নিকলী এখন নির্বাচনী প্রচারণায় ভাসছে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বার পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মাঠে-ময়দানে, অফিস অঙ্গন যেখানেই দেখা মিলছে স্থানীয়দের জড়িয়ে ধরে, হাত মিলিয়ে দোয়া কামনা করছেন। তরুণ প্রার্থীদের কেউ কেউ এলাকার মুরুব্বিদের পা ছুয়ে আরো আপন হওয়ার চেষ্টা করছেন। পাড়া-মহল্লার নেতৃস্থানীয়দের নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উঠোন-বৈঠকের আয়োজন চলছে নিয়মিত। ভোটাররা বরাবরের মতো বিচক্ষণতার সাথে তাদের সমর্থন দেয়া-না দেয়ার কথা প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ পছন্দের সম্ভাব্য প্রার্থীকে সামনে পেয়ে আপন মনেই স্লোগান তুলছেন “আমার ভাই, তোমার ভাই; …… ভাই, ….. ভাই”।
প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ করছেন সম্ভাব্য তরুণ প্রার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজস্ব আইডিতে দেখা যাচ্ছে তাদের প্রচার-প্রচারণা। কেউ কেউ ফেসবুক ফ্যান পেজ/গ্রুপ খুলে নিকলীর ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাঝে পৌছে দিচ্ছেন আমন্ত্রণ। কোনো কোনো প্রার্থী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নির্বাচনী অফিস আদলে ক্যাম্প স্থাপন করেছেন। স্থানীয় ভোটারদের নিয়মিত চা-পান দেয়া হচ্ছে। কেউবা হাট-বাজারের নির্দিষ্ট চা-স্টলের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন, এলাকার লোকজনকে বিনামূল্যে আপ্যায়নের জন্য। লোকসমাগম হয় এমন স্থানে নিজ খরচায় প্রার্থীরা টেলিভিশন, সিডি প্লেয়ারের মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করছেন। এর পাশাপাশি চলছে চা-পান খাওয়ানোর ধুম। কোনো কোনো প্রার্থী সন্ধ্যার পর নিজ বাড়িতে করা বিশেষ প্রচারণা অফিসে রুটি-ভাজি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন।
প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে দলীয় মনোনয়নের ব্যানারে। যারা নির্দিষ্ট দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী তারা তাদের দল থেকে মনোনয়ন পেতে মরিয়া। উপজেলা পর্যায়ের বড় নেতা, জেলা পর্যায়ের বড় নেতা; এমনকি জাতীয় পর্যায়ের দলীয় নেতৃত্বের কাছেও ঘুরে ফিরছেন দলীয় সমর্থন পেতে। এমনও কেউ কেউ আছেন, যারা মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। দলীয় সমর্থন না পেলে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নেই বড় দু’দলে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে।
দলের জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের ছবি সংবলিত পোস্টারে শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ঝুলানো হয়েছে অলি-গলিতে। কারো প্রচারণাপত্রে অঞ্চলভেদে প্রতিশ্রুতিমূলক স্লোগান তুলে ধরা হয়েছে। উপজেলাধীন ৭টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে মোট ৫৮ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রচারণার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আগের তুলনায় তরুণ প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা বেশি। ধারণা করা যাচ্ছে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হলে প্রার্থীর সংখ্যা আরো বাড়বে। জাতীয় পার্টি ইউনিয়ন পর্যায়ে নিজস্ব প্রার্থী সংকটে ভুগছে। জামায়াতে ইসলামি ও চরমোনাই পীরের অনুসারি থাকলেও নির্বাচনী প্রচারণায় তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনী প্রচারণায় যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের তালিকা উল্লেখ করা হলো :
নিকলী সদর ইউনিয়ন
আওয়ামীলীগ : বর্তমান চেয়ারম্যান কারার বুরহান উদ্দিন আহমদ, মীর সিরাজুল হক ভূইয়া, মরহুম আবদুল হামিদ হেডস্যারের ছেলে এডভোকেট মাসুদ আহমেদ, খুরশেদ আলম (স্বাধীন), কাওছারুল আলম, আল আমিন।
বিএনপি : ডাঃ কফিল উদ্দীন, হারুন আল কাইয়ুম, কারার ইফতেখার আহমেদ আরিফ, সাজ্জাদ হোসেন স্বাধীন, আক্তার হোসন রাজা আবু।
স্বতন্ত্র : আছমত আলী, শহিদুল্লাহ খোকন।
দামপাড়া ইউনিয়ন
আওয়ামীলীগ : বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, আবু তাহের, আলী আকবর (কন্ট্রাকটর), কানন।
বিএনপি : তাজুল ইসলাম (ঠিকাদার), সাইফুল ইসলাম।
স্বতন্ত্র : মোকারম হোসেন সর্দার, আজিজুল ইসলাম।
কারপাশা ইউনিয়ন
আওয়ামী লীগ : আঃ বারিক, নুরুল ইসলাম বাবু, মোঃ মির্জালী, আঃ কাদির বকুল, এ এম রুহুল কুদ্দুছ ভূঁইঞা (জনি), দিদারুল হক খান পলাশ, ত্বাকী আমান খান, বাহারুল হাসান বাবুল।
বিএনপি : আশরাফ উদ্দিন, গোলাম রাব্বী, মফিজ উদ্দিন।
স্বতন্ত্র : বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বী (সবুজ), টনি।
সিংপুর ইউনিয়ন
আওয়ামীলীগ : বর্তমান চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, জাকির হোসেন চান মিয়া।
বিএনপি : সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তার উদ্দিন, আবদুর রব মেনু, হারুন অর রশিদ।
ছাতিরচর ইউনিয়ন
আওয়ামীলীগ : এডভোকেট বদরুল আমিন চৌধুরী (মানিক), জামাল উদ্দিন, রবিউল আলম।
বিএনপি : বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ হানিফ ইসলাম, ইন্জিনিয়ার পরশ মাহমুদ।
গুরুই ইউনিয়ন
আওয়ামীলীগ : হাজী মোঃ আকবর আলী, বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, আবদুল হামিদ, গোলাম রহমান, আতিকুল ইসলাম বকুল।
বিএনপি : মোঃ আবু তাহের, আবদুস সাত্তার সাগর, তাহের উদ্দিন।
জারুইতলা ইউনিয়ন
আওয়ামীলীগ : সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বাতেন, মানিক মিয়া, আজমল হোসেন।
বিএনপি : বর্তমান চেয়ারম্যান রইছ উদ্দিন, শামসুজ্জামান সরকার, আলম মেম্বার, হাজী মাসুক।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলাটি হাওরবেষ্টিত হওয়ার কারণে কিছুদিনের মধ্যেই ধানসহ বিভিন্ন ফসল আহরণের কাজ শুরু হবে। আঞ্চলিক এমন বিষয়গুলো বিবেচনায় আগামী জুন মাসের ১ম সপ্তাহে ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।