নিকলী উপজেলার একমাত্র গার্লস স্কুল শহীদ স্মরনিকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সম্প্রতি নারীশিক্ষা সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো: সাফি উদ্দিনের। পাঠকদের উদ্দেশে আলোচনার পূর্ণাঙ্গ তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাশুকুর রহমান ঝুটন, তোফায়েল আহছান ও আবদুল্লাহ আল মহসিন
নিকলীর প্রথম অনলাইন সংবাদ মাধ্যম আমাদের নিকলী.কম সম্পর্কে কিছু বলুন।
সাফিউদ্দিন সাফি : আমি মনে করি যারা লেখালেখি করবে, বিশেষ করে নিকলী সম্পর্কে যারা জানতে চায় তাদের জন্য খুবই উপযোগী উদ্যোগ। এর মাধ্যমে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির শেয়ারের ভালো একটি মাধ্যম হবে।
আমাদের নিকলী.কম অনলাইনে কুইজ প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। এর ফলে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সুফল আসবে কি?
কুইজ প্রতিযোগিতার ফলে আঞ্চলিক অজানা অনেক বিষয়ে এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে। অংশ নেয়ার আগ্রহ থেকে তারা বই-পুস্তক পড়ার হার বাড়াবে, যার ফলে অতিরিক্ত শিক্ষার একটা প্রভাব তাদের ভবিষ্যত আরো সমৃদ্ধ করবে।
শিক্ষার আধুনিকায়নে আপনার প্রতিষ্ঠানে কি কি উদ্যোগ নিয়েছেন?
নিকলীর নারী শিক্ষার ব্যাপারে এই প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আগে ছোট্ট পরিসরে ছিলো। এখন এর পরিসর কিছুটা বড় করা হয়েছে। চেষ্টা চলছে শিক্ষার সকল আধুনিক পদ্ধতি এখানে সন্নিবেশ ঘটানোর। পাশাপাশি এখানের মেয়েদের উচ্চশিক্ষা সহজতর করতে স্কুলটিকে কলেজে রূপান্তরের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞান গবেষণাগারের অভাবে এখানকার শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান চর্চায় অনেক পিছিয়ে। এ হিসেবে আপনার প্রতিষ্ঠানের অবস্থান কেমন?
এ কথা আসলে সত্যি। বিজ্ঞানের ক্লাস বা ল্যাবরেটরির কাজগুলো মূলত একটা কক্ষে সীমাবদ্ধ। আমাদের অবকাঠামোর সংকট রয়েছে। চেষ্টায় আছি, কিভাবে আরো উন্নত করা যায়। ব্যক্তিগতভাবে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা হয়েছে। শুধু এ কাজের জন্য আলাদা ল্যাবরেটরির ব্যবস্থা করা গেলে আরো ভালোভাবে শিক্ষা দেয়া সম্ভব হবে।
জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় নলেজ শেয়ারিং প্রোগ্রাম করে থাকে। আপনার প্রতিষ্ঠানে এমন কোনো উদ্যোগ আছে?
এ ব্যাপারে স্থানীয় রিসোর্স পারসন মাশুকুর রহমান ঝুটন সাহেবের সাথে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে স্কুলে কবিতা আবৃত্তি ও বিতর্ক বিষয়ে কাস শুরু করবো। এরপর আমরা বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাকে আহ্বান জানাবো পারস্পরিক প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের।
এ অঞ্চলের মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলায় অংশগ্রহণ অনেক কম। তাদের উদ্বুদ্ধকরণে আপনাদের পরিকল্পনা কি?
এ কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। এখন ক্রিকেট, ফুটবল এমনকি সাঁতারেও মেয়েরা অংশ নিচ্ছে। গত আন্ত-গার্লস স্কুল প্রতিযোগিতায় ফুটবলে কিশোরগঞ্জ জেলায় দ্বিতীয় হয়েছে নিকলী শহিদ স্মরণিকা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।
সামাজিক ব্যাধি ইভটিজিং রোধে সচেতনতামূলক কোনো কার্যক্রম আছে কি?
ইভটিজিং রোধে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে নিয়মিত আলোচনা করছি। সম্প্রতি এ ব্যাপারে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপস্থিত ছিলেন।
সরাসরি কোনো অভিযোগ আসলে তাৎক্ষণিক প্রতিকারে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়। ভুক্তভোগী ছাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। সামাজিক সচেতনতা, নৈতিক মূল্যবোধ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। ইভটিজিংয়ের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিলে ভীতি থেকেও অনেকটা কমে আসবে; কিছু শাস্তি এরই মধ্যে প্রশাসন থেকে দেয়া হয়েছে।
বাল্য বিয়ে রোধে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ সম্পর্কে বলবেন।
একজন শিক্ষককে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেয়া আছে। এ বিষয়ে তথ্য যোগাড় এবং সময় সময় আমাকে তিনি অবহিত করেন। বিয়ের আগে খবর পেয়ে প্রশাসনকে সাথে নিয়ে কিছু বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। বিয়ের আগে তথ্য না পাওয়ার ফলে যাদের বিয়ে হয়ে গেছে তাদের তালিকা তৈরি করছি। বিবাহিতদের নিয়মিত স্কুলে না আসতে বলা হচ্ছে; যাতে এর কোনো প্রভাব অন্যদের ওপর না পড়ে। তাদেরকে কেবল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বলা হচ্ছে।
তুলনামূলকভাবে মেয়েরা স্বাস্থ্যসচেতনতায় পিছিয়ে। বিশেষ করে প্রজনন সংক্রান্ত অসচেতন হওয়ায় মাতৃমৃত্যু হার বেশি। স্কুল থেকে এ সংক্রান্ত কাউন্সেলিংয়ের কোনো উদ্যোগ আছে?
সরাসরি প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোনো কাউন্সেলিং নেই। পাঠ্যবইয়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কে যেটুকু আছে, এগুলো শিক্ষকরা আলোচনা করেন। তবে কিছু সহায়ক এনজিওর প্রতিনিধিরা মাঝে মধ্যে এসে নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের এ সম্পর্কে অবহিত করেন। ভবিষ্যতে মহিলা ডাক্তারদের সহায়তা নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
ব্যস্ততার মাঝে মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আমাদের নিকলী.কম-কেও ধন্যবাদ। বিশেষ করে এই আঞ্চলিক প্রকাশনা চালিয়ে নেয়ার জন্য এর সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ।