দিলরুবা খাতুন ।।
মেহেরপুরে গড়ে উঠেছে ঘাসের বাজার। এ ঘাস চাষ হচ্ছে মেহেরপুর জেলার মাঠে মাঠে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস চাষ করে জেলার বেশ কয়েকজন লাখপতি হয়েছেন। লাখপতি হওয়াতে জেলার কৃষকরা উঠে পড়ে লেগেছেন ঘাস চাষে। এতে একদিকে যেমন গো-খাদ্যের চাহিদা মিটছে অপরদিকে ঘাসচাষীরা লাভবান হচ্ছেন। মেহেরপুরের প্রাণিসম্পদ বিভাগ জেলার কৃষকদের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঘাসচাষে উদ্বুদ্ধ করছে বীজ ও চারা সরবরাহ করে। বহুবর্ষজীবী এই নেপিয়ার ঘাসের আদি নিবাস নিউজিল্যান্ড।
মেহেরপুরের প্রাণিসম্পদ বিভাগ তাদের নিজস্ব জমিতে নেপিয়ার ঘাসের বীজ উৎপাদন ও চারা তৈরি করে বিতরণ করেছে। নেপিয়ার ঘাসের বৈশিষ্ট্য একবার চারা অথবা কাটিং রোপণ বা বীজ বপন করার পর ওই জমি থেকে প্রতিবছর ৫-৬ বার ঘাস সংগ্রহ করা যাবে। তিন থেকে চারবছর একইভাবে ঘাস উৎপন্ন হবে। বপন বা রোপনের পর থেকে ৫০ দিনের মধ্যে ঘাস বাজারজাতকরণের উপযোগী হয়। জমি থেকে ঘাসের গোড়া কেটে নেয়ার পর গোড়া থেকে ফাপড়ি বের হয়। আবারও একই সময়ের মধ্যে কেটে বাজারজাত করা যায়। বাসস
ব্যাপক চাহিদার কারণে মেহেরপুর জেলা শহর, গাংনী উপজেলা ও বামুন্দি বাজার, মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজারে ঘাসের বাজার তৈরি হয়েছে। এতে জেলার অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে নেপিয়ার ঘাস চাষের জমি থেকে কিনে এনে উল্লেখিত বাজার ও পাড়ায় পাড়ায় ফেরি করে বিক্রি করছে। এ ঘাসচাষে সার সেচের জন্য কৃষককে ভাবতে হয় না। প্রতিবার ঘাস কেটে নেয়ার পর বিঘাপ্রতি সর্বোচ্চ ১০ কেজি করে ইউরিয়া সার ছিটাতে হয়। মাসে একবার হালকা সেচেই ঘাস হয়ে উঠবে তরতাজা। বেড়ে উঠবে লকলক করে।
গবাদিপশুর জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ নেপিয়ার ঘাস জেলায় বর্তমানে ১৮০ একর জমিতে আবাদ হচ্ছে।
সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের জালাল উদ্দীন জানান, তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করে আসছেন। বর্তমানে ৬ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তিনি ঘাসচাষ করছেন। প্রতিবছর থেকে ৫ লাখ টাকার ঘাস বেচাকেনা হয়। ফেরি করে ঘাস বিক্রেতারা প্রতিদিন ভোরে এসে জমি থেকে ঘাস কেটে নিয়ে যায়।
ঘাসচাষী পিন্টু জানান, নেপিয়ার ঘাস চাষ করে সহজেই স্বাবলম্বী হওয়া যায়। চাষাবাদে ডোবাপোড়া বা কোনরকম ঝুঁকি নাই। তিনি নেপিয়ার হাইব্রিট, নেপিয়ার এরোসা ও নেপিয়ার (বাজরা) জাতের ঘাসচাষ করছেন।
মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজারে ঘাসের বাজারে ঘাস বিক্রেতা মাহাবুব হোসেন জানান, তিনি গ্রামের মাঠে আবাদ করা জমি থেকে ঘাস কিনে এনে প্রতি আটি (প্রায় ১০ কেজি) ১০ টাকা করে বিক্রি করেন। তার কেনা পড়ে গড়ে ৬ টাকা আটি। প্রতিদিন এক থেকে দেড়শ আটি ঘাস বিক্রি করেন। একই বাজারের টিপু হোসেন জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে ঘাসচাষ করেছেন। নিজেই এই বাজারে বিক্রি করতে আসেন।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার জানান, জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটাতে গিয়ে সর্বাধিক জমি চলে গেছে ধান, গম, ভুট্টা, সবজি, তামাক চাষের আওতায়। টান পড়েছে গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদার। তরতাজা ঘাস তো দূরের কথা, খড় বিচালিও আজকাল মহার্ঘ। এ পরিস্থিতিতে বহুবর্ষজীবী নেপিয়ার ঘাস জেলার গবাদিপশুর জন্য সহজপ্রাপ্য। বছরের যেকোন সময় থেকে চাষ শুরু করা যায়। হেক্টর প্রতি ২৫ থেকে ২৬ হাজার কাটিং করা যায়। এর এক কেজি ঘাসে শুষ্ক পদার্থ ২৫০ গ্রাম, জৈব পদার্থ ২৪০ গ্রাম, প্রোটিন ২৫ গ্রাম ও বিপাকীয় শক্তি ২.০ মেগাজুল থাকে। গরু ছাগলের প্রিয় খাদ্য। বিঘাপ্রতি সহজেই এক লাখ টাকার ঘাস বেচাকেনা করা যায়।