আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেছেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেবল বর্তমান সরকারি দল নয়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যারা নির্বাচন করে, নির্বাচনটা প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই করা উচিত বলে আমি মনে করি। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের উচিত জনগণের কাছে যাওয়া, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। সুতরাং প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, এটা আমি কামনা করি।”
মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮) বিকালে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা সদরের “প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ সরকারি কলেজ” মাঠে আয়োজিত গণসংবর্ধনায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলেরই উচিত ভালো মানুষ যারা, চরিত্রবান যারা, নীতিবান যারা, সৎ এবং আদর্শবান যারা তাদের মনোনয়ন দেয়া।”
জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা যাচাই করবেন, কাকে ভোট দিলে আপনাদের এলাকার উন্নয়ন হবে। দেশের উন্নয়ন হবে, দেশের কল্যাণ হবে, কাকে ভোট দিলে দেশ এগিয়ে যাবে।” রাষ্ট্রপতি জনগণের উদ্দেশে আরো বলেন, “স্বাধীনতার পর আপনারা অনেক সরকার দেখেছেন। এর মধ্যে কে আপনাদের উন্নয়ন করেছে, তা আপনারা ভালো জানেন। যারা উন্নয়ন করেছে তাদেরকে নির্বাচিত করা উচিত। আমি চাই সামনে এমন সরকার আসুক, যে সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় আবদুল হামিদের সাবেক সংসদীয় আসনের ইটনা উপজেলায় প্রেসিডেন্টকে এই গণসংবর্ধনা দেয়ার আয়োজন করে এলাকাবাসী। সংবর্ধনায় এলাকাবাসীর উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি আপনাদের সাথে দেখা করার জন্য এসেছি। আপনারা আমাকে ভালবাসেন, আমিও আপনাদেরকে ভালবাসি।”
ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “হাওরের প্রধান ফসল ধান। এক সময়ে হাওরে ধান কাটার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক আসতো। এখন তাদের জীবনমানের উন্নতি হওয়ায় তারা আর সেভাবে আসে না। এতে হাওরে শ্রমিক সংকট দেখা যায়। তবে দেশে ধান কাটার প্রযুক্তি এসেছে। হাওরের একটা সমস্যা হলো, ধান কাটার সময় জমিতে পানি থাকে। এখন এমন প্রযুক্তিও তৈরি হয়েছে যে জমিতে কাদা থাকলেও ধান কাটা যায়। এছাড়া ড্রাই মেশিনে ধান শুকানোও যায়। এসব প্রযুক্তিগুলো আমাদের-আপনাদের কাজে লাগাতে হবে।”
হাওরে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট হবে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রতিটি হাওর থেকে বাড়িতে ফসল নিয়ে আসার জন্য কৃষকের সুবিধার জন্য সাবমার্সেবল রাস্তা করে দেয়া হচ্ছে। হাওরের এসব রাস্তায় ট্রাক্টর কোনোভাবেই যেন চলাচল করতে না পারে, এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
‘নাগরিক কমিটি’ ব্যানারে আয়োজিত এই গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা মো. ইসমাইল হোসেন। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য দিলারা বেগম আছমা, কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক, ইউপি চেয়ারম্যানে মনোয়ার হোসেন মিল্কী প্রমুখ।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মানপত্র পাঠ করেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ইসলাম উদ্দীন। এছাড়া গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএমসহ বিভিন্ন সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পাঁচ দিনের সরকারি সফরে সাবেক নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরের তিন উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন সফরে সোমবার দুপুরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে অষ্টগ্রামে অবতরণ করেন। বিকালে অষ্টগ্রাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে প্রেসিডেন্টকে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় তিনি প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ অডিটরিয়ামে উপজেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় করেন। ডাকবাংলোতে রাত্রিযাপন শেষে মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট অষ্টগ্রাম থেকে নোয়াগাও এবং অষ্টগ্রাম-কাস্তুল-ভাতশালা রাস্তার উন্নয়নমূলক কাজসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করেন। দুপুরে তিনি হেলিকপ্টারযোগে অষ্টগ্রাম থেকে ইটনা উপজেলায় যান। পাঁচদিনের এই সফরে প্রেসিডেন্ট বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮) দুপুরে হেলিকপ্টারযোগে নিজ উপজেলা মিঠামইনে যাবেন। সেখানে বিকাল ৩টায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক সরকারি কলেজ মাঠে রাষ্ট্রপতিকে তাঁর নিজ উপজেলার লোকজন গণসংবর্ধনা দেবে।