কিশোরগঞ্জের কৃষকেরা এখন রোপা আমন আবাদে ব্যস্ত

amon cultivation kishoregan

কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা ।।

কিশোরগঞ্জের কৃষকেরা এখন মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন রোপা আমন ধান আবাদে। বৃষ্টি আর বর্ষার পানিতে আমন জমিগুলো চারা রোপনের জন্য এখন পুরো উপযোগী হয়ে আছে। এ অবস্থায় জমি তৈরি শেষে এখন চারা রোপনে মূলত ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন কৃষক। অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই এখানে পুরোদমে রোপা আমনের আবাদ শুরু হয়ে গেছে।

সদর উপজেলার স্বল্পদামপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ জমিতেই চারা রোপন হয়ে গেছে। কোন কোন জমির চারা গাঢ় সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে। আরো অনেক জমিতে চাষ দিয়ে চারা রোপন করা হচ্ছে। এলাকার কৃষক আরজু মিয়ার জমিতে দেখা গেছে কয়েকজন ক্ষেতমজুর সারিবদ্ধভাবে চারা রোপন করছেন। মালিক আরজু মিয়া জানান, তার জমিতে তিনি ‘ব্রিধান-৪৯’ জাতের চারা রোপন করছেন।

amon cultivation kishoregan

সারা জেলায় প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়ে থাকে। আর চাল উৎপাদন হয় প্রায় দুইলাখ মেট্রিকটন। বোরো ধানের ফলন সবচেয়ে বেশি হলেও বোরো উৎপাদন করতে খরচ পড়ে বেশি। এর জন্য মূলত সেচ খরচটাই বেশি হয়ে যায়। আর সেচের জন্য প্রধানত নির্ভর করতে হয় ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর। হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে লো-লিফট পাম্পের (এলএলপি) সাহায্যে হাওর, নদী বা খালের পানি দিয়ে সেচ দেয়া সম্ভব হলেও এসব ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির উৎস থেকে দূরবর্তী জমিগুলোতে শ্যালো বা গভীর নলকূপের সাহায্যে ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলে সেচ দিতে হয়।

এছাড়া উজানের উঁচু উপজেলাগুলোতে প্রায় সব জমিতেই ভূ-গর্ভস্থ পানির সেচ দিয়ে বোরো আবাদ করতে হয়। এর ফলে প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। পানীয় জলের সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে আর্সেনিক দূষণ এখন প্রকট রূপ ধারণ করছে। ভূ-গর্ভে শূণ্যতা সৃষ্টির কারণে ভূমি ধ্বসেরও আশঙ্কা বাড়ছে। সেই কারণে এখন বোরো ধানের তুলনায় আউশ এবং আমন ধানের পশাপাশি গম আবাদের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। কারণ এসব ফসল আবাদ করতে সেচের তেমন প্রয়োজন পড়ে না।

কৃষি বিজ্ঞানীরা হিসাব করে বলছেন, এক কেজি বোরো ধান ফলাতে ৩ হাজার ৩শ’ লিটার পানি খরচ করতে হয়। মিনারেল ওয়াটারের দামের সঙ্গে তুলনা করে এক লিটার পানির দাম যদি ৫ টাকাও ধরা হয়, তাহলে এক কেজি বোরো ধান ফলাতে ১৬ হাজার ৫০০ টাকার পানি খরচ করতে হয়! অথচ এক কেজি ধানের সরকারি মূল্য মাত্র ২৩ টাকা! কিন্তু প্রকৃতিতে পানির উৎস আছে বলে সেটা কারোরই গায়ে লাগে না। এসব কারণেই এখন বোরো ধানের চেয়ে আউশ এবং আমন ধানের পাশাপাশি গম আবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Similar Posts

error: Content is protected !!