দিলু হত্যা মামলার ১০ মাসেও অগ্রগতি নেই, রহস্যাবৃত পুলিশের ভূমিকা

০৩ ফেব্রুয়ারী থেকে নভেম্বর ২০১৪। দেখতে দেখতে ১০টি মাস পেরিয়ে গেলেও নিকলীতে দিন ইসলাম ওরফে দিলু হত্যার কোন কিনারা করে উঠতে পারলো না থানা পুলিশ। তবুও আশা ছাড়েনি পরিবারের সদস্যরা। সহজ সরল আর শত্রুহীন দিলু হত্যার একদিন প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হবে এই আশা পরিবারসহ শুভাকাঙ্খি সকলের। অন্য দিকে উপজেলার বহুল আলোচিত এই মামলাটির তথ্য প্রদানকারী হাবিব নামে এক ব্যক্তির বাড়িঘর তথ্যে উল্লেখিত ব্যক্তিদের দ্বারা ভাংচুরসহ হাবিবের পরিবারটিকে বাড়িছাড়া করলেও পুলিশের মামলা গ্রহণ না করায় এবং তথ্যের ভিত্তিতে আটককৃত ব্যক্তিদের ছেড়ে দেয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল।

দিলু হত্যা মামলা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী সকালে উপজেলার দামপাড়া-কারপাশা ইউনিয়ন সংযোগ সেতুর নীচে লোকবহুল দামপাড়া বাজার ঘাটে একটি পরিত্যক্ত নৌকাতে মজলিশপুর গ্রামের আ. আশিদের ছোট ছেলে দিন ইসলাম ওরফে দিলুর (২৪) লাশ পাওয়া যায়। সহজ সরল প্রকৃতির দিলুর কোন শত্রু বা তাকে হত্যা করা হতে পারে এমন কোন ঘটনার সাথে দিলু বা দিলুর পরিবার জড়িত না থাকায় অজ্ঞাত খুনীর কথা উল্লেখ করে দিলুর বড় ভাই রুইয়াম বাদী হয়ে একই দিন সন্ধ্যায় নিকলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। একই দিন তথ্য উদঘাটনে দিলুর ৩ বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিলেও পর দিন মানিক (৩৫) নামে দিলুর অন্য এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন তথ্য পাওয়ায় মানিককে জেল হাজতে পাঠানো হয়। ৫ ফেব্রুয়ারী দামপাড়ার পূর্বহাটি গ্রামের জমির মিয়ার ছেলে হাবিবুর রহমান (৪২) মামলার বাদী রুইয়ামকে লাশ পাওয়ার আগের দিন রাতে দিলুকে ডেকে নেয়া ব্যক্তিদের বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানায়। মামলার বাদী রুইয়াম তথ্য প্রদানকারী হাবিবুর রহমানকে নিয়ে নিকলী থানা পুলিশকে তা অবহিত করে। হাবিবুর রহমানের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ দামপাড়া গ্রামের আবু তাহেরের পুত্র হাবীব (৩০), মৃত নিবুর পুত্র তাজু (৩০), আলতু মিয়ার পুত্র রফিক(২৫) ও মৃত আওয়ালের পুত্র সাইকুল (২৮)কে থানায় নিয়ে আসে। সেই সময়ে ১৯ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত নিকলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা চলছিলো। কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশে ধৃতদের ঐদিন রাতেই ছেড়ে দেয়া হয়। ছাড়া পাবার পর থেকেই তথ্য প্রদানকারী হাবিবুর রহমান ও তার পরিবারকে ছাড়া পাওয়া ব্যক্তিদের প্রধান খাজা (৩০) গং নানা রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিলো। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের একদিন পর ২১ ফেব্রুয়ারী খাজা গং আত্মীয় স^জন ও অনুসারীদের নিয়ে ৩০-৩৫ জনের একটি দল লাটিসোটা, রাম দা, বল্লম, রড ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হাবিবুর রহমানের বাড়ি ভাংচুর করে। খবর পেয়ে নিকলী থানার এসআই আবুল কাশেম সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশের সামনেই হাবিবের বৃদ্ধ বাবা-মা, ভাই-বোনদের মারধোর সহ প্রতিবন্ধী বোন সোহেলা (৩৩)র শ্লীলতাহানি করে। হাবিবুর রহমানের ছোট ভাই শফিকুল (৩২) পুলিশের নিকট আশ্রয় নিলে পুলিশের হাতে থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হলেও পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করে। উপরন্তু পুলিশ শফিকুলকে ধরে থানায় নিয়ে আসে। হাবিবুর রহমান থানায় মামলা করতে এলে অজ্ঞাত কারণে নিকলী থানা মামলা নেয়নি। হাবিবুর রহমানের বাড়িতে হামলাকালীদের আঘাতে আহত আবু তাহেরের পুত্র হাবীবের দায়ের করা ১০/২৩ নং মামলার আসামী দেখিয়ে শফিকুলকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। বাধ্য হয়ে হাবিবুর রহমান তার বাড়িঘরে হামলাকারী খাজা গংয়ের ২৬ জনকে আসামী করে কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। এদিকে প্রতিপক্ষের মামলার তদন্ত রিপোর্ট কোর্টে পাঠানো হলেও অদ্যাবধি হাবিবুর রহমানের মামলার তদন্ত রিপোর্ট থানা থেকে পাঠানো হয়নি। প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের হুমকি ধামকির মুখে পরিবারটি এখনও বাড়ি ছাড়া রয়েছে বলে জানা যায়। দিলু হত্যার একমাত্র তথ্য প্রদানকারী হাবিবুর রহমানের পরিবারটি থানা পুলিশ এবং প্রতিপক্ষের নানা রকম হয়রানির শিকার হওয়ায় হত্যার সাথে সম্পৃক্ত খুনিরা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ধৃতদের ছেড়ে দেয়ার বিষয়টিও পুলিশের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

ফলে দিলু হত্যা বিষয়ক পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। মামলার বাদী রুইয়াম জানান, প্রতিদিনই পুলিশের সাথে যোগাযোগ রাখছি কিন্তু পুলিশ খুনীদের বিষয়ক ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে আমাদের আশ্বস্ত করলেও প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে কোন খুনীই ধরা পড়ছে না। খুনীরা পুলিশের চাইতেও চতুর বলে বিশ্বাস করতে পারি না। এদিকে দিলু হত্যার তথ্য দেয়ায় যারা হাবিবুর রহমানের পরিবারটিকে নির্যাতন করে গ্রামছাড়া করেছে তাদের ব্যাপারে পুলিশের ধরা-ছাড়ার বিষয়টিও রহস্যজনক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিকলী থানার এসআই আবুল কাশেম জানান, হাবিবুর রহমানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৪জনকে আটকের পরে ধৃতদের সাথে পূর্বশত্রুতার কারনেই হাবিবুর তাদের নাম বলেছে বলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হাবিবুর রহমানের বাড়ি আক্রমণ মামলার বিষয়ক তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, নানান জঠিলতায় একটু দেরী হলেও তদন্ত রিপোর্ট আদালতে পাঠানো হয়েছে । সরলসোজা ছোট ছেলে দিলু খুনের ঘটনায় বাবা আ. আশিদ এখন পর্যন্ত শয্যাশায়ী বলে নিহত দিলুর পরিবার সূত্রে জানা যায়।

খাইরুল মোমেন স্বপন

বিশেষ প্রতিনিধি, আমাদের নিকলী

Similar Posts

error: Content is protected !!