মোবারক হোসাইন সাদী, বিশেষ প্রতিনিধি ।।
“দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া”—
এ মহাসত্য বাণীকে প্রমাণ করার জন্য মানুষ দুনিয়ার সমস্ত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়ায়। খোঁজার চেষ্টা করেন প্রকৃতি কোথায় তার অপরূপ ঢেলে দিয়েছে প্রকৃতিপ্রেমিকদের আকর্ষণ করার জন্য।
বাড়ির পাশেই অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি উপভোগ না করে মানুষ ছুটে বেড়ান পৃথিবীর নানা প্রান্তে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পাহাড়, হাওর, বাঁওড়, ধানক্ষেত, নদীবেষ্টিত প্রিয় মাতৃভূমির লোকায়িত রূপ অধরাই থেকে যায় বহু ভ্রমণপিপাসুর কাছে।
বাংলাদেশে অসংখ্য পর্যটন এলাকা রয়েছে, যার মধ্যে কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওর প্রকৃতির অশেষ দান। দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমীর মনে আনন্দের ঢেউ তুলে। বর্ষা কিংবা শীত সব ঋতুতেই হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন দর্শনার্থীরা। সম্প্রতি নিকলী হাওরে লোকালয়ঘেঁষা একখণ্ড জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষকে কেন্দ্র করে দর্শনার্থীদের ঢল দেখা যায়।
দর্শনার্থীদের অসচেতনতা কৃষকের বড় রকমের ক্ষতির কারণও হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ক্ষেতের ভেতরে ছবি তোলা, ফুল চারাগাছ উপড়ে ফেলা। সেই সাথে ক্ষতি হয়েছে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য ফসলের আবাদি জমিও। রীতিমতো বিরক্তবোধ করছেন কৃষকরা। তাই তাদের উৎসাহ দিতে ও কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে দিতে এগিয়ে এসেছে “নিকলী উপজেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ টিম”।
আর্তমানবতার এই মহতি কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন নিকলী উপজেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ টিমের অন্যতম সমন্বয়ক মুশফিকুর রহমান তুষার। তিনি প্লে কার্ডের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের কাছে কৃষকের ক্ষতিপূরণের আহ্বান জানান; “যার যেমন সামর্থ্য আছে সে অনুযায়ী কৃষকের ক্ষতি পোষাতে এগিয়ে আসুন” এমনটাই ছিল তার আহ্বান।
এতে আরো অংশ নেয় জারইতলা ইউনিয়ন করোনাভাইরাস প্রতিরোধ টিমের সদস্যরাও।
নিকলী উপজেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ টিমের প্রধান উপদেষ্টা ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (মাদারীপুর) মামুনুর রশিদ জানান “সবার সাথে আলোচনা করে পরিকল্পনামাফিক কাজ করো। অন্তত ৪/৫ জনকে সাথে নাও। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সবাই আইডি কার্ড সাথে রেখো। সুন্দর উদ্যোগে সকলের সফলতা কামনা করি।”
কৃষকের ক্ষতিপূরণের মুখ্য ভূমিকা পালনকারী এ কার্যক্রমের মুখপাত্র মুশফিকুর রহমান তুষার জানান, “ভালো কাজের সাথে জড়িত থাকতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমরা আশা করবো, ঘুরতে আসা মানুষদের যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। সেই সাথে অন্য সামর্থ্যবান মানুষেরাও অংশগ্রহণের মাধ্যমে খেটেখাওয়া মানুষদের সৌন্দর্যবর্ধন কাজে উৎসাহিত করবেন।”
নিকলী উপজেলা আবহাওয়া অফিসের সামনে প্রতিবছরের মতো কয়েকজন কৃষক তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে সূর্যমুখী চারা রোপণ করেন। এই ফসল থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে চলে তাদের পরিবারগুলো।
সম্প্রতি সূর্যমুখী ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে নিকলীসহ আশেপাশের অনেক উপজেলার হাজার হাজার মানুষ এই সূর্যমুখী ক্ষেত দেখতে ও ছবি তুলতে ভিড় জমান। এমনকি দর্শনার্থীরা ক্ষেতের ভিতরে ঢুকে ছবি তুলছেন; যাতে করে কৃষকরা বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
তুষার আরো জানান, কৃষকের ন্যূনতম ক্ষতি পোষাতে আমরা “সহযোগিতা বক্স” বসিয়েছি। এখানে আপনার দেয়া “শুভেচ্ছা উপহারের” মাধ্যমে কৃষকের বিশাল ক্ষতির কিছুটা হলেও কমে আসবে।”
“নিকলী উপজেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ টিম”-এর অন্যতম সমন্বয়ক ও ঢাকাস্থ নিকলী ছাত্রপরিষদের সহ-সভাপতি মাহফুজ আলম জিয়া বলেন, “আসুন আমরা সবাই এই উদ্যোগটিকে প্রচার করি এবং কৃষকদের সহযোগিতার মাধ্যমে ভালো কাজে উৎসাহিত করি। যেভাবে আমাদের প্রচারের মাধ্যমে পর্যটক আসতে উৎসাহ পেয়েছে। যার ফলে কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে আবার প্রচার করে কৃষককের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সাহায্য করি।”