নরসুন্দা নদীর দেশে
নরসুন্দা নদীর দেশে
ফুল পাখিরা ওঠে হেসে
বহু যুগের নীরবতার
দৃশ্যগুলো ভালোবেসে।
ওই যে দূরের শ্যামল শোভা
চিরকালের মনোলোভা
ছবির মতো হাতছানি দেয়
শাপলা ভরা জলের ডোবা।
ওই যে নদী নিরবধি
একটুখানি থামতো যদি
আমি হতাম সঙ্গী যে তার
স্থবিরতা থাকতো না আর!
নরসুন্দা নদীর দেশে
দৃশ্য কত ওঠে হেসে
স্বপ্নগুলো বেড়ায় ভেসে
অনাদি সুর ভালবেসে।
উজান ভাটির স্মৃতি
উজান থেকে এসেছিলো
একটি দারুন পাখি
ভোর বিহানে ভাটির দেশে
উঠতো যে রোজ ডাকি।
সেই পাখিটার ডানায় ছিলো
স্বপ্ন আয়োজন
লোকায়ত সুরের গানে
জুড়িয়ে দিতো মন।
কখনো তার কণ্ঠে ছিলো
এমন করুণ সুর
বহুকালের স্বপ্ন যেনো
রাঙিয়ে দিতো ভোর।
হারানো এক নদীর মতো
চমকানো তার চোখ
ফসলভরা মাঠের মতো
উঠতো নেচে বুক।
উজান ভাটির অনেক স্মৃতি
ছিলো পাখির মনে
এখন আমি তারে খুঁজি
গভীর সঙ্গোপণে।
স্টিলের পাখি
মেলা থেকে কিনে ছিলাম
একটি স্টিলের পাখি
যত্ন করে তারে আমি
শোপিস করে রাখি।
স্টিলের পাখি স্টিলের পাখি
ড্রয়িং রুমের শোভা
শুকনো মৃত গাছের মতো
কেমন নীরব বোবা।
উড়াল দেয়া ডানা দুটি
দেখতে দারুণ লাগে
বনের পাখির প্রাণ শিহরণ
একটু হলেও জাগে।
অষ্ট প্রহর দেখি তারে
আসল পাখির মতো
দূর নীলিমার স্মৃতি মনে
জাগায় অবিরত।
তুই কী শুধুই ইমিটেশন
ওরে স্টিলের পাখি?
আমার মতো একটু খানি
ভিজে কী তোর আখি?
আখির ভেতর আছে শুধু
রাংতা রঙের খেলা
মনের মাঝে ঢেউ জাগানো
ক্ষণকালের মেলা!
একটি সোনার পাখি
আমার ছিলো একটি সোনার পাখি
বহুযুগের ভালবাসায় করতো ডাকাডাকি
রোদের আলো মেঘের ছায়া আনতো বয়ে রোজ
সবুজ রঙিন স্বপ্নগলোর দিতো আমায় খোঁজ।
দিতো আমায় ভোর বিহানে নতুন জাগরণ
যার উছিলায় ফুলের শোভায় জাগতো আমার মন
যার উছিলায় ফিরে পেতাম হারানো সুখ-শান্তি
যার উড়ালের গতি আমার ঘুচিয়ে দিতো ভ্রান্তি।
নদীর বয়ে যাওয়ার মতো গায়তো গতির গান
ভোরের হাওয়ার মতো আমার জুড়িয়ে দিতো প্রাণ
আমার জন্যে আনতো বয়ে বরাভয়ের বাণী
সেই পাখিটা খুঁটে খেতো আমার যতো গানি।
আমার বাগান ভরে তখন ফুটতো হাজার ফুল
আমার ঘরে স্বপ্ন-সাধের বইতো হুলোস্থূল
আমার মাঠের শস্যদানা ধাঁধিয়ে দিতো চোখ
আমার বাড়ির মানুষ পেতো স্বপ্নগড়ার সুখ।
সেই পাখিটা অচিনলোকের যাদুরকাটি দিয়ে
আমার যতো স্বপ্ন ও সাধ রাখতো যে আগলিয়ে
আমার যতো ব্যর্থতা আর আমার যতো কান্তি
তার গানেতে দূর হয়ে সব আসতো নেমে শান্তি।
সইলো না সে সুখ বেশিদিন, দুষ্ট প্রতিবেশী
কঠিন আঘাত হানলো শেষে গোপনে বিদ্বেষী
অনেক ষড়যন্ত্রে আমার মরলো সোনার পাখি
শান্তি এবং সুখের সুরে উঠতো যে রোজ ডাকি।
আমার একটি গল্প
আমার একটি গল্প আছে
রঙের মায়ায় ভরা
ঠিক যেন ওই শান্ত নদীর
বাঁকের বসুন্ধরা
যেখানটাতে আকাশ এসে
নামে ধানের ক্ষেতে
অনাদি সেই শ্যামলিমার
নিখাদ শোভা পেতে
টিলার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা
একটি হিজল গাছ
তিন পুরুষের আয়ুতে তার
বদলে গেছে ধাচ
জটার মতো রহস্য তার
কালের পটে লেখা
সেই কাহিনী একান্তই
নিজের চোখে দেখা।
নিজের চোখে দেখা আমার
তিন পৃথিবীর আলো
চান্নি পসর রাতগুলো কী
স্নিগ্ধ ও জমকালো।
সে সব অভিজ্ঞতা নিয়ে
ফুল আমার বুক
নদীর দেশে পাখির বেশে
কুড়িয়ে পাওয়া সুখ।
আত্মপরিচয়
আম্মা ছিলেন বটের ছায়া
আব্বা উদার মাঠ
ভাটির দেশের প্রকৃতিতে
আমার প্রথম পাঠ
মাঠের প্রাচীন গাছটি যেন
আদ্যিকালের গুরু
তারই সবুজ বেষ্ঠনীতে
মনের পঠন শুরু
নদীর সাথে সখ্য আমার
মাঠের সাথে সখ্য
দূরের কোন আকাশ হয়ে-
উঠাই যেন ল্য
সন্ধ্যা হলে পাঠ গুটিয়ে
মায়ের কাছে ফেরা
আব্বা বলেন আমার ছেলে
হবেই সবার সেরা !
আম্মা আমার মনের মাঠে
বপন করেন আশা
আব্বা তাতে জাগিয়ে তুলেন
ফুল ফসলের ভাষা ॥