গোলাম রব্বানী শিপন, বগুড়া সংবাদদাতা।।
বগুড়ায় আন্তর্জাতিক মেলার নামে চলছে ভয়ানক জুয়া খেলা। যার নাম দেয়া হয়েছে “দৈনিক স্বপ্নছোঁয়া র্যাফেল ড্র”। আর এ লোভনীয় লটারির টিকিট কিনে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ।
প্রতিদিন ২০ টাকার টিকিটে ৭/৮টি মটরসাইকেল, বাইসাইকেল, স্বর্ণের চেইন, মোবাইল ফোন, কারি কুকারসহ মোট ৬১টি সামগ্রী লটারি বিজয়ীদের জন্য উপহার হিসেবে দেয়া হচ্ছে। কোন কোন দিন থাকছে ২/৩টি (ষাঁড়) গরু।
এদিকে টিকিট সংগ্রহকারীদের বেশিরভাগই রিকশা-ভ্যান চালক ও দিনমজুর শ্রেণীর হওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে এটি ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
চলতি মাস থেকে পুরো মাসব্যাপী বগুড়ার চান্দু স্টেডিয়ামসংলগ্ন স্থানে এ মেলা চলবে বলে জানা যায়। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক, জেলা-উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মোড়সহ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় একশত ৮০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান ও ব্যাটারিচালিত বিভিন্ন যানবাহন টিকিট বিক্রির কাজে ব্যাবহার করা হচ্ছে। প্রচার মাইককে লক্ষ্য করে হাজার হাজার মানুষ টিকিট কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। অনেকেই সারা দিনের উপার্জন দিয়ে টিকিট কিনে রাতে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।
মহাস্থানগড় এলাকার এক গৃহবধূ জানান, তার ভ্যানচালক স্বামী দুলাল। গত কয়েকদিনে তার উপার্জনের সব টাকাই টিকিট কেনার কাজে খরচ করেছেন। যে কারণে তাদের দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারটি চরম অর্থ সংকটে পড়েছে। মহাস্থান নামাপাড়া গ্রামের নিম্ন আয়ের একাধিক অভিভাবকেরা জানান, তার ছেলেরা দিনমুজুরীর সমস্ত টাকা টিকিট কেনায় খরচ করেন। আবার অনেক অভিভাবকেরা জানান, লটারির কারণে তাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ায় মনযোগী হচ্ছে না।
এদিকে মহাস্থানের রায়নগর ইউনিয়নে মেহেদী নামের এক যুবক টিকিট কিনে মটরসাইকেল জেতায় গোটা এলাকার মানুষ এখন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে লটারির টিকিট কেনার নেশায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার প্রত্যেকটি উপজেলার এমন কোন প্রত্যন্ত গ্রাম নেই যেখানে লটারির টিকিট বিক্রির প্রচার মাইক ও গাড়ি পৌঁছেনি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শহরের অলিগলিসহ গ্রাম-গঞ্জে টিকিট বিক্রির ধুম পড়ে যায়। জেলার যুবকদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার যুবকরা এই লটারির টিকিট বিক্রির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
রাত ১০টার পর পরই মেলার র্যাফেল ড্র মঞ্চে ২টি শিশুর চোখ বেঁধে একটি করে টিকিট তুলে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এছাড়া মোটরসাইকেল, স্বর্ণ ও দামি কিছু বিজয়ীদের টিকিটের অর্ধেকটাতে লেখা ঠিকানাসহ মোবাইল ফোন নাম্বার অনুযায়ী কল করে গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগিয়ে পুরস্কারের কথা জানানো হয়। গোটা অনুষ্ঠানটি গত কয়েকদিন যাবৎ বগুড়ার কেবল নেটওয়ার্ক অপারেটর অর্থাৎ ডিস লাইনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করায় এটি আরো বেশি প্রভাব ফেলেছে। গভীর রাত পর্যন্ত টিকিট ক্রেতারা মেলাস্থলে অপেক্ষমান থেকে র্যাফেল ড্র উপভোগ করছেন। টিকিট কেটে অনেকেই বাড়িতে আবার কেউ কেউ বন্দরে, চা স্টলে, দোকানপাটে ভিড় জমিয়ে টিভির সামনে বসে লটারির টিকিট মিলাচ্ছেন।
গোটা টিকিট দুইভাগে বিভক্ত। একটি অংশ গ্রাহকদের দেয়ার জন্যে। অপরটি র্যাফেল ড্র’তে রাখার জন্য। র্যাফেল ড্র’র অংশটিতে ক্রেতার নাম ও মোবাইল নম্বর দেয়া থাকছে। যাতে পুরস্কার প্রাপ্তির সাথে সাথে ওই নম্বরে যোগাযোগ করে ফলাফল জানানো যায়। টিকিট কিনছে হাজার হাজার জন পুরস্কার পাচ্ছেন মাত্র ৬১জন।
এদিকে একটি সূত্রে জানা যায়, র্যাফেল ড্র ও মেলা চত্বরে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রতি রাতেই দেখা যায়। যারা এই লটারির নেপথ্য আয়োজক। এখন সচেতন মহলের প্রশ্ন পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন অনুমোদন দেয়ার সুযোগ না থাকলেও বগুড়ার পুলিশ প্রশাসন নিশ্চুপ কেন? মানুষকে পথে বসানো স্বপ্নছোঁয়া নামক এই র্যাফেল ড্র বন্ধ না হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এটি দ্রুত বন্ধ করে দেয়ার প্রশাসনের কাছে দাবি জানান অভিজ্ঞ সচেতন মহল।