ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি ।।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো নওগাঁর ধামইরহাটে উন্নয়ন অগ্রযাত্রাই অতীতের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তবুও যেন নিন্দার শেষ নেই। আসলে ২/১টি জায়গায় নাকাল অবস্থাও দেখা গেছে। প্রকৃতপক্ষে এর জন্য দায়ী দায়িত্বশীল স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। রাস্তা না থাকায় রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা, ছেলেমেয়েদের মানসম্মত লেখাপড়ায়ও বিঘ্ন ঘটছে। এমন একটি নিদারুণ কষ্টের ঘটনা উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নে।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত মাস্টারপাড়া ও মজিবর পাড়ায় বসবাস করে প্রায় ২ শতাধিক পরিবার। জমির আইল বা ডগর দিয়েই চলাচল করতো ওই এলাকার বাসিন্দারা। কালের বিবর্তনে জনসংখ্যা বাড়লেও আজ অবধি কোন রাস্তা পায়নি দু’টি পাড়ার জনগণ। পেয়েছে শুধু মেম্বার-চেয়ারম্যানদের প্রতিশ্রুতি। বর্তমান বর্ষাকালে একপশলা বৃষ্টি হলেই দেড় ফিটের সরু চিকন আইল দিয়ে হাঁটতে গিয়ে এই এলাকার লোকজন পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
স্থানীয় ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান জানান, আমরা ১৯৫৬ সাল থেকে এই গ্রামে বসবাস করছি। রাস্তা না থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, বর্ষায় কাদা-পানিতে বাড়ির বাইরে যাওয়া যায় না। রাস্তা না থাকায় গ্রামের মেয়েদের বিয়েশাদিও ঠিকমত দেয়া যায় না।
ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী কাজীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আরমান, মঙ্গলবাড়ী শহীদ আব্দুল জোব্বার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অপর শিক্ষার্থী মির্জাতুন নাহার জানান, বর্ষাকালে বই নিয়ে স্কুলে যাওয়া যায় না। কাদাপানিতে ভিজে যায়, ক্লাস মিস হয়।
স্থানীয় ৮০ বছর বয়সী হুরমত আলী কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলেন, “বাবারা একটা ভ্যান রিক্সা তো দূরের কথা, হুন্ডা (মোটরসাইকেল) নিয়েও যাওয়া যায় না।”
দুটি গ্রামের লোকজনের গমনাগমনের মতো কোনো রাস্তা নেই। বর্ষাকালে এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হলে, গৃহবন্দী থাকতে হয় পরিবারের সবাইকে। ফলে তারা খুবই কষ্টে জীবন যাপন করেন।
৪ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার রশিদুল সাংবাদিকদের উপস্থিতি জেনেও সামনে আসেননি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওসমান আলী বলেন, “এই এলাকায় জমির মাালিক গোলজার, আকবর আলী, কুদ্দুস ও সামসুলসহ সবাইকে সাথে নিয়ে বৈঠক করেছি। আমি ৮০ হাজার টাকার মতো জমিওয়ালাদের দিতেও চেয়েছি। কিন্তু তারা কেউ রাস্তা দিতে সম্মত হয় না। এ জন্যই দীর্ঘদিনের পুরনো দু’টি পাড়ার মাঝখানে রাস্তাটি করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে ধামইরহাট উপজেলা প্রকৌশলী মো. আলী হোসেন বলেন, প্রথমে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দৃশ্যমান রাস্তার অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। স্থানীয় ৪০ দিনের কর্মসূচি দিয়েও সেটা করা যেতে পারে। তারপর উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর সরেজমিন পরিদর্শন করে একটি আইডির মাধ্যমে রাস্তার উন্নয়ন কাজ করে দেয়া সম্ভব।