ভিপি সুমনের বহিষ্কারাদেশ হাইকোর্টে স্থগিত

বিশেষ প্রতিনিধি ।।

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুল ইসলাম সুমনকে ( ভিপি সুমন) বহিস্কারের আদেশ হাইকোর্ট স্থগিত ঘোষণা করেছে। বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোঃ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মোঃ আতাউর রহমান খানের দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এর আগে ২৩ মে ২০১৭ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়।

আজ হাইকোর্টে মামলাটি শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী বিচারপতি হাবিবুল ইসলাম ভূইয়া। তাকে সহায়তা করেন এডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল।

এর আগে বিএনপি থেকে নির্বাচিত কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমনকে বরখাস্ত করা হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গত ২৩ মে ২০১৭ এ ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সিনিয়র সহকারী সচিব লুৎফুন নাহার স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এডিপি ও রাজস্ব তহবিল ব্যবহারে অনিয়ম, নিজ দফতরে অনুপস্থিত এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অশালীন আচরণের অভিযোগে দু’জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ১১ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অনাস্থা দেন। এসব অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পর উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ও বিপক্ষে ভোটগ্রহণ করা হয়। যাতে প্রস্তাবের পক্ষে ১৩ ভোট ও বিপক্ষে একটি ভোট পড়ে। অনাস্থা প্রস্তাব চার-পঞ্চমাংশের বেশি ভোটে গৃহীত হওয়ায় উপজেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ [উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন, ২০১১ দ্বারা সংশোধিত]-এর ১৩(ক) ধারার (১৩) উপধারা অনুসারে সাইফুল ইসলাম সুমনকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করে চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষণা করা হলো।

এ প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ নির্বাচন কমিশনের সচিবের কাছেও পাঠানো হয়। তাতে নির্ধারিত সময়ে শূন্য আসনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করা হয়।

জানা গেছে, বিএনপি থেকে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমনের সাথে উপজেলা পরিষদ পরিচালনা নিয়ে দুই ভাইস চেয়ারম্যান, ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিন থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এ সব কারণে প্রকল্পের তালিকা প্রণয়ন ও অনুমোদন না হওয়ায় এ বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি), টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া সাড়ে তিন কোটি টাকা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

এ পরিস্থিতিতে গত বছর ৯ মার্চ উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিএনপি থেকে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে ইউপি চেয়ারম্যানরা। গত বছরের ৮ ও ৯ মে ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ মুনির হোসেন সরেজমিন করিমগঞ্জে গিয়ে অনাস্থা বিষয়ে তদন্ত করেন। ৯ মে, ২০১৭ তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান, দুই ভাইস চেয়ারম্যান ও ১১ ইউপি সদস্যের অনাস্থার প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট নেন।

কিশোরগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জহিরুল ইসলামের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, তদন্তের অংশ হিসেবে ২০১৭-এর ৯ মে যে ভোটাভুটির আয়োজন হয় তাতে ১৪ ভোটের মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান পেয়েছেন মাত্র এক ভোট। ১৩ জনই উনার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, তদন্ত শেষ। এখন তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন পাঠাবেন। এরপর ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।

এর আগে করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার ৯ অক্টোবর ২০১৭ নির্বাচন কমিশন এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে উপ-নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে। প্রজ্ঞাপনে করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনের পরবর্তি সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা-২ এর উপসচিব মো. নূরুজ্জামান তালুকদার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক রিট পিটিশন নং-৭৭১৫/২০১৭ এ বিগত ৭ জুন ২০১৭ তারিখের আদেশে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের শূণ্য ঘোষণার বিষয়টি কোন গেজেট প্রজ্ঞাপনে প্রকাশ না করার জন্য মামলার প্রতিপক্ষদের নির্দেশ প্রদান করায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক বিগত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে ১৭.০০.০০০০.০৭৯.৪০.০০১.১৭-৪৯৭ নং স্মারকমূলে জারিকৃত শুধুমাত্র কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপ-নির্বাচনের পরবর্তি সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করিতেছে।”

উল্লেখ্য, বিএনপির সমর্থনে নির্বাচিত করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে সম্প্রতি পরিষদের দুজন ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মোট ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনাস্থা প্রদান করেন। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ এবং উপজেলা পরিষদ সংশোধনী আইন-২০১১-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় এ বছরের ২৩ মে তাকে অপসারণ করে পদটি শূণ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারির পর নির্বাচন কমিশন উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে গত ৪ নভেম্বর উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করার কথা ছিল। ৮ অক্টোবর রোববার ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ। নির্ধারিত এই সময়ে মোট ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

অপসারিত চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমনের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সাল জানান, “মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিলো করিমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হয়েছে মর্মে কোনো গেজেট প্রকাশ করা যাবে না। তা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন উপজেলা চেয়ারম্যান পদ শূন্য ঘোষণা করে। এর প্রেক্ষিতে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর একটি আইনী নোটিশ প্রেরণপূর্বক হাইকোর্টের আদেশ নজরে আনি। সে আলোকে নির্বাচন কমিশন আইনি নোটিশ আমলে নিয়ে নির্বাচন স্থগিত করেন।”

এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সাইফুল ইসলাম সুমন সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, “মহামান্য হাইকোর্টের রিট উপেক্ষা করে আমার পদটি শূন্য ঘোষণা ও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা উভয়ই আদালত অবমাননা ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।”

Similar Posts

error: Content is protected !!