রান্না করে পাড়ার শিশুদের খাওয়ানো হয়।

আগ আনার সিন্নির তথ্যটি সংগ্রহ করা হয়েছে নিকলী সদর ইউনিয়নের মীরহাটির অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মোহাম্মদ আজমল আহসান-এর কাছ থেকে।

শুক্রবারে মসজিদে সিন্নি
শুক্রবারে হাওরপাড়ের মসজিদে সিন্নি দেওয়ার একটা প্রচলন রয়েছে। যা এখনো কিছু কিছু গ্রামে দেখা যায়। শুক্রবারে মসজিদে কয়েকটা কারণে সিন্নি দেয় হাওরপাড়ের মানুষ। যেমন-
ক. সিন্নি ছয় (ছোঁয়ানো)
খ. মানত সিন্নি
গ. ব্যক্তিগত সিন্নি

ক. সিন্নি ছয় : হাওরপাড়ে কারো ঘরে সন্তানাদি জন্ম নেওয়ার ৫-৮ মাসের মধ্যে মায়ের দুধ ব্যতীত আর কিছুই খাওয়ানো হয় না। তাই যেদিন থেকে সন্তানকে মায়ের দুধ ব্যতীত অন্য কোনো খাদ্য গ্রহণ করানো হবে, তার কয়েকদিন আগেই সবাইকে সিন্নি মুখ করানো হয়। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় “সিন্নি ছয়”। এ সিন্নি মসজিদের মুসল্লিদের উদ্দেশে রান্না করা হয়। নামাজ শেষে হুজুর দোয়া পাঠ করে সন্তানকে সিন্নি খাইয়ে দেয়। আর তখন থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাওয়াতে হয়।

খ. মানত সিন্নি : মানুষ বিপদে পড়লে বা কোন কিছু হারিয়ে গেলে বিপদ থেকে উদ্ধার ও হারিয়ে যাওয়া বস্তু ফিরে পাওয়ার আশায় মসজিদে সিন্নি মানত করে। মানত মতে কাজ হলে কোনো এক শুক্রবার মসজিদে সিন্নি রান্না করে দেয় মুসল্লিদের খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে।

গ. ব্যক্তিগত সিন্নি : মনের খুশিতে বা তার নিজের মতো করে সিন্নি দেওয়াকে ব্যক্তিগত সিন্নি বলে। এ সিন্নিও দেওয়া হয় মসজিদের মুসল্লিদেরকে উদ্দেশ্য করে। মসজিদে সিন্নি বণ্টন করা হয় কলাপাতার মধ্যে। এ সিন্নির জন্য মসজিদে শিশুদের সংখ্যা বেড়ে যেত।

গাজী কালুর সিন্নি
হাওরপাড়ের মানুষের মুখে শোনা যায় গাজী-কালু দুই ভাই ছিলেন। কিন্তু হযরত বুরহান উদ্দিন (রহঃ)-এর জীবনীগ্রন্থে ক্বারী মোহাম্মদ নূর উদ্দিন চিশতি কয়েকজন গাজী পীরের কথা উল্লেখ করেছেন-
১. গাজী বুরহান উদ্দিন (রঃ)
২. গাজী মূলক (রঃ)
৩. হাবি গাজী (রঃ)
৪. হাবীব গাজী (রঃ)
৫. হায়দার গাজী (রঃ)
৬. শেখ কালু (রঃ)

এ ছয়জনের নামই উল্লেখ করেছেন। তবে হাওরপাড়ের মানুষ কোন গাজীর সিন্নি করতেন বা কোন গাজীকে মানত করেন তা বিস্তারিত আলোচনা থাকবে আমার প্রকাশিতব্য বইয়ে।

আমাদের কামালপুর (জারইতলা) প্রতিবছর গাজী-কালুর সিন্নি করতে দেখেছি যা এখনো বিদ্যমান। মানুষের বালা মসিবত দূর হওয়ার জন্যে গাজী-কালুর সিন্নি মানত করে। আর যেদিন এ সিন্নি তৈরি করবেন সেদিন এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রকমের গান ও ছড়া পাঠ করা হয়। স্থানীয় ভাষায় একে “কালাম” বলে।

বেয়ানি সিন্নি বা নব দুধ সিন্নি
হাওরপাড়ের কোনো গাভী যখন বাচ্চা প্রসব করে তার সাতদিন পর্যন্ত কোনো দুধ গোয়ালরা সংগ্রহ করেন না। শুধু গাভীর বাচ্চাকে খাওয়ার সুযোগ করে দেয়। সাতদিন পর দুধ সংগ্রহ করে প্রথম দুধ দিয়ে লবণ ও চিনি ছাড়া এক প্রকারের সাদা সিন্নি তৈরি করে ওলঙ (ন্যাঙটা) শিশুদের খাওয়ানো হয়। ছোট শিশুরা এ সিন্নি খেয়ে এক রশির মধ্যে হাত মুছে এবং প্রার্থনাস্বরূপ এমন বলে-
“গায়ের গরতে একশ’ একটা বাচুর অক
গায় মালিককে সেরে সেরেতে দুধ দেক”

কোথাও কোথাও আবার সিন্নি খাওয়া শেষে বড়দের সহায়তায় ছোট শিশুরা একসাথে নিম্নোক্ত ছড়াটি সমস্বরে উচ্চারণ করে-
এক মুইটলারে দুই মুইটলারে
পালের বাউন দিতাম ছায়
পালো আছিন কমলী গায়
কমলী গায়ের দুধ খাই
দুধ খুটি লড়াই করে
সাত লাখ্যলে পুইরা মরে
সাত লাখ্যলের সাত ধন
বইশ লাখ্যলের এক ধন।

আরে ভাই পাড়োঅ যাই
পাড়োঅ যাইয়া চিক্কণ খাই।
চিক্কণ খাইয়া মারলাম তির
তীর অইলো বির বির….

ইত্যাদি।

এ তথটি সংগ্রহ করা হয়েছে নিকলী উপজেলা, জারইতলা ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের শেখ মোশারফ হোসাইন-এর কাছ থেকে।

ওড়ি ভিটা সিন্নি
ওড়ি ভিটাকে হাওরপাড়ের হিন্দুদের ভাষায় বলা হয় শ্মশ্মান ঘাট। ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ যখন ভাগ হয়ে যায় তখন বেশিরভাগ হিন্দুই হাওরাঞ্চল ছেড়ে ভারত চলে যায়। তারা থাকাবস্থায় যেখানে মৃত মানুষ পুড়ানো হতো অর্থাৎ শ্মশ্মান ঘাট, হিন্দুরা চলে যাওয়ার ফলে অনেক এলাকায় স্থানটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ফলে মানুষ দিনের বেলায় সেখানে যেতে ভয় পেত। হাওরপাড়ের মানুষের বিশ্বাস ছিল- এ ওড়ি ভিটায় শয়তান ও খারাপ আত্মাদের বসবাস। এ ভিটার শয়তান বা আত্মারা যেন আশেপাশে বসবাসরত মানুষের কোনো ক্ষতি সাধন না করতে পারে সে জন্যে সিন্নি দিত। স্থানীয় ভাষায় একে “ভোগ” বলে। এ ধরনের ভোগের মধ্যে ৫/৬ প্রকারের ভাজি, গরু/খাশি/ মুরগীর মাংস ও সাদা ভাত থাকত। এমন ভোগ দেওয়া আমি নিজেও দেখেছি ছোটবেলায়। কিন্ত এ ধরনের ভোগ দেওয়া এখন আর দেখা যায় না। ওড়ি ভিটার আরেক নাম “চিল্লাল”।

তেমাথায়/ চৌমাথার সিন্নি
হাওরপাড়ের ছেলেমেয়ের অসুখ-বিসুখ (শয়তান জিনের আছর) হলে তা থেকে নিরাময়ের জন্য একজন কবিরাজের কাছে যেত। এমন অসুখ সেরে উঠলে তেমাথায়/ চৌমাথার সিন্নি দিতে হত।

এখানে বলে রাখা দরকার যে, আমার মাতা জুমেনা খাতুন হযরত কামাল শাহ্ (রহ.) মাজার শরিফের একজন প্রধান খাদেম। সেই সাথে তিনি একজন কবিরাজও। তাই এই সকল বিষয় আমার নিত্যদিনের ঘটনা। মাকে একদিন প্রশ্ন করলাম, এমন স্থানে তো সিন্নি দিলে কুকুর খাবে। তাহলে দেওয়ার মানে কী? তিনি বললেন, কাক, পাখি বা পশুপাখি খেলেই এ সিন্নির সফলতার ফল আসবে। মূলত কাক-পাখিদের জন্যই তেমাথায়/চৌমাথার সিন্নি দেওয়া হয়।

এ তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে আমার মায়ের কাছ থেকে (মাজারের সিন্নিও সংগ্রহ করা হয়েছে আমার মায়ের কাছ থেকে)।

মাজারের সিন্নি
হাওরপাড়ের মাজারের সিন্নিগুলো মূলত মানত থেকে আসে। কোনো কিছু মানত করে তা পূর্ণ হলে মাজারে সিন্নি দেয়। মাজারে যে সকল সিন্নি দেয় এর মধ্যে-
১। বৃহস্পতিবারে চালের লাল সিন্নি
২। গরু
৩। মোড়গ

কোন কোন মানতকারীকে দেখা যায় বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মাজারে সিন্নি বা মানত করা জিনিস নিয়ে আসতে। কেউ কেউ আবার মোমবাতি, আগরবাতি, চাল ইত্যাদি দিয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ এর পরিবর্তে ওই মূল্য পরিমাণে টাকা দেয়। গ্রামের বাড়িতে থাকলে এমন অনেক সিন্নিই আমার পেটে যায়।

গাওয়ালা সিন্নি/ বালা মসিব্বত সিন্নি
আমরা ছোটবেলায় সমাজ বইয়ে পড়েছি, “মানুষ সমাজবদ্ধ জীব”। কারণ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে মানুষের জন্ম। তাই আদিকাল থেকে সবাই মিলেমিশে যে কোনো কাজ করার তাগিদ ছিল। যার ধারাবাহিকতায় আজকের এই সভ্য সমাজ গড়ে উঠেছে।

হাওরপাড়ের গ্রামের মানুষের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তারা যে কোনো কাজ একত্রে করতে ভালবাসে। সেটা যদি মারামারিও হয়, তা-ও। তাই গ্রামের মঙ্গলের জন্য সবাই যেন ভালোভাবে একে-অপরের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে সেজন্য গাওয়ালা সিন্নি করে থাকে। শুধু তাই নয়, গ্রামে যে কোনো রোগ-বালাই যেন প্রবেশ না করতে পারে সে জন্যও এ গাওয়ালা সিন্নি করে থাকে।

এ সিন্নি করার জন্য গ্রামের সকল ঘর থেকে চাল বা টাকা উঠিয়ে ১৫/২০টি বড় পাতিলে সিন্নি রান্না করে। এ সিন্নি গ্রামের সবাই যেন খেতে পারে তা আগে থেকেই একটা হিসাব করে রাখে।

এ তথ্যটি সংগ্রহ করা হয়েছে নিকলী সদর ইউনিয়নের কুর্শা গ্রামের আল আমিন-এর কাছ থেকে।

জবাবদিহিতা
আমি জানি, আমার জ্ঞানের স্বল্পতা ও যোগাযোগের ঘাটতি থাকায় সিন্নির যথাযথ বিষয়গুলো উঠে আসেনি। তাই আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, অন্য কোনো পর্বে বা আমার প্রকাশিতব্য বইয়ে সিন্নির সবগুলো তথ্য-উপাত্ত ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবো। যদি কেউ এ সিন্নিগুলোর বিষয়ে আরো কোনো তথ্য জানা থাকে বা জানেন এমন লোকের সন্ধান দেন তাহলে খুবই কৃতজ্ঞ থাকবো।

সংগ্রহ সূত্র :
১। জেলে বানু, বয়স-৫০, ধারীশ্বর, জারইতলা, নিকলী।
২। মোহাম্মদ আজমল আহসান, বয়স-৪৫, নিকলী সদর।
৩। আল আমিন, বয়স-৩৮ কুর্শা, নিকলী।
৪। জুমেনা খাতুন, লেখকের মা।
৫। শেখ মোশারফ হোসাইন, বয়স-৩৬. কামালপুর, জারইতলা, নিকলী।

তথ্যসূত্র : হযরত বুরহান উদ্দিন (রহঃ)-এর জীবনীগ্রন্থ, ক্বারী মোহাম্মদ নূর উদ্দিন চিশতি।

সহযোগিতায় : হানিফ রাজ।

 

সকল পর্ব :

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ২

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৩

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৪

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৫

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৬

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৭

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৮

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ৯

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১০

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১১

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১২

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১৩

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১৪

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১৫

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১৬

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১৭

হাওরপাড়ের সংস্কৃতি : পর্ব ১৮

Similar Posts

error: Content is protected !!