আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ বিশেষ প্রচারাভিযান শুরু করেছে।
এর অংশ হিসেবে বুধবার ২৯ মার্চ কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানা এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার ও বাসস্ট্যান্ড ও টার্মিনালসমূহে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসব মতবিনিময় সভায় পুলিশের পক্ষ থেকে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জনসচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে যেকোনো সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
দুপুরে শহরের বত্রিশ বাসস্ট্যান্ডে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান।
কিশোরগঞ্জ টেকিনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী একেএম রফিকুল আমিনের সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন, প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান, জেলা বিদ্যুৎ কারিগর সমিতির সাবেক সভাপতি উবায়দুল্লাহ দুদু প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান তার বক্তৃতায় বলেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া কেবল পুলিশের একার পক্ষে জঙ্গিবাদ নির্মূল সম্ভব নয়। এ জন্যে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে। দেশের মানুষের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে জঙ্গিবাদ নামক বিষফোঁড়া থেকে দেশকে মুক্ত করার কোনো বিকল্প নেই।
পরিবহন শ্রমিকরা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন উল্লেখ করে মোহাম্মদ রাকিব খান বলেন, কোনো যাত্রীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে সাথে সাথেই পুলিশকে অবহিত করতে হবে। এর মাধ্যমে বড় ধরণের নাশকতা থেকে তারা দেশকে রক্ষা করতে পারেন। মতবিনিময় সভায় পরিবহন শ্রমিক, মালিক ও কর্মচারী ছাড়াও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শহরের গাইটাল আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালেও পরিবহন শ্রমিক, মালিক ও কর্মচারিদের সাথে তিনি অনুরূপ মতবিনিময় সভা করেন। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে শহরের সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মুর্শেদ জামান ও এসআই সালাহউদ্দিন এবং আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আরিফুর রহমান ও এসআই উবায়দুর রহমান শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময়ে অংশ নেন।
একই ভাবে দিনব্যাপী সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও হাটবাজারে পুলিশ কর্মকর্তারা বিভিন্ন মতবিনিময় সভা করেছেন।
অন্যদিকে নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যাপারে আবারো মাঠে নেমেছে জেলা পুলিশ। নিরাপত্তা রক্ষায় বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের ডাটাবেজ তৈরি করতে একটি নিবন্ধন ফর্ম পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়িওয়ালাদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
এ নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় জনগণের সচেতনতার জন্য মাইকিং ও স্থানীয়ভাবে ক্যাবল অপারেটরের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে পুলিশ প্রশাসন। নিবন্ধন ফর্ম পূরণ করে থানায় জমা দেওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে জোর তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
গত বছরের ৭ জুলাই শোলাকিয়া হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গিরা ঈদগাহের এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত শহরের নীলগঞ্জ রোড এলাকায় ছাত্র পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করে। এরপর থেকেই ভাড়াটিয়াদের তথ্য পেতে নড়েচড়ে বসে কিশোরগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন।
সম্প্রতি সিলেটসহ দেশের বিভিন্নস্থানে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর পুনরায় ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাইকিংসহ বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশের মাধ্যমে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়া সংক্রান্ত তথ্যাদি সংরক্ষণ করে থানায় জমা করার তাগিদ দেয়া হচ্ছে। নিবন্ধন ফর্মে বাড়ির মালিক, ভাড়াটিয়াদের সকল তথ্য ছাড়াও কাজের লোক ও গাড়ির ড্রাইভারের তথ্য দেয়ার ছকও রয়েছে। যত শিগগির সম্ভব ওই ফর্ম পূরণ করে থানায় জমা দিতে বলা হচ্ছে।
সূত্র : জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে কিশোরগঞ্জে পুলিশের প্রচারাভিযান (পূর্বপশ্চিমবিডি)