পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজার পাঠকের চাহিদা পূরণ করছে


সৈয়দ সোহরাব ।।

কবি সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার (পাবলিক লাইব্রেরি) প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পাঠকের জ্ঞান আহরণের চাহিদা পূরণ করছে।

দুই লক্ষাধিক বইয়ে সমৃদ্ধ এ লাইব্রেরিতে এখন প্রতিদিনই পাঠকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাঠকক্ষে স্থান সংকটের অভাবে অনেক পাঠককে ফিরেও যেতে হচ্ছে।

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশীষ কুমার সরকার বাসস’কে জানান, অধিদপ্তর নগরবাসীর পাঠ্যাভ্যাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে বয়সভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় লাইব্রেরিতে পাঠকের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১২ সাল থেকে প্রতিযোগিতার এ আয়োজনটি শুরু হওয়ায় পাঠক সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ তত্ত্বাবধানে প্রতিবছর বাংলা নববর্ষ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গ্রন্থাগার থেকে দেশব্যাপি বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

মহাপরিচালক বলেন, এসব প্রতিযোগিতার কারণে প্রতিনিয়ত মানুষের পাঠ্যাভ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মানুষ লাইব্রেরিমুখি হচ্ছে। আর এর চাপ রাজধানীর পাবলিক লাইব্রেরির ওপরও পরছে। তবে স্থান সংকটের এ অবস্থা দ্রুত কেটে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী বছরই শুরু হতে যাচ্ছে পাবলিক লাইব্রেরির নতুন ভবন নির্মাণের কাজ। ১১ তলাবিশিষ্ট এ ভবন নির্মাণ হলে এ সংকট আর থাকবে না।

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের প্রধান লাইব্রেরিয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান জানান, রাজধানীর পাবলিক লাইবেরির বইয়ের সংখ্যা বর্তমানে ২ লাখ ৭ হাজার ৪৪০টি। এর মধ্যে দুষ্প্রাপ্য বই আছে প্রায় ৪ হাজার, আর রেফারেন্স বই রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার।

এ দু’ধরনের বই বাইরে নিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ বা নিয়ম নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু লাইব্রেরিতে বসেই পড়তে বা নোট নিতে পারবেন পাঠকগণ। তবে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক, গল্প, উপন্যাস, সাময়িকী, ইতিহাসভিত্তিক গ্রন্থ ইত্যাদি লাইব্রেরির সদস্যগণ বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন।

প্রধান লাইব্রেরিয়ান বলেন, আমাদের লাইব্রেরিতে দুষ্প্রাপ্য বইয়ের তালিকায় ২শ’ থেকে আড়াই শ’ বছরের পুরনো বই রয়েছে। যার অধিকাংশ গ্রন্থ ব্রিটিশ শাসনামলে লন্ডন থেকে প্রকাশিত।

তিনি বলেন, এর মধ্যে ‘এশিয়া’কে নিয়ে লেখা স্যার উইলিয়াম জনস-এর বইটি লন্ডন থেকে ১৭৯৯ সালে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মহাদেশের ইতিহাস, ভ্রমণ কাহিনী, জীব-বৈচিত্র্য ও পশুপাশি নিয়ে লেখা দেড় থেকে দুশ’ বছরের পুরনো বইও লাইব্রেরিতে রয়েছে।

৫শ’ টাকা জামানতের ভিত্তিতে দেশী-বিদেশী সকলেই এ লাইব্রেরির সদস্য হতে পারেন উল্লেখ করে পাবলিক লাইব্রেরির আরেক লাইব্রেরিয়ান এ এইচ এম কামরুজ্জামান জানান, এ লাইব্রেরির সদস্যগণ প্রতিবার সর্বোচ্চ ২টি বই ১৫ দিনের জন্য বাসায় নিয়ে যেতে পারেন। এভাবে ওই সদস্য আগের ২টি বই জমা দিয়ে আবার ২টি বই নিতে পারবেন।

তিনি বলেন, কবি সুফিয়া কামাল জাতীয় গ্রন্থাগারে ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য, গণিতসহ সব ধরনের বই রয়েছে। শিশুতোষসহ পুরনো পত্রপত্রিকা এবং সাময়িকীও পাওয়া যায় এ লাইব্রেরিতে।

লাইব্রেরির বই সংগ্রহ প্রসঙ্গে প্রধান লাইব্রেরিয়ান জিল্লুর রহমান বলেন, প্রতিবছর আড়াই কোটি টাকার বই টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেনা হয়। এ জন্য ১৫ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। বই সিলেকশনসহ যাবতীয় কাজ ওই কমিটিই করে থাকে।

পাঠকদের সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে পাবলিক লাইব্রেরি ফ্রি ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং প্রয়োজনে বইয়ের পৃষ্ঠা ফটোকপি করার ব্যবস্থা রেখেছে উল্লেখ করে লাইব্রেরির রেফারেন্স পাঠকক্ষ সহকারী পারভীন বেগম জানান, দ্বিতীয় তলায় রয়েছে সাধারণ পাঠক। তৃতীয় তলায় পত্রিকা, রেফারেন্স ও জেরক্স বিভাগ এবং নিচতলায় রয়েছে শিশু-কিশোর পাঠক। ছয় থেকে ১৫ বছর বয়সী যে কেউ সেখানে বসে বই পড়তে পারবে।

তিনি জানান, শুক্রবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত লাইব্রেরি খোলা থাকে। শিশু-কিশোর পাঠক খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

Similar Posts

error: Content is protected !!