মহাস্থান (বগুড়া) প্রতিনিধি ।।
বাংলার ঐতিহ্য নবান্ন উৎসবকে গাঢ় করতে বগুড়ার মহাস্থানে সমবায় ও বহুমুখী মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে বিরাট মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অগ্রহায়ণ মাস এলেই মনে পড়ে বাংলা উৎসবের সাথে মিশে থাকা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায় এই নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে।
অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই আমাদের গ্রামবাংলায় চলে নানা উৎসব-আয়োজন। নতুন ধানকাটা আর সেই সাথে প্রথম ধানের অন্ন গ্রহণকে কেন্দ্র করে পালিত হয় এই উৎসব। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ- এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরো সমৃদ্ধি করার উৎসব। হেমন্ত এলেই দিগন্তজোড়া প্রকৃতি ছেয়ে যায় হলুদ-সবুজ রঙে। স্মরণাতীতকাল বাংলার কৃষিজীবী সমাজে নবান্ন উৎসব বাঙ্গালীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে রোববার ৪ অগ্রহায়ণ, জাতীয় নবান্ন উৎসব ১৪২৫ উপলক্ষ্যে বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানহাটে বিরাট বড় মৎস্য মেলার আয়োজন করেছেন মহাস্থানহাট মাছ ব্যবসায়ী সমিতি। বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থানের এই মৎস্য মেলাটি এখন সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। মূল মেলার আগে থেকেই ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন মৎস্য আড়ৎ ব্যবসায়ীরা।
মাছের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি হায়দার আলীর বলেন, উপজেলার মহাসড়কের পাশে মাছহাটে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলা উপলক্ষ্যে আশেপাশের ১০ গ্রাম উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। এখানে আসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পুকুরে চাষ করা নানা প্রজাতির মাছ।
মাছের মেলায় আসা ক্রেতা লাহিপাড়া ইউনিয়নের আব্দুল জব্বর বলেন, ‘মেলায় বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ উঠেছে’। এবার মাছের দাম কম থাকায় আমি সাড়ে ৬ হাজার টাকায় দু’টি কাতল মাছ কিনেছি। মাছ ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত বছরের চেয়ে এবার অনেক বড় বড় মাছ আমদানি করেছি। দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় মাছ বিক্রির খুব ধুম পড়েছে। আগামী বছরে আরও বড় বড় মাছ আমদানি করে প্রসারণ করব।
রোববার সকাল ১০টায় মহাস্থান মাছহাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব ঘোষিত থেকে পুরোহাট সাজসজ্জায় সাজানো হয়েছে। ভোরবেলা থেকে আসতে শুরু করে বিরল প্রজাতির বিচিত্র সৌখিন মাছ। ক্রেতাদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মত। বাজারে শুধু যে ক্রেতাদেরই ভিড় তা কিন্তু নয়, অনেকে বড় মাছ দেখার উৎসুকে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন।
মহাস্থান মাছহাটের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে আয়োজক কমিটির সভাপতি ব্যবসায়ী মোঃ হায়দার আলী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিমের সাথে কথা বললে তারা জানান, প্রতিবারের তুলনায় এবার মাছের আমদানি হয়েছে ব্যাপক। এজন্য আমরা মাছ বাজার সফল করতে প্রায় ১ সপ্তাহ আগে থেকে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছি। কিন্তু মাছহাটের জায়গা সংকীর্ণতার কারণে স্বল্প পরিসরে একটু দুর্ভোগে মাছ বিক্রি করতে হয়েছে।
মহাস্থান মাছ বাজার আড়ৎদার সমবায় ও বহুমুখী সমিতির সভাপতি মোঃ হায়দার আলী ও সহ-সভাপতি আব্দুল আলীম, সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম আলী- কোষাধ্যক্ষ লক্ষ্মণ দাসসহ মাছবাজার সমিতির সকল সদস্য মহাস্থান হাট ইজারাদার সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে জানান, সামনের দিনে যদি মহাস্থান মাছ বাজারের আয়তন বাড়ানো যায় তাহলে মেলা আরও জমজমাট হবে। সেই সাথে বাড়বে হাটের রাজস্ব।