আবদুল্লাহ আল মহসিন ।।
দেশের জন্য জীবন দানকারী নিকলীর শহিদ মুক্তিযোদ্ধা আঃ হেকিমের কোনো স্মৃতি সংরক্ষণ নেই। ১৯৭১ সালের ২৪ আগস্ট সুনামগন্জ জেলার জামালগন্জ থানার কাছে একটি বাংকারের ভিতরে সম্মুখযুদ্ধে মর্টারের আঘাতে হেলিমসহ আরো ২জন সাথী শহিদ হন। এখন সেই জায়গায় তার কোনো স্মৃতিচিহ্নই নেই।
কোথায় দাফন হয়েছে। কবরটি কোথায় আছে কেউ তা জানে না। এই শহিদের কোনো ছবিও কারো কাছে নেই। সেদিনের রণাঙ্গনের সাথী প্রয়াত বীরবিক্রম মতিয়র রহমান স্মৃতি-৭১ শিরোনামে প্রকাশিত আত্মকথায় বর্ণনা করেছেন, পাক বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণ ও বেপরোয়া গোলাগুলির কারণে থানা ভবনের সামনে আঃ হেকিম একটি বাংকারের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ওই বাংকারে আগে থেকেই রইছ উদ্দিন ও আঃ মালেক অবস্থান নিয়ে জবাব দিয়ে আসছিল।
শত্রুপক্ষের অবিরাম গুলি বর্ষণের ফলে তারা বাংকার থেকে বের হয়ে নিরাপদ স্থানে নিতে সক্ষম হয়নি। হঠাৎ করে শত্রুপক্ষের একটি মর্টারের গোলা বাংকারে আঘাত হানে। বাংকারটি গোলার আঘাতে ধ্বংস হয় এবং অকুতোভয় বীর শহীদ মৃত্যুবরণ করেন। জানা যায়, অন্য যোদ্ধারা দূর থেকে এ দৃশ্য দেখলেও প্রচণ্ড গোলাগুলির কারণে কাছে এসে শহীদদের লাশ নিয়ে যেতে পারেননি।
শহিদ আঃ হেকিমের বাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ষাইটধার গ্রামে। বাবা হাজী শমসের আলী ও মা রেনু বেগম। তার ৪ ভাই ও ২ বোন এখনো জীবিত। নিকলী জি সি পাইলট স্কুলে পড়ার সময় মুক্তিযুদ্ধে যান তিনি। এই বীর জাতীয় পর্যায়ে সাঁতারে পুরস্কৃত হন।
তার ছোট ভাই আঃ হেলিম আমাদের নিকলী ডটকম-এর প্রতিনিধিকে জানান, ভাইয়ের কোনো স্মৃতি আজ সংরক্ষিত নেই। মৃত্যুর ১ মাস পর বাড়িতে চিঠি আসলে বাজান-মায়ে (বাবা-মা) জানতে পারে। বাজান একবার জামালগন্জ শহিদ হওয়ার জায়গাটি দেখে আসেন। কিন্তু কোথায় জানাজা হয়েছে, কোথায় দাফন হয়েছে, কবরটি কোথায়, কেউ জানাতে পারেনি। তিনি আরো উল্লেখ করেন, সরকার যেন তার শহিদ হওয়ার জায়গাটি যথাযথ সংরক্ষণ করেন।
উল্লেখ্য, ষাইটধার গ্রামে শহিদ আঃ হেলিমের নামে একটি স্মৃতি সংসদ হয়েছিল। একটি ঘরও ছিল। কিন্তু এটিরও কোনো কার্যক্রম এখন আর নেই। ঘরটিও ভেঙে হেলে মাটিতে পড়ে গেছে।