দুঃস্বপ্ন

depression

কফিল উদ্দিন মিঠু ।।

রহিম গরিবের পোলা, মা-বাবার অনেক আদরের ছেলে, ছেলেকে পড়াশোনার করানোর জন্য অনেক আগ্রহ। রহিমের বাবা একজন সাধারণ ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী। তিনি বাসার কাজ শেষ করে কিছু হাতের কাজ করতেন ছেলের পড়াশোনার জন্য।

রহিম যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে তখন হঠাৎ তাদের পরিবারে নামে দুঃখের কালো ছায়া। এলাকার একটা বিষয় নিয়ে দুই দলে বিভক্ত হলে রহিমের বাবাও একদলে পরে। শুরু হলো মারামারি। এতে রহিমের বাবার দলের একজন নাবালক শিশুর প্রাণ গেল, এতে এলাকার মধ্যে শুরু হয় তোলপাড়; উভয় দলের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। উভয়পক্ষের মধ্যে শুরু হয় মামলা। কেউ মেরে এলাকা ছাড়া আর কেউ না মেরে এলাকা ছাড়া হলো। উভয় দলের সবার নামেই মামলা হয় ছোট-বড় সবার। ভাগ্য ভালো, রহিম এলাকায় থাকতো না। তার বাবা তাকে এলাকার বাইরে রেখেই পড়াশোনা করায়। তাই রহিমের নামে মামলা হয় নাই।

এক পর্যায়ে রহিমের বাবার অনেক ঋণ হয়ে যায়। তখন চলে গেলেন গ্রাম ছেড়ে। সেখানে একটি ইটের ভাটায় কাজ করেন। রহিম তার বাবার বন্ধু স্বপনের একটা সাইনবোর্ড ব্যানারের প্রতিষ্ঠান দি স্কুল অব আর্টে কাজ করে। রহিম তাকে পিতার মতই শ্রদ্ধা করে। তিনিও রহিমকে পড়াশোনার খরচ থেকে শুরু করে সামর্থ অনুযায়ী সহযোগিতা করেন। এভাবে চলতে লাগলো রহিমের পড়াশোনা।

মাস তিনেক পড়ে রহিমের অষ্টমের বৃত্তির রেজাল্ট দেয়। রহিম বৃত্তি পেয়ে বেশ আনন্দিত। তার কাকা স্বপনকে বললে তিনিও অনেক খুশি হোন বিষয়টা শোনে। এভাবে চলতে থাকে রহিমের পথচলা।
depression
দেখতে দেখতে দুইবছর পার হয়ে যায়। কয়েক মাস পর রহিমের এসএসসি পরীক্ষা। রহিম কাজ আপাতত বন্ধ রাখে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যে। পরীক্ষা শেষে রহিমকে তার কাকা বললেন, পরীক্ষার পর তোমার কি সিদ্ধান্ত। তখন রহিমের মোটামুটি আগে থেকেই একটা স্বপ্ন ছিল গ্রাফিক্স ডিজাইনার হবে। সেটা অবশ্যসপ্তম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায়। প্রতিষ্ঠানে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হলেও বেশি কিছু শিখতে পারেনি। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড আর বেসিক কিছু শেখে। রহিমের কথা শোনে তার চাচা বললেন, ভালো সিদ্ধান্ত।

এরআগে একটা কথা বাদ পড়ে গেল। আর্ট স্কুলে থাকা অবস্থায় রহিমের হঠাৎ পরিচয় হয় চঞ্চল মাহমুদ (ছদ্মনাম) নামের একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের সঙ্গে। যার কজের বেশ সুনাম আছে। এসএসসি পরীক্ষার পর রহিম তার কাছে চলে আসে। তিনি তাকে গ্রহণ করেন এবং কাজ শেখান। এখানে রহিম একটা অ্যামাউন্ট পায় যেটা দিয়ে তার খরচ চালায়। কিছুদিন পর রহিমের এসএসসি (দাখিল) পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়। রহিমের কৃতিত্বের সঙ্গে ভালো রেজাল্ট করে এ+ পায়। তারপর শহরের কাছাকাছি একটা মাদরাসায় ভর্তি হলো। এভাবে চলতে থাকে রহিমের ডিজাইন শেখা।

দুই বছর পরে আলিম (এইচএসসি) পরীক্ষা। পরীক্ষার জন্য রহিম তার উস্তাদ চঞ্চল ও অফিসের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে পরীক্ষা শেষ করে। পরীক্ষা দেয়ার পর থেকে রহিমের মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছে তার ভেতরে লুকানো স্বপ্ন চারুকলায় ভর্তি হওয়া। কিন্তু ফ্যামিলির দূরাবস্থা থাকায় সে এখন হতাশা আর কপালের দোষ দেয়া ছাড়া কিছু পারছে না। যদিও রহিমের জন্য ঢাবির দুজন হৃদয়জ বন্ধু লায়লা হিরা ও লিটন থাকার ব্যবস্থা করবে; কিন্তু রহিম যেতে পারছে না এই চিন্তা করে যে, থাকার ব্যবস্থা না হলো অর্থনৈতিক সাপোর্ট কে দিবে? তাই রহিম বাদ দিতে আরম্ভ করলো চারুকলায় পড়ার চিন্তা।

Similar Posts

error: Content is protected !!