হালদার মা-মাছের পোনা বিক্রয় শুরু কাল থেকে

মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী প্রতিনিধি ।।

এশিয়ার বিখ্যাত প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী সংগৃহীত মা-মাছের ডিম গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সংগৃহীত মা-মাছের ডিমগুলো সনাতন পদ্ধতিতে মাটির কুয়া ও হ্যাচারীর কুয়ার পানি পরির্বতন করার মাধ্যমে ইতিমধ্যে ডিম থেকে পোনায় রূপান্তর হয়েছে। এই পোনার বর্তমানে চোখ ফুটেছে ও পোনার রক্ত চলাচলও শুরু হয়েছে বলে মৎস্য কর্মকর্তাসহ ডিম সংগ্রহকারীরা জানিয়েছেন। হালদার পোনার ব্যাপক চাহিদার কারণ হিসেবে জানা যায়, হালদা নদীতে কার্প জাতীয় রুই, কাতল, মৃগেল ও কালিবাউশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মা-মাছ ডিম দিয়ে থাকে। এই হালদার পোনা দ্রুত বর্ধনশীল।

মঙ্গলবার থেকে হালদা নদীর মা-মাছের পোনা বেচাকেনা শুরু হবে। প্রতি কেজি পোনার মূল্য আনুমানিক ৮০-৯০ হাজার টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পোনা ক্রয় করার জন্য ক্রেতারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিক্রেতাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখাসহ অনেক ক্রেতা আবার অগ্রীম বুকিং করে রেখেছেন। পোনা বেচা-কেনার সময় হালদার পাড়ে চাঁদাবাজির আশঙ্কা করছে পোনা বিক্রেতারা।

হালদা নদীর মা-মাছের ডিম সংগ্রহ করে ডিম থেকে পোনা রূপান্তরকারী ও পোনা বিক্রেতা কামাল জানান, নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে রাত-দিন এই ডিম নিয়ে পড়ে ছিলাম প্রতি মুহূর্ত ছিল আমার কাছে অনেক মূল্যবান। সঠিক পরির্চযা করে কুয়ার পানি বার বার পরির্বতন করে কৃত্রিম উপায়ে এখন ডিম থেকে পোনায় রূপান্তর হয়েছে। আমি ও আমার লোকজন সার্বক্ষণিক কঠোর নজরদারীর মাধ্যমে পোনাগুলো সংরক্ষণে রাখছি। এখন আকাশের তাপমাত্রা একটু বেশি তাই দুঃশ্চিন্তায় আছি। তবে তিনি হাসিমুখে বলেন, মঙ্গলবার থেকে আমরা পোনা বিক্রয় শুরু করবো। প্রতি কেজি পোনার মূল্য আনুমানিক ৮০-৯০ হাজার টাকা হতে পারে। অনেক গ্রাহক আমাদের সাথে অগ্রীম যোগাযোগ করেছে। তারা আসতেছে পোনা ক্রয় করার জন্য। পাশাপাশি প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পোনা ক্রয় করতে লোকজন যোগাযোগ করতেছে।

হালদার পাড়ের আরো কয়েকজন পোনা বিক্রয়কারী জানান, সব ঠিক থাকলে আমরা মঙ্গলবার থেকে পোনা বিক্রয় শুরু করবো। ইতিমধ্যে আমাদের কাছে পোনা ক্রেতারা আসতে শুরু করেছে। অনেক কষ্ট করে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে পরিচর্যার মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে ডিম থেকে পোনায় রূপান্তর করেছি। সঠিক মূল্য পেলে সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। পোনার দামের কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, একজন এক রকমের দাম বলছে যে উপযুক্ত দাম দিবে তার কাছে বিক্রয় করবো। বৃষ্টি-বাদল মাথায় নিয়ে ডিম সংগ্রহ করার পর রাত দিন নির্ঘুম পরিশ্রম করে হালদার পাড়ে সনাতন পদ্ধতিতে হ্যাচারি ও মাটির কুয়াতে রেণু ফুটানোর কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। ডিম হতে পোনা উৎপাদন করে প্রতি কেজি পোনা এবার পানিসহ উপযুক্ত দামে বিক্রি করবে বলে জানিয়েছেন মাদারীপুল এলাকার হ্যাচারীর ডিম সংগ্রহকারীরা। মাছুয়াঘোনার ডিম সংগ্রহকারী আবদুল খালেক জানান, হ্যাচারীর দায়িত্বরত ব্যাক্তি ও মৎস্য কর্মকর্তার অবহেলার কারণে আমার অনেক ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। সামান্য ডিম থাকলেও তা বিক্রয় করবো।

ডিম সংগ্রহকারীদের ডিম নষ্ট হওয়ার কারণ ও হ্যাচারীর দায়িত্বরত ব্যক্তি ও মৎস্য কর্মকর্তার নানান অবহেলার কারণ দেখার জন্য রোববার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোমিনুল হক হাটহাজারীর তিনটি হ্যাচারী পরির্দশন করেন। পরির্দশনকালে তিনি ডিম সংগ্রহকারীদের আশস্ত করেন যে, আগামী পূর্ণিমা তিথির পূর্বে অবহেলিত কাজ সম্পন্ন করা হবে। এবং তিনি প্রতিটি হ্যাচারীর ডিম সংগ্রহকারীদের পোনা পরির্দশন করেন। হালদা বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া গতকাল গড়দুয়ারা ডিম সংগ্রহকারীদের ডিম থেকে রেনু ফুটানোর মাটির কুয়াগুলো পরিদর্শন করেন।

হাটহাজারী উপজেলার সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম জানান, আমি শাহ-মাদারী ও মাছুয়াঘোনা মৎস্য হ্যাচারী পরির্দশন করেছি। পোনা বিক্রয়কারীরা আনন্দের মধ্যে আছে। মঙ্গলবার থেকে পোনা বিক্রয় শুরু হবে। গত বছরের তুলনায় এবার দাম একটু বেশি থাকবে ধারণা করছি। প্রতি কেজি পোনা পানিসহ ৮০-৯০ হাজার টাকা হবে। তবে পর্যাপ্ত পোনা আছে। কিছু ডিম ও পোনা বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। তাতে কোন প্রভাব পড়বে না। আশা করি পোনা বিক্রয়কারীরা উপযুক্ত দাম দিয়ে তাদের পোনা বিক্রয় করতে পারবে।

এদিকে আগামী আগামী পূর্ণিমা তিথিতে দ্বিতীয় দপায় হালদা নদীতে মা-মাছ আরেক দফা ডিম ছাড়তে পারে বলে জানান মৎস্য কর্মকর্তাসহ ডিম সংগ্রহকারীরা। তাই দ্বিতীয় দফা হালদা নদীতে মা-মাছ ডিম ছাড়ার আশায় ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে।

Similar Posts

error: Content is protected !!