নিজের জীবনের বিনিময়ে মনিবের সন্তানকে রক্ষা করলেন এক বাংলাদেশী গৃহকর্মী সাফিয়া। সমুদ্রে ডুবে মরার উপক্রম হয় তার মনিবের এক শিশু ও ওই শিশুর তিন বন্ধু। তা দেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাফিয়া। তিনি চিৎকার করতে থাকেন। তিনি মনিবের সন্তানকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেই দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন। পানি থেকে তুলে আনলেন ওই চার শিশুকে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সমুদ্রের প্রবল স্রোত তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করেও আর তীরে উঠতে পারেননি। এর মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালনে এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে রইলেন তিনি। তাকে নিয়ে গতকাল সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি সমুদ্র সৈকতে ডুবন্ত চার শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে নিয়েই ডুবে মরেছেন সাফিয়া। তবে তার প্রাণের বিনিময়ে হলেও, বেঁচে গেছে শিশু চারটি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এমিরেটস। আবু ধাবির দাবিয়া সৈকতে পানিতে ভেসে যাচ্ছিল চার শিশু। তা দেখে সাফিয়া চিৎকার দিয়ে শিশুগুলোকে বাঁচাতে পানিতে নামেন। তিনি এক এক করে সবাইকে পাড়ে তুলতে সক্ষম হন। কিন্তু নিজেই প্রচণ্ড স্রোতে আটকে যান পানিতে। উদ্ধার হওয়া এক শিশুর পিতা আবু আবদুল্লাহ বলেন, আমি যখন সৈকতে ফিরে এলাম, তখন দেখি সাফিয়া সাঁতার কেটে তীরে ফিরে আসতে চাইছেন। কিন্তু পারছেন না। এক সময় পানি এসে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় আরও দূরে। আস্তে আস্তে তিনি হারিয়ে যান আমাদের দৃষ্টিসীমা থেকে। একপর্যায়ে আমরা তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই বটে। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স আসার একটু আগেই তিনি মারা যান। তিনি বলেন, সাফিয়া আমার ছেলে ও তার ৩ বন্ধুকে বাঁচাতে বীরাঙ্গনার মতো কাজ করেছেন। আমরা এ নারীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তার মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। তিনি আরও জানান, সাফিয়া যেসব শিশুকে উদ্ধার করেছে, তারা সবাই ৬-১০ বছর বয়সী। প্রায় চার বছর ধরে তার পরিবারের সঙ্গে ছিলেন সাফিয়া। তিনি আরও জানান, ২ মাস পর নিজের মেয়েকে বিয়ে দেবার পরিকল্পনা করেছিলেন সাফিয়া। আবু আবদুল্লাহ বলেন, খুবই সাহসী ছিলেন সাফিয়া। আমাদের সন্তানদের জন্য নিজের জীবন নির্দ্বিধায় উৎসর্গ করে গেছেন তিনি। এক মহান ও সাহসী কাজের জন্য নিজের জীবন দান করে গেছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে সাফিয়ার পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন তিনি।
একই সঙ্গে সাফিয়ার মৃতদেহ দেশে পাঠাতে ও চার শিশুর পরিবারের কাছ থেকে কিছু অর্থ উঠিয়ে তার পরিবারকে দেয়ার জন্য কাজ করছেন।