গাছের নাম লজ্জাবতী

ছোটবেলায় এই গাছ দেখলেই লজ্জা দিতেন কে কে?

লজ্জাবতী কোনো মেয়েকে দেখলে আমরা অনেকেই সোহাগভরা কণ্ঠে বলে থাকি- লজ্জাবতী লতা। কিন্তু মানুষের মতো গাছও যে লজ্জা পেতে পারে, এ কথা হঠাৎ শুনলে বিস্মিত হলেও আমরা অনেকেই এ গাছটির সঙ্গে পরিচিত। সামান্য স্পর্শ পেলে নববধূর মতো নেতিয়ে পড়ে এ গাছটি। ছোট গুল্মজাতীয় গাছটির নাম লজ্জাবতী। এর পাতা স্পর্শ করলেই আশ্চর্যজনকভাবে তা বন্ধ হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ পর আবার আগের অবস্থায় ফিরে সতেজ হয়ে ওঠে। অত্যন্ত দ্রুত অনুভূতিসম্পন্ন এ গাছ।

lojjaboti2

লজ্জাবতীর বোটানিক্যাল বা বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ‘মিমোসা পুডিকা’। আদি নিবাস মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে। তবে বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সবখানেই এ গাছ ছড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে গাছটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। এটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। কাণ্ড খাড়া, শাখান্বিত এবং ছোট ছোট কাঁটা আছে। সাধারণত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে এ গাছে ছোট ও গোলাকার ফুল ফোটে। ফুলের রঙ হয় গোলাপি ও সাদা। গাছের পাতাগুলো দেখতে ছোট এবং রঙ গাঢ় সবুজ। গাছটি দেড় থেকে দু’ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়।

বহু প্রাচীনকাল থেকেই লজ্জাবতী গাছ অনেক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। কাঁচা গাছ বেটে শরীরে লাগালে লাবণ্য ফিরে আসে। গাছ শুকিয়ে গুঁড়া করে ১০ গ্রাম গুঁড়া দু’কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে ১৫ দিন সেবন করলে চর্মরোগ সেরে যায়। গাছের শিকড় বেটে দুধ ও পানির সঙ্গে মিশিয়ে সেবন করলে অর্শ্বরোগে ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া কুষ্ঠ, বসন্ত, একশিরা, ভগন্দর ও পাণ্ডু রোগ নিরাময়েও লজ্জাবতীর রয়েছে বিরাট অবদান।

বেশিরভাগ মানুষের কাছে এ গাছ কাঁটাওয়ালা আগাছা হিসেবে পরিচিত হলেও থাই লজ্জাবতী গাছকে কাজে লাগিয়ে এখন জৈব সারও তৈরি করা হচ্ছে। এ সার ফসলের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। এতে রয়েছে নাইট্রোজেন ২.০৩ থেকে ২.০৬, ফসফরাস ০.১৭৫ থেকে ০.২৩, পটাশিয়াম ১.২৩৭ থেকে ১.৭৪১ ভাগ। লজ্জাবতী গাছের শিকড়ে জন্মানো লালচে রঙের গুটি বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সঞ্চয় করে আম বাগানের মাটিতে সরবরাহ করা হয়। এটি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। থাইল্যান্ডে ভুট্টার জমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণে এভাবেই লজ্জাবতী গাছ লাগানো হয় এবং মাটির উর্বরতা ঠিক রাখা হয়।

আমাদের গ্রামগঞ্জে বাড়ির আনাচে-কানাচে একসময় প্রচুর দেখা যেত এ গাছ। বর্তমানে বাসস্থানের প্রয়োজনে ও বন ধ্বংসের কারণে অসংখ্য প্রজাতির গাছপালার সঙ্গে এ লজ্জাবতী গাছটিও হারিয়ে যেতে বসেছে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!