মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।
এশিয়ার বিখ্যাত প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। শনিবার (২৫ মে ২০১৯) রাত সাড়ে নয়টার পরে হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহের অপেক্ষায় থাকারা ডিমের দেখা পান। ডিম ছাড়ার খবর পেয়ে খলিফার ঘোনা, রামদাশহাট, মুন্সির হাট থেকে মদুনাঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে ডিম সংগ্রহ করা শুরু করেন এতোদিন ধরে অধীর অপেক্ষায় থাকা ডিম সংগ্রহকারীরা। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় তারা প্রায় ৮ হাজার কেজিরও বেশি ডিম সংগ্রহ করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে হালদা নদীতে শনিবার সকাল থেকে নমুনা ডিম দেখা গিয়েছিলো। তখন মৎস্য অফিস সূত্র জানিয়েছিলেন, হালদায় জোয়ার বা পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হলেই রুই, কাতল, মৃগেল, কালা বাউশ মাছের ডিম ছাড়তে পারে। এর আগেও অমবশ্যায় হালদা নদীর জোয়ারে ও ঘূর্ণিঝড় ফনির প্রভাবে মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মা মাছের নমুনা ডিম পাওয়া গিয়েছিলো। নদীতে মা মাছের ডিমের নমুনা দেয়ার খবর ডিম সংগ্রহকারীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে হালদা নদীর তীরবর্তী ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম ধরার নৌকাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে হালদা নদীতে নেমে পড়েছিলেন।
রাতে বজ্রসহ বৃষ্টি অথবা জোয়ার আসলেই পুরোদমে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে তখন আশাও প্রকাশ করেছিলেন ডিম সংগ্রহকারীরা। হাটহাজারী উপজেলার মাছোয়াঘোনাসহ বিভিন্ন এলাকার ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, এতোদিন পুরোদমে ডিম না দেয়ার কারণে হালদা নদীতে জাল ফেলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম পাওয়া যায়নি আর হালদা নদীতে মা মাছগুলো বৃষ্টি, মেঘের গর্জন হলে এবং মা মাছের ডিম দেয়ার উপযুক্ত সময় না হওয়ার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম ছাড়েনি এতোদিন। আজ রাতে উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়ায় মা মাছ পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম ছেড়েছে।
এদিকে, গতবার হালদা নদীর নতুনহাট, আজিমের ঘাট, আমতোয়া, সিপাহীর ঘাট সহ বেশ কয়েকটি স্পটে প্রতিটি নৌকায় ২শ’ থেকে ৩শ’ গ্রাম পর্যন্ত মা মাছের নমুনা ডিম পাওয়া গিয়েছিলো। তবে শনিবার সকালে অংকুরি ঘোনা, টেক উত্তর মাদর্শাসহ কয়েকটি স্থানে নমুনা ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। সকালের দিকে ডিম সংগ্রহকারী শফিসহ অনেকেই জোয়ার এলে ডিম ছাড়বে বলে ধারণা করেছিলেন। অবশেষে তাদের সেই ধারণাই সঠিক হলো।
মা মাছ সাধারণত অমাবশ্যা, অষ্টমী ও পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে ডিম ছাড়ে। গত পূর্ণিমায় তেমন বর্ষণ হয়নি। এবার অষ্টমী তিথিতে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ হয়েছে। তাই ডিম আহরণকারীরা নদীতে ঢলের সৃষ্টি হলে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে এমন আশায় ডিম আহরণের জন্য হালদা নদীতে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন। তারা ধারণা করেছিলেন গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় জোয়ার শুরু হয়েছিলো আর ভাটার সময় নদীতে ঢলের সৃষ্টি হলেই শনিবার রাতে মা মাছ ডিম ছাড়বে। অবশেষে ডিম সংগ্রহকারীদের সে ধারণাই সঠিক হলো।
শনিবার সকালে নমুনা ডিম ছাড়ার পর উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. আজহারুল ইসলামও বলেছিলেন, প্রথমবার ডিম ছাড়ার সময় পার হয়ে গেছে তাই ডিমে ম্যাচুউরিটি এসে গেছে। এবার জোয়ার আসলেই মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে তিনিও আশংকা প্রকাশ করেছিলেন। মা মাছের ডিম ছাড়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি জানান, হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছেড়েছে এবং রাত সাড়ে ৯টার পর থেকে হালদার নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম সংগ্রহ করছেন। বর্তমানে প্রায় ৪শ’র বেশি ডিম সংগ্রহকারী হালদা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ডিম সংগ্রহে নিয়োজিত আছেন। তারা ইতিমধ্যে প্রত্যেকে ১৫-১৬ কেজি করে ডিম সংগ্রহ করেছেন বলেও সূত্রে জানা গেছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ৮ হাজার কেজির মতো ডিম সংগ্রহ হয়েছে বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে হালদা নদীর পাড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমিন সাংবাদিকদের জানান, মাছুয়া ঘোনা, শাহ মাদারি এবং মদুনা ঘাটসহ ৩টি হ্যাচারির কুয়া হালদার নদী থেকে সংগৃহীত ডিম সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসন আরও কুয়া তৈরি করবে। হালদায় জেলেদের ডিম সংগ্রহে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে চান বলেও জানান তিনি।