ভাটি অঞ্চলের মেয়েলি গীত

meyeli geet

মহিবুর রহিম ।।

বাংলাদেশকে যদি সংগীতের দেশ বলি, তাহলে সেটা ভুল বলা হবে না। কারণ হাজার রকমের সংগীতের প্রবর্তন ঘটেছে এদেশে। অনেক সংগীত বিশেষজ্ঞ এদেশের সংগীতের বৈচিত্র্য দেখে বিস্মিত হয়েছেন। শুধু বৈচিত্র্যে নয়, গুণে-মানে সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংগীতজগত অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বিশেষত বাংলাদেশের লোকসংগীত ভাবের এক অসাধারণ ক্ষেত্র। এদেশের আবহমান মানুষদের সৃজন চিন্তার পরিচয় পাওয়া যায় লোক সংগীতে। নানা পর্বে আমরা এসকল লোক সংগীতকে খুঁজে পাই। তার মধ্যে একটি পর্বে আছে মেয়েলি গীত। বাংলা লোক সংগীতের একটি নিভৃত ধারা হচ্ছে মেয়েলি গীতগুলো। ‘মেয়েলি গীত’ মূলত গ্রামীণ নারীদের জীবন চেতনাগত গীত। এ সকল গীতে নারীরা তাদের সীমাবদ্ধ স্থবির জীবনের অনুভূতিকে প্রকাশের চেষ্টা করে। শুদ্ধ সঙ্গীতের কোন ছোঁয়া এ সকল গীতে নেই। এমন কী লোকসঙ্গীতের ভাবধারা থেকেও মেয়েলি গীতগুলো স্বতন্ত্র। বিষয় ও সুরের ক্ষেত্রে তেমন কোন বৈচিত্র্য নেই। বিষয় ও সুরের কোন পরস্পরাও এখানে খুঁজে পাওয়া যায় না। শিক্ষিত মানুষের পক্ষে এসকল গীতের রসোদ্ধার করা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন। যে সকল নারীরা গীত পরিবেশন করে তারাও এগুলোর অর্থ তেমন জানে না। এগুলো যুগ যুগ ধরে মুখে মুখে প্রচলিত হয়েছে- এবং পরিবর্তিত হয়ে অনেকাংশে বিকৃত হয়ে পড়েছে। তবু সারাদেশে প্রতিটি লোক জনপদে মেয়েলি গীত খুঁজে পাওয়া যায়। বিশেষত গ্রামের নিরক্ষর নারীদের এগুলো একান্ত সম্পদে পরিণত হয়েছে। এ সকল গীত শোনার শ্রোতা সম্ভবত আগেও ছিল না, এখনও তেমন নেই। যারা গীত পরিবেশন করে, তারাই এর প্রকৃত শ্রোতা।

ভাটি অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদে বহুকাল ধরে মেয়েলীগীতের ব্যাপক প্রচলন আছে। প্রতিটি নারী মেয়েলি গীত জানে এবং সময় ও পরিবেশমত পরিবেশন করতে পারে। এসব যেন তাদের অন্তরের জিনিস। সে রকম সময় ও পরিবেশ হলে তারা তা মেলে ধরতে পারে। বাইরে থেকে তার হদিস পাওয়া প্রায় দুঃসাধ্য। কালক্রমে অন্যান্য লোক সাহিত্যের মতোই মেয়েলি গীত বিলুপ্তির প্রহর গুণছে। জীবন ধারার বিবর্তন এবং আধুনিক শিক্ষা সংস্কৃতির প্রসারে লোক সংস্কৃতির এই গুরুত্বপূর্ণ ধারাটি খুঁজে পেতে এখন এক রকম সাধ্য-সাধনা করতে হয়। তবে যেখানেই এর উৎস পাওয়া যায়, সেখানে এর পরিমান ও বৈচিত্র্য দেখে বিস্মিত হতে হয়। এগুলোর গুণগত উৎকর্ষতাও সহজ সৌন্দর্যে শোভিত। সহজ, সরল নারী মনের ভাবনার প্রকাশ এই স্বতস্ফূর্ত ধারাটি-নিঃসন্দেহে লোক সাহিত্যের এক স্বতন্ত্র অধ্যায়।

ভাটি অঞ্চলের মেয়েলি গীত সংগ্রহের প্রচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরেই চালিয়ে যাচ্ছি। এই সংগ্রহ প্রচেষ্টার সঙ্গে ফোকলোর বিশেষজ্ঞদের মতামতেরও সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা আমাদের ছিল। আমরা যে কয়টি স্পটে কাজ করেছি- তার মধ্যে কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সুনামগঞ্জ অন্যতম। অত্র অঞ্চলের জীবন প্রবাহ, ভৌগলিক পরিবেশ, ভাষা বৈশিষ্ট বহু কারণে সাদৃশ্যপূর্ণ। মেয়েলি গীতের ক্ষেত্রেও একটি আশ্চর্য রকম মিল এখানে খুঁজে পাওয়া যায়। মেঘনা, বাউলাই ও তিতাস অববাহিকা একদা কালীদহ সায়র রূপে বিরাজিত ছিল। মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল নৌপথ। সম্ভবত সেই সময়েই এই সাংস্কৃতিক পরিম-লটি তৈরি হয়েছিল। আমরা এখানকার লোকসাহিত্যে এই ঐতিহাসিক বাস্তবতার স্বাক্ষর খুঁজে পাই। কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের ছাতিরচর ও হিলোচিয়া থেকে অনেক গান সংগ্রহ করা হয়েছে। ছাতিরচর গ্রামটি কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিমি দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত নিকলী উপজেলার অন্তর্গত। এ এলাকাকে হাওর অঞ্চল বা ভাটি অঞ্চল বলা হয়। এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য অন্যান্য অঞ্চল থেকে স্বতন্ত্র। নদ নদী ও দীঘি বিলে পরিপূর্ণ। ছাতিরচরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বিশাল নদী ঘোড়াউত্রা। নদীটি খরস্রোতা। বহু গ্রাম জনপদ ভাঙছে এই নদী। ছাতিরচর গ্রামটিও অর্ধেকের বেশি ভেঙে গেছে এই নদীর ভাঙ্গনে। ছাতিরচর গ্রামে শিক্ষার হার খুবই কম। মেয়ে শিক্ষার হার আরও বেশি কম। অতি ঘনবসতিপূর্ণ এই গ্রামে মেয়েদের জীবন বৈচিত্র্য নেই বললেই চলে। এই গ্রামের প্রয়াত নূরজাহান বেগম (৭৫) পিতা আয়েতউল্লাহ সরকার অনেক গীত জানতেন। আমরা তার কিছু গীত সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। তাছাড়া লাহিমন নেছা ও তার প্রয়াত ছোট বোন রানু আক্তারের (পিতা-আবদুল মন্নাফ) কাছ থেকেও কিছু গান সংগ্রহ করা হয়েছিল। তাছাড়া মমতা বেগম (৪০) স্বামী বাচ্চু মিয়া, আম্বিয়া খাতুন (৫৫) পিতা- মিয়া হোসেন, হালিমা খাতুন (৫৫) পিতা-মরহুম হাজী জনাব আলী, সহ অনেকের কাছ থেকে আমরা বিভিন্ন গীত ও ছড়া সংগ্রহ করতে সক্ষম হই। এই ক্ষেত্রে আমাকে সর্বাত্মক সহায়তা করেন আমার স্ত্রী রোকেয়া বেগম (৪৫)। তাছাড়া নিকলীর নির্মলা রাণী বর্মণ (৫০) পিতা- মৃত সুবলচন্দ্র বর্মণ, মাতা-সুমিত্রা রাণী বর্মণ আমাদের অনেক মেয়েলি গীত ও লোকগান গেয়ে শোনান। তিনি নিকলীর শ্মশান সাধুর ভিটাতে বাস করেন। এখানে সর্বদা গান বাজনার আসর বসে থাকে। হিলোচিয়া, গুরই, পাড়াবাজিতপুর থেকেও আমরা অনেকগুলো মেয়েলি গীত সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। ছাতিরচরের মমতা বেগমের পরিবেশিত একটি মেয়েলি গীত।
আসমানে উড়েরে চিলা-ওরে চিলা
ঘুইরা না ঘুইরা আদার করে
অদ্দিন জানে আছলাম গো আম্মা
ওগো আম্মা তোমার হাতের ডেওয়া লইয়া
আজকা অস্তি যাই গা গো আম্মা
ওগো আম্মা পরের অধীন অইয়া।
পরের পুতে দিবগো গালি
ওগো আম্মা ঝরব সোনার চোখের পানি।
আসমানে উড়েরে চিলা ওরে চিলা
ঘুইরা না ঘুইরা আদার করে।
অদ্দিন জানে আছলাম গো আব্বা
ওগো আব্বা তোমার অজুর না পানি লইয়া
আজগা অস্তি যাইগা গা আব্বা পরের অধীন অইয়া।
পরের বাপে দিব গ গালি
ওগো আব্বা ঝরব মতি না চোখের পানি ॥ ঐ

ভাটি বাংলার অন্যতম একটি জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে ১৭ কি: মি: দূরের একটি গ্রাম ঘাটিয়ারা। তিতাস নদী সেখানে আখাউড়ার পাশ ঘেষে উজানিসার হয়ে নবীনগরের দিকে গেছে, সে বাঁকের উত্তর পশ্চিম পাশে ঘাটিয়ারা গ্রামটির অবস্থান। দীর্ঘদিন ধরেই এখানে আধুনিক শিক্ষা সংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে। তবুও এ গ্রামের বেশ কয়েকটি পাড়া যেখানে দরিদ্র পিছিয়ে পড়া মানুষেরা বাস করে। তাদের মধ্যে লোকসংস্কৃতির একটি বিলীয়মান ধারা খুঁজে পাওয়া যায়। তারই সন্ধানে আমরা সেখানে কয়েকজন স্থানীয় লোকের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। আমাদের আগ্রহে এগিয়ে আসেন বাসুদেব গ্রামের শাহাবুল হোসেন ভূঁইয়া (৫৫) পিতা-খবির উদ্দিন ভূঁইয়া ও আশরাফুল ইষলাম ভূঁইয়া (২০), ঘাটিয়ারা গ্রামের জামাল মিয়া (২৭)। তারা আমাদের জানালেন ঘাটিয়ারা গ্রামে মেয়েলি গান গাইতে পারেন এমন বেশ কয়েকজন মহিলার কথা। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান বিশেষত বিয়ে শাদির অনুষ্ঠানে মেয়েলি গীত পরিবেশন করেন। তারা হলেন আম্বিয়া বেগম (২৫), মনোয়ারা বেগম (৩৫), ফুলমতি বেগম (২২), জায়েদা বেগম (২৫) রেখশনা বেগম (২২) প্রমুখ। আমরা বেশ কয়েক দিন তাদের গানগুলো শুনি। গান গুলো শুনতে তেমন শ্রুতি মধুর ছিল না। গানে পরিবেশিত সুর গ্রাম্য নারীদের বিলাপের সুরের মতই দুঃখ উদ্রেক করে। তাদের পরিবেশিত একটি গান হল:
লীলার বাফের ঘাড়ার মাইঝে লীল মরিচের চারা
সেই না মরিচ তুলিতে, সেই না মরিচ পারিতে
লীলার বাপে কান্দন জুড়িল রে ॥
পাড়া ঐ না পড়শি গো আমার বাবারে বুঝাইও গো
কোরআন কিতাব তুলিয়া দিও আমার বাবার আতে গো
লীলার মায়ের কান্দনে গো, গাছের পাতা ঝরে গো
উইড়্যা যায় গো পশু পঙ্খী ফিরা উজান ধরে গো ॥
চাচি ঐ না জেডি গো আমার মায়েরে তোমরা বুঝাইও গো
ছোড ভাই বোন তুলিয়া দিও আমার মায়ের কোলে গো
লীলার ভাইয়ের কান্দনে গো গাছের পাতা ঝরে গো
উইড়্যা যায় গো পশু পঙ্খী ফিরা উজান ধরে গো……..॥

উল্লিখিত গানটি বিয়ের পর কন্যা বিদায় নেয়ার সময় কন্যার বিলাপ বা রোদনকে ধারন করেছে। কন্যার রোদন কে নানা উপমায় মর্মস্পর্শী করে তোলার চেষ্টা এখানে লক্ষ্য করার মতো। মেয়েলি গীতের একটি বড় স্থান অধিকার করে আছে কন্যা বিদায়ের পর্বটি। দীর্ঘদিন ধরে যে কন্যা ছিল সংসারের মধ্যমনি সকলের আদর সোহাগের কেন্দ্র বিন্দু সে আজ চিরকালের মতো পরের বাড়ির অধিবাসী হতে যাচ্ছে। এই বিচ্ছেদ নিস্তরঙ্গ নারী হৃদয়ে এক প্রচন্ড জলোচ্ছাসের ন্যায় আছড়ে পড়েছে। সহনাতীত এই বিচ্ছেদ ব্যথাই এ ধারার মেয়েলি গীতগুলোর প্রধান উপজীব্য।
বাউন বাইরার বাজাইন্নারে আস্তে ধীরে বাজাইও রে
দূর থেইক্কা শুনি আমার মায়ো কান্দন করে রে।
দূর থেইক্কা শুনি আমার বাবা কান্দন করে রে ॥
পাড়া পড়শি থাইকারে, তোমরা আমার মায়ো রে বুঝাইও রে
দূর থেইক্কা শুনি আমার মায়ো কান্দন করে রে
দূর থেইক্কা শুনি আমার বাবা কান্দন করে রে
বাউন বাইরার বাজাইন্নারে আস্তে ধীরে বাজাইও রে ॥
দূর থেইক্কা শুনি আমার দাদা কান্দন করে রে
দূর থেইক্কা শুনি আমার দাদি কান্দন করে রে।
পাড়া পড়শি থাইকারে, আমার দাদিরে বুঝাইও রে
বাউন বাইরার বাজাইন্নারে আস্তে ধীরে বাজাইও রে ॥

অতি সাধারণ সহজ সরল নারী মনের অভিব্যক্তি নিয়ে রচিত এই গীত। গীত শব্দটিও রচয়িতা এবং পরিবেশন কারীদের কাছে অনেকাংশ বিলাপ, শব্দেরই প্রতিশব্দে। কিন্তু এই গীত গুলো যেহেতো বিয়ে বা কোন আনন্দ অনুষ্ঠানেও পরিবেশিত হয়, সেকারনেই তাকে গীত নামে অবহিত করা হয়। আনন্দ অনুষ্ঠানে ‘বিলাপ’ শোভন নয়। তাই পরিবেশন পদ্ধতি ও সুরে কিছুটা আনন্দ ফুটিয়ে তোলা হয়। মেয়েলিগীত গাওয়ার জন্যে কোন প্রফেশনাল শিল্পী নেই। গ্রামেরই কিছু উৎসাহী মেয়েরা এইগীত অনুষ্ঠানে বসে শিখে নেয় এবং স্বতস্ফূর্ত ভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে পরিবেশন শুধু দলগত ভাবেই এই গীত পরিবেশন করা হয়। হলুদ এবং আলতা পরানোর সময়ে কিংবা কন্যা সাজানোর সময়ে এই গীত পরিবেশিত হয়। সুন্নতে খতনা অনুষ্ঠানে গীত পরিবেশিত হতে দেখা যায়। আদিতে কন্যাকে ‘সই’ পাতানো অনুষ্ঠান হতো। কিংবা পুতুল বিয়ে অনুষ্ঠানে হতো- সে সব অনুষ্ঠানাদিতে মেয়েলীগীত পরিবেশনের রেওয়াজ ছিল। সম্ভবত আদিকাল থেকেই মেয়েলীগীত শোনার জন্যে কোন শ্রোতা সমাগম হয় না। পরিবেশন কারীরাও মনে হয় শ্রোতার প্রত্যাশা করেন না। যারা গীত পরিবেশন করে তারাই এর প্রকৃত শ্রোতা, এর সাথে বড়জোর উৎসাহী দুয়েকজন থাকেন কিংবা শিক্ষানবিস থাকেন এই নিয়েই পরিবেশনকারী পরিতৃপ্ত থাকেন।

মেয়েলিগীত গুলোতে কথার এক ঘেয়েমি প্রচত্ত রকম। অল্প দুয়েক কথারই পূণরাবর্তী সুরের মধ্যেও কোন বৈচিত্র্য নেই বললেই চলে। তুবু পরিবেশনের সময় বেশ উপভোগ্য হয়। সম্বব এই গুনটি’র কারণেই সুদীর্ঘকাল ধরে মেয়েলীগীত প্রচলিত রয়েছে। এর সাথে কিছুটা নিস্তরঙ্গ নারী মনের ভাব প্রকাশ ও ঐতিহ্যগত অনুষ্ঠানিকতার সম্পর্ক আছে।

লোকসাহিত্যের একটি বড় স্থান অধিকার করে আছে গ্রামীণ নারীদের অবস্থান। নারী মনের সুখ-দু:খ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে এখানে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে মেয়েলি গীত গুলোর অবস্থান সবচেয়ে সপ্রতিভ। গ্রামীণ নারীদের অন্তর্যাতনা, বিচ্ছেদ বেদনা, ব্যক্তিগত দু:খবোধ গুলো জ্বলজ্বলে সতেজতায় এখানে পাওয়া যায়। নারীরা তাদের একান্ত ঘরোয়া অনুভূতির মধ্য থেকে এই গীত গুলোর সংলাপ ও শিল্পকে ধারণ করেছে। নিবিষ্ট মনে এ গুলো উপলব্ধি করতে পারলে এর ভেতরকার জীবন বাস্তবতাটিও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভৌগোলিক অবস্থান মূলত ভাটি অঞ্চলে। ভাটি অঞ্চল নীচু ও নদ-নদী অধ্যুষিত। নদীই ছিল এখানকার যোগাযোগের প্রধান অবলম্বন। বর্ষাকালে অধিকাংশ এলাকা থাকতো পানি প্লাবিত। গ্রাম গুলোর অবস্থান ছিল বেশ দূরত্বের মধ্যে। ভিন্ন গ্রামে যাতায়ত প্রয়োজন ছাড়া তেমন ছিল না। মেয়েদের তো ছিলইনা – বললে চলে। সেই আদি প্রাকৃত গ্রামে মূলত কৃষিই ছিল জীবিকার প্রধান অবলম্বন। কৃষি নির্ভর পরিবার গুলোতে মেয়েরা থাকতো কর্ম ব্যস্ত। শৈশবে বাবার বাড়িতে মেয়েরা সুখে স্বাচ্ছন্দেই সময় কাটাতো কিন্তু বিয়েরপর দূরের গ্রামে পরের বাড়িতে যাওয়ার আকস্মিকতা ও বাস্তবতা তাদের মনে কঠিন একটি আঘাত রূপেই গণ্য হয়। সে কথাই অধিকাংশ মেয়েলিগীতের বিষয়বস্তু।
রহিমনের আম্মা কান্দে পিছদরে বসিয়া
আমি অইনা রহিমনরে পালছি এত না আদর কইরা
এত না কষ্ট কইরা
আজ দেহি পরের গো পুতে লইয়া তারে যায়গা
বুকে শেলঅ দিয়া
রহিমনের আব্বা কান্দে হুমুকদরে বইয়া
আমি অইনা রহিমনরে পালছি এতনা আদর কইরা
এত না কষ্ট কইরা
আজ দেহি পরের গো পুতে লইয়া তারে যায়গা
বুকে শেলঅ দিয়া
রহিমনের চাচি কান্দে মাইজ্জালে বসিয়া
আমি অইনা রহিমনরে পালছি এত না আদর কইরা
এত না কষ্ট সইয়া
আজ দেহি পরের গো পুতে লইয়ারে যায়গা
বুকে না শেলঅ দিয়া
রহিমনের চাচা কান্দে ঘাডাতে বসিয়া
আমি অইনা রহিমনরে পালছি এত না আদর কইরা
এত না কষ্ট কইরা
আজ দেহি পরের গো পুতে লইয়ারে যায়গা
বুকে না শেলঅ দিয়া ॥

এদেশের সহজ সরল গ্রাম্য নারীদের ভাবনার জগত কিঞ্চিত হলেও ধরা পড়ে মেয়েলী গীতগুলোর ক্ষুদ্র পরিসরে। তাদের আশা-আকাক্সক্ষা প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি, ব্যর্থতা ও হতাশা সবই এখানে খুঁজে পাওয়া যায়। সামন্য একটি কি দুইটি বাক্যে তাদের কিছু অসামান্য চিন্তা ও ধরা পড়ে। সম্ভবত সে কারণে হলেও মেয়েলীগীতগুলো কালের সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকবে।

মেয়েলীগীতগুলোর মধ্যে বিয়ের গীত সবচেয়ে বেশি স্থান অধিকার করে আছে। গ্রামীণ জীবনে জন্ম মৃত্যু বিয়ে এই তিনটি বিষয়ের গুরুত্ব অস্বীকার্য। এর মধ্যে বিয়ে একটি সপ্রাণ ঘটনাক্রম, যেখানে আনন্দ-বেদনা-প্রাপ্তি একাকার হয়ে একটি বড় অনুভবের প্রকাশ ঘটিয়ে থাকে। মেয়েলী গীতে বিয়ের প্রসঙ্গ কন্যা দেখা বা বিয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সংসার জীবন পর্যন্ত বিস্তৃত। বিয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতার একটি গীত হচ্ছে-
বড়ই যেনে পার গ
বড়ই যেনে টুকাও গ
কন্যা বিয়ানি অইছে তোমার …..

আল্লার হুকুম অইলে
খোদার হুকুম অইলে
বিয়া কি না অইতে পারে …..

এ গীতে কন্যার একটি সাহসী মনোবৃত্তির প্রকাশ পাওয়া যায়। বহু প্রলোভনেও তাকে কাবু করা সম্ভব হয় না। এমনি আত্মবিশ্বাস নিয়ে সে অপরিচিত যুবকের প্রতিটি কথার উত্তর দিয়ে চলে। কিন্তু পরিবারের লোকেরা যখন বিয়ের সম্মতি দিয়ে বসে তখন আর মেয়েদের করার কিছুই থাকে না। তখন বাড়ির বোন ভাবীদের অভিব্যক্তি কেমন হয় তার একটি চমৎকার গীত রয়েছে-
কালন কালন কুলি চাঁন গ
কালন মাথার কেশ
কালনের লাগি সাইজ্যা রইছে
বাউনবাইরার দেশ
আগে যদি জানতাম গ কালন
তরে নিব পরে
ছয় মাস আগে লুকাইয়া রাখতাম
দাদার মন্দির ঘরে।
দাদা অইছে টাকার গ কাঙ্গাইল্লা
যাইস্যা দিব বিয়া
দাদি অইছে পুটলা গ খাউরি
তাইন ত দিব কইয়া….

অনেক আদর যত্নে লালিত কন্যাকে পরের হাতে তুলে দেয়া মেয়েদের জন্যে এক বড় রকমের দুঃখ তবু মা-বাবা, দাদা-দাদিদের পক্ষে কন্যাকে লুকিয়ে রাখার কোন সুযোগ নেই। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে বিয়ের উপযুক্ত মেয়েটিকে সৎপাত্রে অর্পন করা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েলীগীতগুলোতে দূরের পাত্রদের আলাদা মর্যাদা আছে। তাই এখানে পাত্র হয় ঢাকার নতুবা আগরতলার হয়ে থাকে। যেমন- দুটি মেয়েলীগীত আছে
১.
আগরতলার নাগর দামান্দ তাম্বুরাটা আঙ্গাইছে
তার ভিতরে ছইফুল গ বিবি বাবারে বুজাইছে
বাবারে বুজাইতে গ বালির বেলা হইল শেষ
চাচারে বুজাইতে গ বালির ঝরিল কান্দন …
২.
ঢাকা থাইক্যা আইল রে দামান্দ
লাল ঘোড়া নীল ঘোড়া দৌড়াইয়া
কই গেলা গ সেলোয়ার বিবি
পাঙ্খা কর আইয়া ….

বিয়ের প্রথম পর্বে মেয়েদের গায়ে হলুদ এবং মেহেদি পরানোর পর্ব থাকে। এগুলো সামাজিক আনুষ্ঠানিকতার অংশ। মেয়েলীগীতে এই পর্বটি অনেক গুরুত্ব পেয়েছে। হলুদ আর মেহেদিকে নিয়ে বিচিত্র ভাবনারও প্রকাশ ঘটেছে গীতগুলোতে। যেমন-
আগে জানে আছলে রে অলদি
অলদির অ বাগানে
আজকা কেনে আইলে রে অলদি
বেলোয়ার সাজনে
বেলোয়ার সাজন গ দেইখ্যা
মায়ধন কান্দন করে।

আগে জানে আছলে রে মেন্দি
মেন্দির অ বাগানে
আজকা কেনে আইলে রে মেন্দি
বেলোয়ার সাজনে
বেলোয়ার সাজন গ দেইখ্যা
বাপধন কান্দন করে ….।

হলুদ ও মেহেদি নিয়ে নানা বিচিত্র ভাবনার মাঝে ধর্মীয় চিন্তারও কিছুটা প্রকাশ ঘটায় মেয়েরা। যেমন একটি মেয়েলী গীতে আছে-
আছিল আছিল গ মেন্দি
জনম হিন্দুস্থান
রাসুলে আনিয়া মেন্দি
বানাইল মুসলমান
মুসলমান হইয়া মেন্দি
ভাবে মনে মনে
না জানি রাসুলুল্লাহ
লাগাইব কোন কাজে
ভাইব না ভাইব না মেন্দি
ভাবিয়ো না আর
তোমারে লাগাইয়াম মেন্দি
নতুন দুলার গায়।

মেয়েলি গীতগুলোতে কন্যার গোছল বা স্নানের প্রসঙ্গ এসেছে। এই কন্যা সাজানোর পর্বে গোছলকে নানা নাটকীয় ভঙ্গিতে তারা ফুটিয়ে তুলেছে। যেমন-
জাম্বুরা গাছের তলে গ বাজান তাম্বুরা টানাইছে
তারই তলে সকিনা সুন্দরী ঘাটে গোছল করে
ঘাটে গোছল করিতে বিবির বেলা অইলা শেষ
মাপায় আনছি মাপার চরণ যাইতে আপন দেশ
আপন দেশে যাইতে গ বিবি ফিরা ফিরা চায়
আইজ অস্তি বাবার মন্দির খালি গ দেখা যায়।
থাক থাক বাবার মন্দির থাক কয়েকদিন
বাবার যদি লাগে গ মায়া আনব কোনদিন।

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে কন্যার জন্যে আনিত বেশাত বা উপঢৌকন সকলকে দেখাতে হয়। উপস্থিত মেহমানরা সে গুলো বুঝে নেন। বিশেষ করে কন্যার বাবা, মা, দাদা, দাদি, ভাবী ও বোন অন্যতম। এই বেশাত বুঝে নেয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে এই গীত রয়েছে। যেমন-
কী কী বেশাত আনছ দামান্দ দুর্বাটা করিয়া
দুর্বাটা খুলিয়া দেখি কানের আনছে টুডা
কন্যার আম্মা গোস্বাদা ফালাইল ইডাইয়া
জামাই আছিল রসিকদার আনিল টুকাইয়া
কী দিলো বানাইয়া……..

কী কী বেশাত আনছ দামান্দ দুর্বাটা করিয়া
দুর্বাটা খুলিয়া দেখি গলার আনছে টুডা
কন্যার বাপে গোস্বাদা ফালাইল ইডাইয়া
জামাই আছিল রসিকদার আনিল টুকাইয়া
কী দিলো বানাইয়া…..

উল্লিখিত গানটি কিশোরগঞ্জের ছাতিরচর গ্রাম থেকে সংগৃহিত। বিয়ের নানা আনুষ্ঠানিকতার পর বর বা দামান্দ কন্যার সাক্ষাৎ পায়। তখন সে হয়ত ক্লান্ত-শ্রান্ত। সে অবস্থার বর্ণনা পাওয়া যায় একটি গীতে। এটি সংগৃহিত হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দাতিয়ারা মহল্লার জুরুমিয়া কমিশনারের বাড়ির মহিলাদের কাছ থেকে। সহায়তায় ছিলেন এড. শাহ পরান।

সদরে বসিয়া দামান খাইল বাটার পান
পানও ছাইরা গ দামানের লাগল পানির নেশা
বাবার ঘর বিছরাইয়া বিবি পানি নাহি পাইল
চাচার ঘর বিছরাইয়া বিবি পানি নাহি পাইল
হীরার কলসি গ কন্যা কাঙ্খে তুইলা লইল
বাবার ঘরের পঞ্চ দাসী সঙ্গে কইরা লইল
চাচার ঘরের পঞ্চ দাসী আগে পিছে লইল
কেমন আউসের কন্যা জলে ছাইরা দিল॥
অনুরূপ আরও একটি গীত আছে যেখানে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত দামান্দকে বাতাস করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কন্যা একবারেই আনাড়ি। সে পাঙ্খা নিয়ে কখনোই হয়ত বাতাস করেনি। এমনি বিষয় নিয়ে একটি গীত-
কাঞ্চাগুয়া খাইয়া গ দামান পালঙ্কে ঢলিল রে
ও কি অ লাল কুমার রইনা রে।
দরজা খোলা দরজা গ মেলো
বিবি না আইতো ঘরে গ বাতাস না করতো আইয়া গ
পাঙ্খা না করতো আইয়া গ
ও কি অ লাল কুমার রইনা রে।

বিবি জানে আইলা গ ঘরে (২)
বাতাস না করতে জানি, পাঙ্খা না হিলাইতে না জানি
ওকি অ লাল কুমার রইনা রে।
তুমি যদি না পারো কন্যা আনো তোমার মায়া রে
আনো তোমার চাচীরে
ওকি অ লাল কুমার রইনা রে॥

বিয়ের অনুষ্ঠান পর্বের সমাপ্তি ঘটে কন্যার বিদায় নেওয়ার মাধ্যমে। দীর্ঘ আনুষ্ঠানিকতার পর এ পর্বে এসে সবার মন দুঃখ ভারাক্রান্ত। আদরের কন্যাটিকে পরের বাড়িতে পাটিয়ে দেয়ার দুঃখ সবাইকেই ব্যথিত, মর্মাহত করে। এমনই একটি গীত আছে যেখানে কন্যাকে সাজিয়ে দেয়ার তাগাদা প্রকাশ করা হয়েছে।
চিরল গাছের তরে রে সাধু চিরল পঙ্খি ডাহে না
চিরল পঙ্খি দইরা গ আইন্যা অবুঝ মায়ে রে বুঝাও না,
বুঝন বুঝন অবুঝের আম্মা গ পালকী কেনে সাজাও না
চিরল গাছের তলে রে সাধু চিরল পঙ্খি ডাহে না
চিরল পঙ্খি দ ইরা গ আইন্যা অবুঝ বাপে রে বুঝাও না
বুঝন বুঝন অবুঝের আব্বা গ পালকী কেনে সাজাও না।
কন্যা বিদায়ের অভিজ্ঞতা অনেকটা মর্মান্তিক আঘাতের মতো। সেই কালে যখন এদেশে যোগাযোগ একটা বড় সমস্যা ছিল। দূরের গ্রামে কন্যা বিয়ে দিয়ে কন্যার বাবা-মা অজানা আশঙ্কায় আর কন্যার অনুপস্থিতি জনিত শূন্যতাকে বুকে নিয়ে অসম্ভব রকম ব্যথিত হত। তেমনি একটি মেয়েলিগীতে আছে-
মায়ে কান্দন করে ঝি ধনের লাগিয়া
কার লাগি পালছি ঝি ধন হায় না এত না কষ্ট কইরা
কাল ফজরে যাইব গ বাড়ি না খালি কইরা
কাল ফজরে সইব গ ঘর না আঁধার কইরা।

বাজান কান্দন করে রে ঝি ধনের লাগিয়া
কার লাগি পালছি গ ঝি ধন এত না আদর কইরা
কাল ফজরে যাইব গ বাড়ি না খালি কইরা
কাল ফজরে যাইব গ ঘর না আঁধার কইরা।
বিয়ের পর ঘর-সংসারের পর্ব। এ পর্বে মেয়েদের নানা বিড়ম্বনা, প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। সে সকল কথাও মেয়েলীগীতে উঠে এসেছে-
কন্যা- পাঙ্খার বাঁধন তুলিতে গ তুলিতে
আমার আঙ্গুল বেদন করে,
দামান্দ- তুমি যদি না পার গ না পার
তোমার মায়ে রে আন সাথে
কন্যা- আমার মায়ধন জমিদারের বেটি গ
উল্টাইয়া মারব ঝাটার বাড়ি।
কন্যা- পাঙ্খার বাঁধন তুলিতে গ তুলিতে
আমার আঙ্গুল বেদন করে
দামান্দ- তুমি যদি না পার গ না পার
তোমার চাচী রে আন সাথে
কন্যা- আমার চাচী জমিদারের বেটি গ
উল্টাইয়া মারব ঝাটার বাড়ি।
প্রথম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েলি গীত সংগ্রহ করেছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। সম্ভবত সেই সময় কবি জমিলা বেগমও কিছু মেয়েলী গীত সংগ্রহ করেছিলেন যা কখনো আলোর মুখ দেখেনি। আসাদ চৌধুরীর সংগৃহিত গীতগুলো ১৯৭১ সালে হারানো যায়। পরবর্তীতে তিনি আবারও ছয়টি গীত সংগ্রহ করে বাংলা একাডেমীর একটি সংকলনে প্রকাশ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়েলীগীত সম্পর্কে আসাদ চৌধুরী লিখেছেন- “এসব লোকগীত। পুরুষানুক্রমে এই সব গান মুখে মুখে চলে আসছে। বিবাহে, মৃত্যুতে, জন্মে এসব গাওয়া হয়। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের উপযোগী গান।
আসাদ চৌধুরী যার কাছ থেকে এই গীতগুলো সংগ্রহ করেছিলেন সেই আফিলের মা সম্ভবত আর বেঁচে নেই। কিন্তু তার গীতগুলো টিকে আছে। এর একটি গীত হচ্ছে-
চল বই নারী মেন্দি গ তুলিতে
বদনে বদনে গোসাই রে
যাই রে আমরা দুইজনে
কেউ তোলে ডালে গ ডোলে
কেউ তোলে পাতা গ পোতা
জামাইর মা সুন্দরী গ তোলে
দুই কুলা সাজাইয়া রে
যাই রে আমরা দুইজনে।
আরও একজনের কথা আমাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে হবে, তিনি সাংবাদিক, কবি শাহনাজ মুন্নী। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিছু মেয়েলি গীত সংগ্রহ করে বাংলা একাডেমী থেকে একটি বই প্রকাশ করেছেন। তার এই সংগ্রহ মেয়েলি গীতের প্রতি আমাদের আগ্রহকে বৃদ্ধি করেছে। এখনও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্রাম জনপদগুলোতে প্রচুর সংখ্যক মেয়েলি গীত খুঁজে পাওয়া যায়। যেগুলো সংগ্রহ করা গেলে একটা হারানো যুগের নারীদের চিন্তা চেতনার পরিসর খুঁজে পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে আন্তরিক আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এলে নিঃসন্দেহে ভাটি অঞ্চলের লোকসাহিত্যের একটি ব্যাপক অধ্যায় উম্মুচিত হবে।

 

মহিবুর রহিম : কবি, প্রাবন্ধিক, লোকসংস্কৃতি গবেষক। বিভাগীয় প্রধান বাংলা বিভাগ, চিনাইর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনার্স কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

Similar Posts

error: Content is protected !!