নিকলীর হাওরে কেন এবং কিভাবে ঘুরতে যাবেন


শাকীর এহসানুল্লাহ ।।

হাওরে কেন যাবেন
শহুরে জ্যাম, ব্যস্ততা, অফিস, সংসার এমন সব কিছুর ভিড়ে আপনার মাথা যখন প্রায় হ্যাং, তখন এমন একটা জায়গা আপনাকে দিবে পেছনের সবকিছু ভুলে নতুন করে ফ্রেশ হওয়ার সুযোগ। বিশাল জলের উপর ভাসতে ভাসতে নীল রঙা আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের মন দেহ সবই হালকা করে নিতে পারবেন। যেহেতু প্রসিদ্ধ পর্যটন জায়গাগুলোতে সবসময়ই পর্যটকদের ভিড় থাকে, তাই এমন অপ্রসিদ্ধ কিছু স্থানে আপনি নিজের মতো করে ঘুরে আসতে পারেন অনায়াসে। সাধারণ পর্যটন প্লেসের মতো কোনো ঝামেলা নেই।

পানিতে ভাসতে ভাসতে হাওরের ভিতরের দিকে গেলে এক পর্যায়ে যখন কোনো গ্রাম দেখা যাবে না, তখন হাওরকে আপনার শান্ত একটা সাগরের মতোও মনে হতে পারে। আবার ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়বে পানির উপর ভাসমান অসম্ভব সুন্দর ছোট ছোট সবুজ গ্রাম। নৌকা থামিয়ে গ্রামটি একটু ঘুরে আসতে পারেন। অবাক হবেন মানুষগুলোর কাছে গিয়ে কথা বললে। আপনার কাছে মনে হবে পানির সাথে বসবাস করতে করতে মানুষগুলোর স্বভাব চরিত্রও পানির মতো হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রামের বাজার থেকে হালকা নাস্তা কিনে নিতে পারেন। খোলা আকাশের নিচে এলোমেলো বাতাসে নৌকার ছাদে খেতে বসলে আপনি পেতে পারেন অদ্ভুত এক খাওয়ার আনন্দ। বাজে রকম কোনো খাবারও তখন আপনার কাছে সুস্বাদু মনে হতে পারে।

দেখে আসুন আরেক রাতারগুল
হাওরে ঘুরতে ঘুরতে চলে যাবেন ছাতিরচরে। পানির নিচে ডুবন্ত এক সবুজ বন। লেয়ারে লেয়ারে সাজানো সুবজ গাছ। গাছের বুক বরাবর পানিতে ভাসতে থাকবেন আপনি। হুট করে দেখে আপনার কাছে মনে হতে পারে এটা আরেক রাতারগুল। নিকলী বেড়িবাঁধ থেকে নৌকায় সরাসরি ছাতিরচর যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। নৌকায় ৩ ঘণ্টা ঘুরলে আপনার মোটামুটি অনেকটা জায়গা ঘুরে আসতে পারবেন।

নৌকা ভাড়া
সাধারণত এক ঘণ্টার জন্য ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা নেয়। আবার কয়েক ঘণ্টার জন্য নিতে পারেন প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ টাকার মতো করে। এবং অবশ্যই ভাড়া নিয়ে দামাদামি করে নিবেন। এতে আরও কমতে পারে। নৌকাগুলো বেশ বড়সড়ও হয়। ১৫/২০ জন পর্যন্ত অনায়াসে নাচানাচি করে ঘুরে আসতে পারবেন নৌকায়। নৌকার সাইজ অনুযায়ী ভাড়া খুব একটা কম-বেশি হয় না। অতএব বড় নৌকাটা নেয়াই ভালো।

নিকলীতে খাবারের ব্যবস্থা
মূলত নিকলীতে ভালো মানের খুব বেশি খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে বাজারে বেশ কয়েকটা রেস্তোরাঁ আছে, মোটামুটি মানের তাজা মাছের রান্না দিয়ে খেতে ভালোই লাগবে। এছাড়াও বেড়িবাঁধে ঢোকার সময়ই একটা রেস্তোরাঁ পড়ে; আর সেই রেস্তোরাঁয় নদীর তাজা মাছের আঞ্চলিক স্বাদের খাবার খেয়ে নিতে পারেন।

রাত কাটাতে পারেন নৌকায়
ভরপুর কোনো পূর্ণিমা রাতের গাঢ় নীলচে আকাশের নিচে নৌকার ছাদে কাটিয়ে দিতে পারেন আস্ত একটি রাত। ওখানে রাতে থাকাটা মোটামুটি নিরাপদ। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে। তবে পুরোপুরি নিরাপত্তার জন্য নিকলী থানায় ইনফর্ম করে নিতে হবে। তাহলে চিন্তামুক্ত ও আরামদায়ক একটি রাত কাটাতে পারবেন আপনি। এবং রাতে অবশ্যই বেরিবাঁধের কাছাকাছি কোনো স্থানে অবস্থান করতে হবে।

যদিও নিকলীতে ডাঙায় থাকার কোনো সুব্যবস্থা নাই, তবে ইমার্জেন্সি থাকার প্রয়োজন হলে নিকলী থানা পুলিশের আওতায় একটি ডাকবাংলো আছে। পুলিশের সাথে কথা বলে সেখানে ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। তবে সেই বাংলোটাও অতটা ভালো মানের নয়। এটাও যদি না হয়, তাহলে তো হাতের কাছে কিশোরগঞ্জ শহর আছেই।

কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে যদি ভোরে রওনা করে রাতের মধ্যে চলে আসতে চান, তাহলে সবচে সুন্দর পন্থা হচ্ছে পুলেরঘাট দিয়ে যাওয়া। নিকলী হাওর সবচে বেশি কাছে হয় কিশোরগঞ্জের পুলেরঘাট থেকে। যেতে পারবেন ঢাকা সায়েদাবাদের পাশে গোলাপবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে ‘অনন্যা সুপার’ ও ‘যাতায়াত’ বাসে সোজা পুলেরঘাট। ভাড়া ২২০ টাকা। সময় লাগবে ৩ ঘণ্টা। পুলেরঘাট থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে ১ ঘণ্টায় নিকলী বেড়িবাঁধ। সিএনজিতে জনপ্রতি ভাড়া ৮০ টাকা।

গোলাপবাগ থেকে একদম ভোর থেকেই বাস পাবেন। তবে ভালো থাকা-খাওয়ার চিন্তা করলে আপনাকে কিশোরগঞ্জ শহরেই যেতে হবে। নিকলী থেকে কিশোরগঞ্জ শহরে যেতে সিএনজিতে ঘণ্টাখানেক লাগে। আর যদি মনে করেন, কিশোরগঞ্জ শহর ও শহরের আশপাশে আরও কিছু ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন যেমন ইশাখাঁর বাড়ি, চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির, ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ, ইত্যাদি ঘুরে আসবেন। তবে আপনি ঢাকা থেকে সরাসরি কিশোরগঞ্জ শহরে চলে যেতে পারেন। কিশোরগঞ্জ শহর থেকেই আবার যেতে পারবেন নিকলী হাওরে। রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশ থেকে সিএনজি অটোরিকশা যায় নিকলীর দিকে। মাথাপিছু ৮০ টাকা ভাড়ায় মাত্র ১ ঘণ্টায় আপনি নিকলী হাওর বেড়িবাঁধে পৌঁছতে পারবেন।

অথবা শহর থেকে চলে যেতে পারেন শহরের খুব কাছেই চামড়াবন্দরে। সেখান থেকেও নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে পারেন হাওরের আরেক পাশ। শহরের একরামপুর রেলক্রসিং থেকে চামড়া বন্দরে যাওয়ার সিএনজি অটোরিকশা বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাওয়া যায়। সিএনজিতে সময় লাগবে আধা ঘণ্টারও কম। ভাড়া মাথাপিছু ৪০-৫০ টাকা।

কিশোরগঞ্জ হয়ে যেতে চাইলে
গোলাপবাগ বাসস্ট্যান্ড বা মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে ভোর থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের বাস পাওয়া যায়। মহাখালি থেকে ছেড়ে যাওয়া কিশোরগঞ্জের বাসগুলো একটু ছোট টাইপের। অথবা ট্রেনে যেতে পারেন। কিশোরগঞ্জে যাওয়ার সবচে’ আরামদায়ক জার্নি হচ্ছে ট্রেন। সারা দিনে ৩টি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা-কিশোরগঞ্জ আসা-যাওয়া করে।
ট্রেনের সময় সূচি :
ঢাকা-কিশোরগঞ্জ
সকাল ৮টায়- এগারসিন্দুর প্রভাতী
সকাল ১০টায়- কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস
সন্ধ্যা ৬টায়- এগারসিন্দুর গোধূলী

কিশোরগঞ্জ-ঢাকা
সকাল সাড়ে ৬টায়- এগারসিন্দুর প্রভাতী
দুপুর সাড়ে ১২টায়- এগারসিন্দুর গোধূলী
বিকেল সাড়ে ৩টায়- কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস
ট্রেনের ভাড়া :
শোভন- ১২০ টাকা
শোভন চেয়ার- ১৫০ টাকা
প্রথম শ্রেণী চেয়ার- ১৮৫ টাকা
ট্রেনে যেতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা

সপ্তাহের শেষে এবং শুরুতে ট্রেনে বেশ ভিড় হয়। তবে একটি শোভন চেয়ার পেয়ে গেলে ভিড় খুব একটা গায়ে লাগবে না।

দিনে গিয়ে রাতের মধ্যে আসতে চাইলে ট্রেনে সম্ভব নয়। তাহলে আপনাকে ভোরের বাসেই যেতে হবে।
(ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে একদিন আগে স্টেশন কাউন্টারে গেলেই ট্রেনের সিটসহ টিকিট পাবেন। কিন্তু কিশোরগঞ্জ থেকে টিকিট পেতে কঠিন হবে। না পেলে বাসে চলে আসবেন।)

হাতে সময় থাকলে আরো যা যা ঘুরে দেখতে পারেন
ঐতিহাসিক জঙ্গলবাড়ী
ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী। হাজরাদী পরগনার জঙ্গলবাড়ীতে ঈশা খাঁ তার দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেন। অনুপম স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, দরবারগৃহ ও পরিখাবেষ্টিত দূর্গের ধ্বংসাবশেষ উজ্জ্বল অতীতের স্মৃতি বহন করে। কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্ব দিকে করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নে জঙ্গলবাড়ীর অবস্থান। জেলা সদরের একরামপুর মোড় থেকে অটোরিকশা বা পা-চালিত রিকশায় যাওয়া সহজ।

ঐতিহাসিক এগারসিন্দুর দুর্গ
এটি মোগল সেনাপতি মানসিংহের সাথে ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত ঈশা খাঁর ঐতিহাসিক যুদ্ধের স্মৃতিবাহী যুদ্ধক্ষেত্র। বর্তমানে এই দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও নিরগীন শাহ্, শাহ্ গরীবুল্লাহর সমাধি, শাহ মাহমুদের মসজিদ ভিটা ও বালাখানা অবস্থিত যা আজও কালের সাক্ষ্য বহন করে। ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁকে অবস্থিত এ এলাকাটি ষোড়শ শতাব্দীতে প্রসিদ্ধ নৌবন্দর হিসেবে খ্যাত ছিল। পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নে এর অবস্থান। জেলা সদর থেকে দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। যাওয়ার মাধ্যম বাস ও অটোরিকশা।

সুকুমার রায়ের বাড়ি
বিখ্যাত ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়ের পৈতৃক বাড়ি। এটি কটিয়াদি উপজেলার মসুয়া গ্রামে অবস্থিত। জেলা শহরের বত্রিশ সিএনজি স্টেশনের পথ পাড়ি দিয়ে বাকি পথ রিকশায় যাওয়া যায়।

কবি চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির
বঙ্গের আদি মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতিবিজড়িত মন্দির। ষোড়শ শতকের মনসা মঙ্গল কাব্যের বিখ্যাত কবি দ্বিজ বংশীদাসের কন্যা ও বঙ্গের আদি মহিলা কবিরূপে খ্যাত চন্দ্রাবতীর বহু কাহিনী সমৃদ্ধ এ মন্দিরটি খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে কবি চন্দ্রাবতীর সুবিখ্যাত শিবমন্দিরটির অবস্থান। কিশোরগঞ্জ শহর থেকে দূরত্ব ৬ কিলোমিটার।

ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ
আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে খ্যাত। জনশ্রুতি আছে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে থিতু হন এবং তাকে ঘিরে অনেক ভক্ত সমবেত হন। পাগলের মৃত্যুর পর তার সমাধির পাশে মসজিদটি গড়ে ওঠে বলে কালক্রমে এটি পাগলা মসজিদ নামে পরিচিত হয়। মসজিদটি প্রায় সব ধর্মাবলম্বীর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত। মসজিদটি শহরের হারুয়া এলাকায় অবস্থিত। শহরের যে কোনো স্থান থেকে রিকশায় সহজেই যাওয়া যায়।

শোলাকিয়া ঈদগাহ
এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ শোলাকিয়া ঈদগাহ সর্বজনবিদিত। এ ঈদগাহে ঈদের জামাতে প্রায় তিন লাখ মুসল্লি পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। কথিত আছে, বহু বছর আগে এই ঈদগাহের একটি জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটেছিল। এ সোয়া লাখ শব্দটিই পরবর্তীতে ‘শোলাকিয়া ঈদগাহ’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। শহরের যে কোনো স্থান থেকে রিকশায় খুব সহজেই শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে যাওয়া যায়।

দৃষ্টিনন্দন লেকসিটি
শত সহস্র বছরের নানা ঐতিহ্যের প্রাণকেন্দ্র কিশোরগঞ্জে সম্প্রতি গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন লেকসিটি। কিশোরগঞ্জ শহরের বুক চিরে এক সময়কার খরস্রোতা নরসুন্দা নদী-ই এখনকার রূপান্তরিত লেকসিটি। শহরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের পূর্বপাশে বিস্তৃত এলাকায় অবস্থিত এ লেকসিটির অংশ হিসেবে রয়েছে মুক্তমঞ্চ, একাধিক নান্দনিক সেতু, মিনি পার্ক ও ওয়াচ টাওয়ার। পড়ন্ত বিকেলের হলুদ আলো আর ফুরফুরে হাওয়ায় লেকসিটিতে ঘুরে-ফিরে সময় কাটালে নিঃসন্দেহে মন্দ লাগবে না।

এ ছাড়াও কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের আশপাশে ঘুরে দেখতে পারেন বৌলাই জমিদার বাড়ি, মিঠামইন উপজেলায় অবস্থিত সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে প্রতিষ্ঠিত মোগল স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন দিল্লির আখড়া।

ও হ্যাঁ, কিশোরগঞ্জ শহর থেকে চলে আসার আগে মদন গোপাল অথবা রাজমনী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সুস্বাদু রসমালাই খেতে ভুলবেন না কিন্তু। হাওরের হাওয়া আর এই রসমালাইয়ের স্বাদ অনেকদিন মনে থাকবে আপনার।

– আপনার ভ্রমণ শুভ হোক।

লেখক : সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করেছেন
Sayed Hadiuzzaman Nabil
Ahmed Tanvir

Similar Posts

error: Content is protected !!