মাহমুদ আল আজাদ, (হাটহাজারী) প্রতিনিধি ।।
দিন যত পার হচ্ছে ঈদ ততই ঘনিয়ে আসছে। মুসলিম ধর্মালম্বীদের ঈদুল ফিতর সবচেয়ে বড় উৎসব। ধনী-গরিব সবাই এক কাতারে। নতুন নতুন জামা তৈরি করতে ছুটে আসছে দর্জি দোকানগুলোতে। দিন-রাত নির্ঘুম কাটিয়েও সময়মত ডেলিভারি দেয়ার চেষ্টায় মগ্ন হাটহাজারী উপজেলা মার্কেটের দর্জি শ্রমিকেরা। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। বিভিন্ন ক্যাটালগ দেখে পছন্দ করে অর্ডার দিচ্ছে দর্জি দোকানগুলোতে।
দিন রাত চোখে পড়ার মতো উপচে পড়া ভীড়। আর এ ভীড়ের ব্যস্ততায় নির্ঘুম রাত কাটছে হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন দোকানের দর্জি শ্রমিকদের। থেমে নেই সদর ছাড়াও গ্রামীণ অঞ্চলেও। ঈদকে রঙ্গিন ও বর্ণাঢ্য করে তুলতে বৈচিত্র্য সন্ধানী মানুষ ছুটছে দর্জিবাড়ি। ফ্যাশনে নিজস্ব রুচির ছাপ দিতে উঁচু-মধ্যবিত্ত কেউ যেন পিছিয়ে নেই। যাদের রুচি মূলত বুটিক নির্ভর নয়, তাদের বেশির ভাগই পা পড়েছে দর্জি বাড়ির দরজায়।
বিদ্যুৎ এবং জনবলের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে পাঞ্জাবী সেলাইয়ে। তবুও ফ্যাশনে নিজস্ব রুচির ছাপ দিতে ভিড় বাড়ছে, দর্জিবাড়ি। ফলে এ পেশায় নিয়োজিত হাজারো মালিক-শ্রমিকের নিঃশ্বাস নেয়ার সময় নেই। বৈচিত্র্য সন্ধানী মানুষের ঈদ ফ্যাশনের চাহিদা মেটাতে দিনের শুরু থেকে রাতের সেহরী পযর্ন্ত দর্জিও নিপুণ হাত সুই-সুঁতা নিয়ে যুদ্ধ করছে অনবরত।
অধিক মুনাফা খাটিয়ে অনিদ্রা ও ক্লান্ত শরীর নিয়ে কাজ করার পরও সঠিক সময়ে সব অর্ডার সরবরাহের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দর্জিরা। টেইলারিং সংশ্লিষ্ট জিনিসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে দর্জি বাড়ীর কর্মকর্তারা হয়ে পড়েছেন কোণঠাসা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাটহাজারীর উপজেলা মার্কেটে দর্জি দোকানগুলোতে পাঞ্জাবী-পায়জামার প্রচুর অর্ডার হচ্ছে। পূর্বে কদর কম থাকলেও বর্তমানে এ পোষাকের চাহিদা বেশী। যে কেউ পাঞ্জাবী পড়তে আগ্রহ প্রকাশ বেশী করছে। আগে তো শুধু মাদ্রাসা ছাত্ররাই পড়তে দেখা যেতো। এখন স্কুল, কলেজপড়ুয়া ছাত্র ছাড়াও সাধারণ মানুষও পাঞ্জাবীর প্রতি আকর্ষণ হচ্ছে। বিভিন্ন রকমের ডিজাইন দিয়ে পোষাক তৈরিতে আকর্ষণ দেখাচ্ছে দর্জি শ্রমিকরাও। এতে পার্বত্য অঞ্চল রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, মানিকছড়ি সহ পার্শবর্তী উপজেলা ফটিকছড়ি, রাউজান থেকে ছুটে আসছে হাটহাজারী পাঞ্জাবী পাড়াতে। ঘুরে ঘুরে দেখে নিজের পছন্দের জামা ক্রয় করে তুলে দিচ্ছে দর্জি শ্রমিকদের হাতে।
এদিকে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দর্জি শ্রমিকরা বিরাহীনভাবে পোষাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ছোট ছোট কক্ষে চার,পাঁচটা মেশিনে আট দশেক মানুষ। কেউ জামা কাটছে, কেউ সেলাই করছে, কেউ জামার বোতাম লাগাচ্ছে, আবার কেউ জামা গুলোকে আইরন দিয়ে সারি সারি করে সাজিয়ে রাখছে। আর দিন-রাত মেশিনের হাঁক-ডাক শব্দতো চলছে। উপজেলা মার্কেট টেইলার্সগুলোতে ক্রেতাদের প্রচুর অর্ডার নিয়ে ভীড় করছে।
উপজেলা মার্কেটের কয়েকজন টেইলার্স মালিকদের কাছে জানতে চাইলে প্রতিবেদককে জানান, নরমাল পাঞ্জাবী ৪শত, জুব্বা সাড়ে ৫শত, এ্যামব্রয়ডারী পাঞ্জাবী ৬শত থেকে ১২শত পর্যন্ত প্রতি পাঞ্জাবীর কাজের বাবত নেয়া হচ্ছে।
একটি দোকানে চাঁদ রাতের আগ পর্যন্ত ১২শত পোষাকের ডেলিভারী দেওয়া সম্ভব বলেও জানান টেইলার্স মালিকরা। তবে কারিগরদের কাজের উপর ভরসা করে অর্ডার নিতে হচ্ছে। টেইলার্স মালিক সমিতির নির্ধারিত মূল্য দেওয়া থাকলেও পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামে পোষাক অর্ডার দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে কয়েকজন ক্রেতা। তবে টেইলার্স মালিকরা বলেন, ঈদে দর্জি শ্রমিকদের বোনাসসহ দিতে হলে নির্ধারিত মূল্য থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম হতে পারে জানান টেইলার্স মালিকরা।
তারা আরো জানান, প্রতি বছরই রমজান মাস আসলেই দর্জি পাড়াতে ভীড় থাকে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিছু কিছু টেইলার্সে এখনো পোষাকের অর্ডার নেয়া হচ্ছে। কয়েকদিনের মধ্যে অর্ডার সব দর্জি দোকানে বন্ধ হয়ে যাবে। চাঁদ রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের পোষাক ডেলিভারী দেওয়া হবে।