আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
নয়ন জুড়ানো বাহারি রঙের মাছ হলো রানী মাছ। মৎস্যকুলের রানী হওয়ার মতো সব সৌন্দর্যই রয়েছে তার। হলুদ সোনালী মিশেল দেহে তীর্যক কালো-বাদামী ডোরা কাটা দাগ আর ধনুকের মতো বাঁকানো পৃষ্ঠদেশ অপরূপ সৌন্দর্যের যেন নিখুঁত আল্পনা।
এককালে এদেশের মিঠাপানির জলাশয় বিশেষ করে খাল, বিল, হাওর-বাওড় ও নদীতে প্রচুর পাওয়া যেত। সাধারণত জলাশয়ের তলদেশে পরিষ্কার পানিতে বাস, তবে ঘোলা পানিতেও এদের কখনো কখনো দেখা যায়। এতে অবশ্য মাছের রঙ কিছুটা ফ্যাকাশে হয়। সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ মাছের বিস্তৃতি রয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এদের দেখা যায়।
হাওরগুলোতে এক সময় রানী মাছের নিয়মিত দেখা মিললেও সাম্প্রতিককালে এটি বিপন্ন হয়ে পড়ে। একেবারে বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়ে যায়। কালে-ভদ্রে অন্য মাছের সাথে মিশ্রভাবে দুই একটা মাছের হয়ত দেখা মিলত। তবে ইদানিং প্রচুর পরিমাণে এই মাছ উঠছে জেলের জালে। বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর।
হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহজাদা খসরু জানান, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের হাওরে রানী বা বউ মাছের প্রাচুর্য্য ছিল। এগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। এর পুষ্টিগুণও ভাল। বাংলাদেশের মানুষ এই মাছ পছন্দ করে। তবে হাওরে ইজারাদাররা নির্বিবাদে মাছ শিকার, প্রাকৃতিক বিবর্তন এবং প্রজনন কেন্দ্র ধ্বংস করায় মাছটি বিলুপ্ত হতে চলছিল। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে খাল-বিল শুকিয়ে মাছ আহরণ করায় মা মাছের অবশিষ্টও আর থাকত না। তবে ইদানিং এই মাছের দেখা মিলছে নিয়মিত। সরকারের মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে মাছটিকে বাঁচিয়ে রাখার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ রানী মাছসহ বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রক্ষায়, জলমহাল খনন, নির্বিবাদে মাছ শিকার বন্ধ এবং প্রজনন ক্ষেত্র রক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিরও প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় দেশীয় মাছের পাইকারী বাজার বানিয়াচং উপজেলার রত্না বাজার আড়তদার সমিতির সভাপতি সুদাম দাস ও সেক্রেটারি জন্মেজয় দাস শিল্টু জানান, রানী মাছ এক সময় হারিয়ে গিয়েছিল। এখন প্রায় দিনই জেলেদের জালে এই মাছ ধরা পড়ছে। বাজারে এর চাহিদাও প্রচুর।
হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষক সুভাস চন্দ্র দেব জানান, অঞ্চলভেদে রানী মাছকে বেতি, বৌমাছ, পুতুল মাছ, বেতাঙ্গী, বেত্রাঙ্গী, বেটি, বুকতিয়া ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। সিপ্রিনিডি বর্গের অধীন কোবিটিডি গোত্রভুক্ত এ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম বেটিয়া ডরিও (Botia Dario)। চলনবিল এলাকায় এর নিকটতম আরেকটি প্রজাতি বেটিয়া লোহাচিটা দেখা যায়। স্থানীয়ভাবে এরা বউ-রানী মাছ নামে সুপরিচিত। পূর্ণবয়স্ক বেটিয়া ডরিও সর্বোচ্চ ১৫ সেঃমিঃ লম্বা হতে পারে। এদের আইশ অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির, মাথা কিছুটা ইঁদুরের মত এবং চোখ মাথার প্রায় মধ্যখানে অবস্থিত। দেহ অনেকটা চাপা এবং পৃষ্টদেশ ধনুকের মতো বাঁকা। সোনালী হলুদ দেহে সাধারণত সাতটি খাড়া কালচে দাগ থাকে। অবশ্য ভিন্ন পরিবেশে বসবাসের কারণে দৈহিক গঠন ও বর্ণে তারতম্য দেখা যেতে পারে। মে থেকে অক্টোবরের মধ্যবর্তী সময় রানীমাছের প্রজননের জন্য উপযুক্ত। আবদ্ধ জলাশয়ের চেয়ে উন্মুক্ত জলা এদের প্রজননের জন্য উপযোগী।
তিনি আরও জানান, রানী মাছ খেতে খুবই সুস্বাদু। বাজারে এর বেশ চাহিদা। খেপলা জাল, টানা জাল, গোগাজাল, চাই, ডরি ইত্যাদি দ্বারা এদের ধরা হয়। প্রোটিনের চাহিদা মেটানো ছাড়া অ্যাকুরিয়াম ফিশ হিসেবে এটা বাসাবাড়ির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশেই অ্যাকুরিয়াম ফিশ হিসেবে রফতানি করা সম্ভব হতে পারে। বাসস